উসমান ইবনে আফফান (রাদিয়াল্লাহু আনহু) ইসলামের তৃতীয় খলিফা ছিলেন। তাঁর শাসনামল ন্যায়বিচার, শৃঙ্খলা ও মানবিকতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করে। তাঁর খিলাফতকালে এমন একটি ঘটনা ঘটেছিল যা ইসলামী আইনের অন্তর্নিহিত ন্যায়পরায়ণতার পরিচয় দেয়। যার মাধ্যমে ইসলামের পশুদের প্রতি ইনসাফ ফুটে উঠে।
ঘটনার বিবরণ
এক লোক আরেক লোকের একটি শিকারী কুকুর হত্যা করে। এটি কেবল একটি পশু হত্যার ঘটনা নয়; শিকারী কুকুরের মালিকের জন্য এটি আর্থিক ও প্রয়োজনীয় ক্ষতির কারণ ছিল। ফলে, কুকুর হত্যাকারী ব্যক্তিকে জরিমানা করা হয় ৮০০ দিরহাম।
একই রকম আরেকটি ঘটনা ঘটে, যেখানে একটি কুকুর হত্যার জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তি দোষী সাব্যস্ত হন। তাঁকে জরিমানা হিসেবে ২০টি উট দিতে হয়।
খুলাফায়ে রাশেদার বিচারব্যবস্থা
এই ঘটনাগুলো থেকে বোঝা যায় যে, উসমান রা.-এর খিলাফতকালে শুধুমাত্র মানুষের জীবন নয়, বরং পশুদের জীবনও মূল্যবান বিবেচিত হতো। পশুর প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ এবং তাদের প্রতি অবিচার করলে শাস্তি দেওয়া হতো। এটি তখনকার ইসলামী শাসনব্যবস্থার অগ্রগণ্য মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং ন্যায়পরায়ণতার উদাহরণ।
শিক্ষণীয় বিষয়:
আজকের যুগে আমরা প্রায়ই বলি, “এদেশে মানুষ হত্যার বিচার হয় না”, অথচ “উন্নত দেশে পশু-পাখি হত্যা করলেও বিচার হয়।” এই বক্তব্য অনেকাংশে সত্য হলেও, ইসলামের সোনালি যুগে (খুলাফায়ে রাশেদার আমলে) মানুষ ও পশু উভয়ের জন্যই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করা হতো। বিনা কারণে কুকুর হত্যার জন্য জরিমানা আরোপ করার নজির আমাদের জন্য একটি মূল্যবান শিক্ষা।
উসমান রা.-এর জীবন থেকে অনুপ্রেরণা
উসমান ইবনে আফফান রা.-এর জীবনী পড়তে গেলে এমন বহু উদাহরণ পাওয়া যায় যা তার বিচারব্যবস্থার অসাধারণ দক্ষতার প্রমাণ দেয়। তাঁর শাসনামল কেবল যুদ্ধ বা শাসনকর্ম নয়, মানবিকতা, ন্যায়পরায়ণতা এবং সুশাসনের দৃষ্টান্ত স্থাপনের জন্য বিশেষভাবে স্মরণীয়। পশুর প্রতি অবিচার করার জন্যও শাস্তি দেওয়া হবে—এই দৃষ্টিভঙ্গি সেই সময়কার সামাজিক ন্যায়বিচারের গভীরতা বোঝায়।
উসমান রা.-এর যুগে ন্যায়বিচারের এই উদাহরণ আমাদের বর্তমান সমাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। আজকের দিনে আমাদের উচিত সেই ন্যায়পরায়ণতাকে পুনরায় সমাজে ফিরিয়ে আনা। মানুষ হোক বা পশু—প্রত্যেক জীবের প্রতি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হলে সমাজে প্রকৃত শান্তি এবং ভারসাম্য ফিরে আসবে।