• ফতোয়া জিজ্ঞাসা করুন
  • আমাদের সম্পর্কে
  • গোপনীয়তা নীতি
  • যোগাযোগ
Saturday, May 24, 2025
কোনো ফলাফল উপলভ্য নয়।
সকল প্রবন্ধ দেখুন
NEWSLETTER
মাদাহবিডি
  • মূল পাতা
  • ইসলাম ও জীবন
    • আমল
    • হাদিস
  • ইসলামী অর্থনীতিনতুন
  • ফতোয়া ও মাসআলা-মাসায়েল
  • জীবণী
    • নবীজি সা.
      • মক্কী জীবনী
      • মাদানী জীবনী
      • যুদ্ধ
    • উম্মাহাতুল মুমিনীন
    • সাহাবী
    • তাবেয়ী
    • আকাবির ও মনীষী
  • ইতিহাস
  • ডাউনলোড
  • প্রযুক্তি
  • বাংলা ফন্ট
  • অন্যান্য
    • সম্পাদকীয়
    • বাংলা ব্যাকরণ
    • বিবিধ
    • টুকরো পাতা
    • রিভিউ
  • মূল পাতা
  • ইসলাম ও জীবন
    • আমল
    • হাদিস
  • ইসলামী অর্থনীতিনতুন
  • ফতোয়া ও মাসআলা-মাসায়েল
  • জীবণী
    • নবীজি সা.
      • মক্কী জীবনী
      • মাদানী জীবনী
      • যুদ্ধ
    • উম্মাহাতুল মুমিনীন
    • সাহাবী
    • তাবেয়ী
    • আকাবির ও মনীষী
  • ইতিহাস
  • ডাউনলোড
  • প্রযুক্তি
  • বাংলা ফন্ট
  • অন্যান্য
    • সম্পাদকীয়
    • বাংলা ব্যাকরণ
    • বিবিধ
    • টুকরো পাতা
    • রিভিউ
কোনো ফলাফল উপলভ্য নয়।
সকল প্রবন্ধ দেখুন
মাদাহবিডি
কোনো ফলাফল উপলভ্য নয়।
সকল প্রবন্ধ দেখুন
মূল পাতা ইতিহাস

ভারতবর্ষে আরব, তুর্কি, পর্তুগিজ, ডাচ ও ফরাসি ও বৃটেনিয়ান বণিকদের আগমন: ইতিহাসের দৃষ্টিকোণ

লিখেছেন: মুস্তফা সাঈদ মুস্তাক্বীম
January 17, 2025
বিভাগ: ইতিহাস
A A
ভারতবর্ষে আরব, তুর্কি, পর্তুগিজ, ডাচ ও ফরাসি বণিকদের আগমন ও বাণিজ্যিক প্রভাবের চিত্র।

ভারতবর্ষে আরব, তুর্কি, পর্তুগিজ, ডাচ ও ফরাসি বণিকদের আগমন ও তাদের ব্যবসায়িক প্রভাবের ইতিহাস।

0
শেয়ার
23
দেখেছেন
Share on FacebookShare on Twitter

ধন-রত্নে পূর্ণ ভারত উপমহাদেশের প্রতি বহিঃবিশ্বের দৃষ্টি ব্যাপকভাবে আকৃষ্ট হত। ফলে বিভিন্ন দেশ থেকে বণিকেরা এ দেশে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে আগমন করত। উক্ত প্রবন্ধে জুড়ে আলোচনা হবে কীভাবে ভারতবর্ষে আরব, তুর্কি, পর্তুগিজ ও ওলন্দাজ বণিকদের আগমন ঘটে এবং সেই সাথে ফরাসি ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রতিষ্ঠা সম্পর্কে তথ্য বহুল আলোচনা করা হবে।

ভারতবর্ষে আরবদের আগমন ও ইসলাম বিস্তার:

৬২২ খ্রিষ্টাব্দে মদিনায় রাসুল সা. কর্তৃক ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার মাত্র এক শতাব্দীর মাঝে মুসলমানগণ পশ্চিম এশিয়া, আফ্রিকা, স্পেন, মধ্য এশিয়া, এমনকি ভারত উপমহাদেশের পশ্চিমাঞ্চল পর্যন্ত ইসলাম বিসৃত করতে সক্ষম হোন। মুসলমানদের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে ভারতবর্ষের ইতিহাসে এক সোনালি অধ্যায়ের সূচনা হয়।

