আল্লাহ তায়ালা কুরআনে রিবা (সুদকে) হারাম করেছেন এবং রিবার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। কনভেনশনাল ব্যাংকগুলোতে গ্রাহক থেকে যে অর্থ সংগ্রহ করা হয়; তা শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে ঋণের পর্যায়ভুক্ত। গ্রাহক কর্তৃক অ্যাকাউন্টে অর্থ জমাদান মানে, ব্যাংককে ঋণ প্রদান। এ অর্থ ব্যাংকের কাছে ঋণস্বরূপ থাকে। কাজেই উক্ত ঋণের বিপরীতে যে মুনাফা/ইন্টারেস্ট দেওয়া হয় সেটি নিষিদ্ধ রিবার অন্তর্ভুক্ত।
ব্যাংকে জমাকৃত অর্থ: আমানত না ঋণ? একটি শরয়ী বিশ্লেষণ
ব্যাংকের দেয়াল, বিতরণী লিফটেল ও প্রচারিত বিজ্ঞাপনে জোড়ালোভাবে ‘গ্রাহকের জমাকৃত অর্থ ব্যাংকের কাছে আমানত’ হিসেবে প্রচার করা হলেও বাস্তবে এতে আমানতের বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান নেই। বরং ঋণের বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান।
ঋণ ও আমানতের বৈশিষ্ট্যের মাঝে পার্থক্য রয়েছে। ইসলামী শরীয়া মোতাবেক,
- ঋণের ক্ষেত্রে ঋণগ্রহীতা সম্পদের ঝুঁকি বহন করেন এবং তা বিনষ্ট বা হারিয়ে গেলেও শোধ করতে বাধ্য থাকেন। অন্যদিকে, আমানতের ক্ষেত্রে যদি সম্পদ বিনষ্ট হয় বা হারিয়ে যায়, তবে তার দায়ভার আমানত গ্রহীতার ওপর বর্তায় না।
ব্যাংকিং কার্যক্রমে দেখা যায়, ব্যাংক গ্রাহকের জমাকৃত অর্থের ঝুঁকি বহন করে। এ থেকে বোঝা যায়, কনভেনশনাল ব্যাংকিং পদ্ধতিতে মূলত ঋণের বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। - ঋণগ্রহীতার ঋণের অর্থ ব্যবহারের অধিকার রাখে। আর আমানত গ্রহীতা আমানতের বস্তুর ব্যবহারের অধিকার রাখে না। বরং তা আমানত দাতার নিকট হুবহু হস্তান্তর করতে হয়।
ব্যাংকিং কার্যক্রমে দেখা যায়, কনভেনশনাল ব্যাংক গ্রাহকের জমাকৃত অর্থ ব্যবহার করে থাকে। এখানেও ঋণের বৈশিষ্ট্য পরিলক্ষিত হয়। - ঋণের ক্ষেত্রে ঋণগ্রহীতা ঐ অর্থের মালিকানা লাভ করে এবং তাকে কেবল মূল ঋণের সমপরিমাণ অর্থ ফেরত দিতে হয়। বিপরীতে, আমানত গ্রহীতা কখনও আমানতের বস্তুর মালিকানা লাভ করে না। ফলে তিনি তা ব্যবহার করার অধিকারও রাখেন না।
ব্যাংকিং কার্যক্রমে দেখা যায়, তারা গ্রাহকের জমাকৃত অর্থ ব্যবহার করে, যার ফলে এখানে ঋণের বৈশিষ্ট্য স্পষ্টভাবে প্রতিফলিত হয়।
উপরিউক্ত বিশ্লেষণ দ্বারা এটা সুস্পষ্ট বোঝা যায় যে, কনভেনশনাল ব্যাংকে গ্রাহকের জমাকৃত অর্থ ঋণস্বরূপ হয়ে থাকে। ফলে ব্যাংকে বিদ্যমান সকল অ্যাকাউন্টই ঋণ চুক্তির আওতাভুক্ত।
প্রশ্ন হতে পারে, যে সকল গ্রাহকেরা আমানতস্বরূপ ব্যাংক অ্যাকাউন্টে টাকা জমা রাখে, তাদের জমাকৃত অর্থ কি ঋণস্বরূপ থাকে?
উত্তর: ইসলামী শরীয়ার অন্যতম একটি মৌলিক নীতি হলো,
العبرة في العقود للمقاصد والمعاني لا للألفاظ والمباني.
অর্থাৎ, “চুক্তিতে মূল বিষয় হলো উদ্দেশ্য ও মর্ম বোঝা, শব্দ বা ভাষার উপর নির্ভর করা নয়।”
এই নীতির আলোকে আমরা যদি ব্যাংকে জমাকৃত অর্থের ব্যবহার পদ্ধতি ও ব্যাংকের আচরণ পর্যালোচনা করি, তাহলে এটা স্পষ্ট হয় যে, এ টাকা প্রকৃতপক্ষে ব্যাংকের কাছে ঋণস্বরূপ প্রদান করা হয় – আমানত হিসেবে নয়।
সুদি ব্যাংকের বিকল্প:
সুদি ব্যাংকের একটি গ্রহণযোগ্য বিকল্প হলো ইসলামী বিনিয়োগ পদ্ধতি ভিত্তিক সুদমুক্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এরই একটি প্রয়োগ বর্তমানে ‘ইসলামী ব্যাংকিং’ হিসেবে পরিচিত।
ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থায় গ্রাহকের অর্থ ঋণ হিসেবে নয়, বরং ব্যবসার পুঁজি হিসেবে (মুদারাবা মডিউলের আওতায়) জমা নেওয়া হয় (কারেন্ট অ্যাকাউন্ট ব্যতীত।) আর বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সুদমুক্ত ইসলামী বিনিয়োগ মডিউল অনুসরণ করা হয়। অর্জিত মুনাফা একটি নির্ধারিত আনুপাতিক হারে গ্রাহককে প্রদান করা হয়।
এছাড়াও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অন্যান্য সুদমুক্ত ইসলামী বিনিয়োগ মডিউল অনুসরণ করে। যেমন: মুবারাহা, মুশারাকা, ইজারা প্রভৃতি।