ভারতবর্ষে সর্ব প্রথম মালাবারে মুসলমান আরব ব্যবসায়ীগণ আগমন করেন। পরবর্তীতে মুহাম্মদ বিন কাসিমের নেতৃত্বে সিন্ধু বিজয়ের মাধ্যমে এ উপমহাদেশে ইসলামি রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়।

৭১০ খ্রিষ্টাব্দে মুহাম্মদ বিন কাসিম এর সিন্ধু বিজয়ের মধ্য দিয়ে এখানে যে সত্য ও সুন্দরের বিজয় পতাকা উত্তীর্ণ হয়; তা স্থির লক্ষ্যে পৌঁছে ১১৯২ খ্রিষ্টাব্দে তরাইনের যুদ্ধে শিহাবুদ্দীন মুহাম্মদ ঘুরীর বিজয় এবং চৌহান রাজ ও পৃথিরাজের পরাজয়ের মধ্যে দিয়ে।

মুসলিম সুশাসনের ভিত্তি স্থাপন করে মুসলিম শাসকগণ এ দেশে শান্তি ও সমৃদ্ধির জোয়ার সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ইসলামি সংস্কৃতি-শিষ্টাচারের সংমিশ্রণে ভারতবর্ষ পরিণত হয়েছিল এক সুখময়, সোনালি আবাসভূমিতে।

তুর্কিদের আগমন:

রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারে আরবদের সিন্ধু বিজয় কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারেনি। সিন্ধু অভিযানের প্রায় আড়াই শতাব্দী পর আব্বাসীয় খলিফাদের শাসনামলে যে সব মুসলমান ভারতবর্ষে সাম্রাজ্য বিস্তারের প্রয়াস পান তারা আরব ছিল না, তারা ছিল নব-দীক্ষিত তুর্কি মুসলমান।

৯৬২ খ্রিষ্টাব্দে তুর্কি বংশ, যা গজনী বংশ নামে পরিচিত ছিল- গজনীতে স্বীয় আধিপত্য বিস্তারে সক্ষম হন। পরবর্তীতে তাঁদের হাতে ভারত বর্ষের মুসলিম শাসনের স্থায়ী ভিত্তি গড়ে উঠে। ৯৬২ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ১১৮৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত ক্ষমতা তারা এ অঞ্চলে শাসনকার্য পরিচালনা করেন।

পর্তুগিজদের আগমন:

ভৌগোলিক আবিষ্কারের দিক থেকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন দুঃসাহসিক পর্তুগীজগণ। প্রিন্স হেনরী নাবিকদের বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে সমুদ্র অভিযানের প্রশিক্ষণ প্রদান করেছিলেন। ফলে তারা আফ্রিকার উপকূলীয় অঞ্চল সম্পর্কে জানতে পারে।

১৪৭১ খ্রিষ্টাব্দে তারা বিষুবরেখা অতিক্রম করে এবং ১৪৮১ খ্রিষ্টাব্দে কঙ্গো পর্যন্ত অভিযান করে। ১৪৮৪ খ্রিষ্টাব্দে প্রখ্যাত পর্তুগিজ নাবিক বার্তোলোমিউ ডিয়াস দক্ষিণ আফ্রিকার উত্তমাশা অন্তরীপ প্রদক্ষিণ করেন।

১৪৯৭ খ্রিষ্টাব্দে রাজা ইয়ামুয়েলের পৃষ্ঠপােষকতায় ভাস্কো-দা-গামা উত্তমাশা অন্তরীপ পার হন এবং আরব নাবিকদের সহযোগিতায় ১৪৯৮ খ্রিষ্টাব্দের ২৭ শে মে ভারতবর্ষের পশ্চিম উপকূলে কালিকট বন্দরে উপস্থিত হন।

ভাস্কো-দা গামার ভারতবর্ষে আগমন একটি গুরুত্বপূর্ণ যুগের সূচনা করে। কালিকটের স্থানীয় রাজা জামেরীন তাকে আতিথ্য দান করেন। তবে আরব বণিকদের সাথে মনোমালিন্য সৃষ্টি হওয়ায় ভাস্কো দা-গামা তিন মাস অবস্থানের পর ভারতবর্ষ ছাড়তে বাধ্য হন।

ভাস্কো-দা-গামার জলপথ আবিষ্কারের পর এ দেশে পর্তুগিজ বণিকগণ ব্যবসার উদ্দেশ্যে আসতে শুরু করে। তারা সর্ব প্রথম ১৫১০ খ্রিষ্টাব্দে গােয়াতে তাদের কুঠি স্থাপন করে এবং ১৫১৬ খ্রিষ্টাব্দে তা বাংলায় স্থানান্তরিত করে বলে জানা যায়। এ ছাড়াও চট্টগ্রাম, সাতগাঁও, হুগলী প্রভৃতিস্থানে পর্তুগিজরা তাদের বাণিজ্য ঘাঁটি স্থাপন করেন। পর্তুগিজদের কৃতিত্বপূর্ণ আমদানি-রপ্তানির ফলে হুগলী জনবহুল সমৃদ্ধ নগরীতে পরিণত হয়। তারা বিভিন্ন দেশ থেকে রেশমি কাপড়, লবঙ্গ, এলাচ, দারুচিনি, বাদাম ইত্যাদি বাংলাদেশে আমদানি করত। বাংলা থেকে চাল, ডাল, ঘি, তেল ইত্যাদি বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করত।

কালক্রমে পর্তুগিজরা ব্যবসা-বাণিজ্যের রীতিনীতি উপেক্ষা করে দেশীয় জনগণের উপর নির্যাতন চালাতে শুরু করে এবং সরকারি শুল্ক ফাঁকি দিয়ে সরকারকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এসব নানাবিধ কারণে সম্রাট শাহজাহান পর্তুগিজদের বাংলাদেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। কাশিম খান ১৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে তার সেনাবাহিনী নিয়ে হুগলী দুর্গ অবরােধ করেন এবং তাদেরকে হুগলী থেকে বিতাড়িত করেন এবং বাংলার সুবাদার শায়েস্তা খাঁন তাদেরকে চট্টগ্রাম ও সন্দ্বীপ থেকে চিরতরে বিতাড়িত করেন।

 ওলন্দাজদের আগমন:

হল্যান্ডের একদল উৎসাহী বণিক ব্যবসার উদ্দেশ্যে ১৬০২ খ্রিষ্টাব্দে মার্চ মাসে ডাচ ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি গঠন করে ভারতবর্ষে আগমন করে। তারা ১৬০৫ খ্রিষ্টাব্দে মসলিপট্রমে, এবং ১৬১০ খ্রিষ্টাব্দে পুলিকটে কুঠি স্থাপন করে। বাংলায় ওলন্দাজদের প্রধান কুঠি ছিল উঁচুড়া (১৬৫৩ খ্রিষ্টাব্দে) বালেশ্বর, কাশিম বাজার, বরা নগর প্রভৃতি স্থানে।

ওলন্দাজরা এ দেশ থেকে কাঁচামাল, রেশমি সুতা, সুতি বস্ত্র, চাল, ডাল প্রভৃতি বিদেশে রপ্তানি করত। আর এ দেশে বিভিন্ন প্রকার মশলা আমদানি করত। কালক্রমে তাদের বাণিজ্য বর্তমান মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় সীমিত হয়ে পড়ে। বাণিজ্যিকভাবে তেমন সুবিধা করতে না পেরে ১৭৪৫ সালে ইংরেজদের কাছে ওলন্দাজরা তাদের কুঠিগুলো বিক্রি করে উপমহাদেশ ছেড়ে চলে যায়।

ফরাসি ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি:

ফরাসি সম্রাট চতুর্থ লুই-এর রাজত্বকালে তারই অর্থসচিব কোলবার্ট ‘ফরাসি ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি’ গঠন করেন। সম্রাট এই কোম্পানিকে পর্যাপ্ত অর্থ ঋণ দান করেন। ১৬৬৮ খ্রিষ্টাব্দে ফ্রাঁসােয়া ক্যারো সর্ব প্রথম সুরাটে ফরাসি বাণিজ্য কুঠি প্রতিষ্ঠা করেন। পরের বছর মারকারা মৌসলিপট্রমে অপর একটি কুঠি স্থাপন করেন। ১৬৭২ খ্রিষ্টাব্দে মাদ্রাজের সন্নিকটে ওলন্দাজদের সাথে তাদের সংঘর্ষ হয়, এবং ফরাসিরা পরাজিত হয়। ১৬৭৩ খ্রিষ্টাব্দে ফ্রাঁসােয়া মার্টিন ও লেসপিনে পন্ডিচেরিতে একটি ফরাসি উপনিবেশ স্থাপন করেন।

১৬৭৪ খ্রিষ্টাব্দে নবাব শায়েস্তা খান ফরাসিদের বাংলায় চন্দন নগরে একটি বাণিজ্য কুঠি নির্মাণের অনুমতি দেন। ১৬৯০-৯২ খ্রিষ্টাব্দের মাঝে চন্দন নগর একটি শক্তিশালী ফরাসি সুরক্ষিত কুঠিতে পরিণত হয়। ১৬৯২ খ্রিষ্টাব্দে সেটি ওলন্দাজগণ কর্তৃক অধিকৃত হলে পুনরায় তা ফরাসিদের ফেরত দেয়া হয়। অষ্টাদশ শতাব্দীর প্রথমভাগে ফরাসি ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির অর্থবল হ্রাস পেলে মৌসুলিট্রম, সুরাট ও সানটোমের কুঠি তারা পরিত্যাগ করতে বাধ্য হয়। ১৭০২ খ্রিষ্টাব্দে ফরাসি কোম্পানি পুনরায় গঠিত হলে তারা মাহে ও কারিকল বন্দর পুনরুদ্ধার করে। বাংলায় ফরাসিরা বলেশ্বর, কাশিমবাজার, চন্দন নগর প্রভৃতি স্থানে কুঠি স্থাপন করে। ১৭৪২ খ্রিষ্টাব্দের পরে ইংরেজদের সাথে প্রতিযােগিতামূলক বাণিজ্যে টিকে থাকার প্রশ্নে তারা রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের মনোনিবেশ করেন।

বৃটেনিয়ান ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রতিষ্ঠা:

পর্তুগিজদের সাফল্যজনক নৌ অভিযান ও সমুদ্র বাণিজ্যে অনুপ্রাণিত হয়ে ইংরেজ বণিকগণ বাণিজ্য করার মানসে প্রাচ্যে আগমন করেন। ১৫৮০ খ্রিষ্টাব্দে ফ্রান্সিস ড্রেকের সমুদ্র পথে পৃথিবী প্রদক্ষিণ এবং ইংরেজ নৌবহর কর্তৃক স্পেনিশ আর্মডার পরাজয় ইংরেজদের সমুদ্র অভিযানে উৎসাহিত করে।

উপরন্তু র‍্যালফ ফিচ এবং জন মিনডেনহল প্রমুখ ইংরেজ পর্যটকদের বর্ণনায় ভারতবর্ষের অতুলনীয় বৈভব ও ঐশ্বর্যের কথা ইংরেজগণ জানতে পারে। ১৫৯১ হতে ১৫৯৩ খ্রিষ্টাব্দে মাঝে জেমস ল্যাংকাষ্টার উত্তমাশা অন্তরীপ ও পেনাঙ্গে আগমন করেন। ১৫৯৬ খ্রিষ্টাব্দে বেনজামিন উড প্রাচ্য দেশে সমুদ্রাভিযান করেন। ১৫৯৯ খ্রিষ্টাব্দে জন মিনডেনহল স্থলপথে লন্ডন হতে ভারতবর্ষে আগমন করেন এবং সাত বৎসর ভারতবর্ষে অবস্থান করেন।

এ সময় তিনি ভারতের বাণিজ্য সম্ভাবনার কথা স্বদেশী পত্র-পত্রিকায় তুলে ধরেন। ফলে প্রাচ্য দেশে বাণিজ্য করার জন্য লন্ডনে ২১৮ জন সদস্য বিশিষ্ট একটি বণিক সম্প্রদায় গঠিত হয় এবং রাণী প্রথম এলিজাবেথের থেকে ১৬০০ খ্রিষ্টাব্দে তারা একটি সনদ লাভ করেন।

পনেরো বৎসর মেয়াদ সম্পন্ন এই সনদে প্রাচ্য দেশের সাথে বাণিজ্য সম্পর্ক স্থাপনের জন্য এই বণিক সম্প্রদায়কে একচেটিয়া অধিকার প্রদান করা হয়। এই বণিক সম্প্রদায়ই ইতিহাসে ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি নামে পরিচিত।

ইংরেজ বণিকগণ এ দেশে আসার পর প্রধানত দুই ধরনের তৎপরতা চালায়। যথা: ক. ব্যবসায়িক তৎপরতা। খ. রাজনৈতিক তৎপরতা।

ব্যবসায়িক তৎপরতা:  ব্যবসায়িক তৎপরতাকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। ক. বিভিন্ন স্থানে কুঠি স্থাপন ও এ দেশীয় সরকারের অনুমোদন লাভ। খ. অপরাপর বণিকদের সাথে ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতা।

বিভিন্ন স্থানে কুঠি স্থাপন:

কোম্পানি প্রথম কয়েক বছর পৃথকভাবে মসলা ব্যবসার জন্য কয়েকটি বাণিজ্য জাহাজ সুমাত্রা, মালাক্কা ও জবদ্বীপে প্রেরণ করে। ব্যবসায়িক সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে ১৬০৮ খ্রিষ্টাব্দে ক্যাপটেন হাকিন্স ইংল্যান্ডের রাজা প্রথম জেমসের আদেশে মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের দরবারে আগমন করেন। ১৬০৯ খ্রিষ্টাব্দে সম্রাট জাহাঙ্গির হকিন্সের আবেদনক্রমে সুরাটে ইংরেজদের একটি কুঠি স্থাপনের অনুমতি দেন। কিন্তু সুরাটের বণিকদের বিরোধিতা ও পর্তুগিজদের প্ররােচনায় পরবর্তীতে এই অনুমােদন নাকচ করে দেয়া হয়।

আগ্রা, আহমদাবাদ, ভারুচ প্রভৃতিস্থানে বাণিজ্য কুঠি স্থাপন:

১৬১৫ খ্রিষ্টাব্দে প্রথম জেমস ‘স্যার টমাস রা’ কে জাহাঙ্গীরের দরবারে ইংরেজ দূত হিসেবে প্রেরণ করেন। তিনি ১৬১৮ খ্রি. পর্যন্ত রাজদরবারে অবস্থান করেন। তার অক্লান্ত প্রচেষ্টায় ইংরেজ বণিকগণ বিশেষ কতকগুলি সুযােগ সুবিধা অর্জন করেন।

যদিও মোঘলদের সাথে প্রচলিত কোনো বাণিজ্য চুক্তি হয়নি। ১৬১৯ খ্রিষ্টাব্দে টমাস রা ভারতবর্ষ ত্যাগের পূর্বে ইংরেজগণ সুরাট, আগ্রা, আহমদাবাদ, ভারুচ প্রভৃতি স্থানে বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করে পূর্ণোদ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করে দেয়। এছাড়াও বাণিজ্যিক সুবিধার্থে নানাস্থানে বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করেন। যেমন: ভারতবর্ষের দক্ষিণ পূর্ব উপকূলে, ১৬১১ খ্রিষ্টাব্দে মৌসলিপট্রমে প্রধান কেন্দ্র স্থাপন, আরামটাও নামে অপর একটি কুঠি স্থাপন এগুলাের মাঝে উল্লেখযােগ্য। বাংলার হরিপুর ও বলেশ্বরে ১৬৩৩ খ্রিষ্টাব্দে তাদের কুঠি স্থাপিত হয়। ক্রমান্বয়ে পাটনা, কাশিম বাজার, ঢাকা ও রাজমহলসহ গােটা উপমহাদেশে তারা শক্তিশালী কুঠি স্থাপন করে ফেলে।

ইংরেজদের অবাধ বাণিজ্যের সুযােগ ও কোম্পানির আগ্রাসী তৎপরতা তাদেরকে সপ্তদশ শতকের শেষের দিকে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসী তৎপরতায় লিপ্ত হয়। অবশ্য ভারতবর্ষের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও মুঘল সম্রাটদের অভ্যন্তরীণ জটিলতা তাদেরকে এই সুযােগ তৈরিতে সাহায্য করে।

ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রভাবশালী ডাইরেক্টর স্যার যশুয়া চাইল্ড সর্বপ্রথম রাজ্য সম্প্রসারণ নীতি গ্রহণের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নতির পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। এই নীতির অনুসরণে যশুয়া চাইল্ডের ভ্রাতা স্যার জন চাইল্ড বোম্বাই বন্দর অবরােধ করেন এবং মুঘল বন্দরসমূহ থেকে নৌবহর আটক করেন।

ইংরেজদের রাষ্ট্রবিরােধী কার্যকলাপে সম্রাট আওরঙ্গজেবকে ক্রুদ্ধ হয়ে তাদের সমুচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য বোম্বাই দখলের আদেশ দেন। ১৬৯০ খ্রিষ্টাব্দে জন চাইল্ড ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং উভয় পক্ষের স্বাক্ষরিত চুক্তি মোতাবেক ক্ষতিপূরণ স্বরূপ ইংরেজগণ দেড় লক্ষ অর্থকড়ি এবং অধিকৃত অঞ্চলসমূহ ফেরত দিতে অঙ্গীকার করে।

১৬৫১ খ্রিষ্টাব্দে বাংলার সুবাদার শাহ সুজা মাত্র তিনি হাজার টাকা বাৎসরিক খাজনার বিনিময়ে ইংরেজদের বাংলায় শুল্ক মুক্ত অবাধ বাণিজ্য করার সুযােগ প্রদান করেন। ১৬৭২ খ্রিষ্টাব্দে বাংলার সুবাদার শায়েস্তা খান ইংরেজদের বিনা শুল্কে অবাধ বাণিজ্য করার অনুমতি দেন। ১৬৮০ খ্রিষ্টাব্দে স্বয়ং আওরঙ্গজেব পণ্য দ্রব্যের উপর শতকরা দু’টাকা ছাড়াও দেড় টাকা জিযিয়া কর হিসাবে প্রদানের অঙ্গীকারের ভিত্তিতে সমগ্র সাম্রাজ্যে ইংরেজদের অবাধে বাণিজ্য করার অনুমতি দিয়ে ফরমান জারি করেন।

ইংরেজদের সামরিক প্রস্তুতি:

এদিকে মুঘলদের অধীনস্থ স্থানীয় কর্মচারীগণ লোভের বশে ইংরেজদের থেকে অবৈধ কর আদায় করতে শুরু করে। কখনও তারা ইংরেজদের পণ্য বাজেয়াপ্ত করত। এই অজুহাত দেখিয়ে হুগলীর ইংরেজ কুঠিয়াল সাহেবরা তাদের কুঠি সুরক্ষিত করে অত্যাচারী কর্মচারীদের বাঁধা প্রদানের প্রস্তুতি গ্রহণ করে।

ইংরেজগণ বলপূর্বক হুগলী দখল করলে মুঘলদের সাথে সংঘর্ষ বাঁধে। শায়েস্তা খান হুগলী দখল করে ক্ষমতালিপ্সু ইংরেজদের বাংলা থেকে বিতাড়িত করেন। বিচক্ষণ ইংরেজ জবচার্নক আওরঙ্গজেবের অনুমতি নিয়ে সুতানটিতে গোত্রীয়দের নিয়ে ১৬৮৭ খ্রিষ্টাব্দে একটি বসতি স্থাপন করেন। ১৬৮৭ খ্রিষ্টাব্দে ক্যাপটেন উইলিয়ম হীমের নেতৃত্বে একটি নৌ বহর চট্টগ্রাম অধিকার করলে মােঘলদের সঙ্গে পুনরায় সংঘর্ষ শুরু হয়। ফলে জবচার্নক সুতানটি ত্যাগে বাধ্য হয়।

১৬৯০ খ্রিষ্টাব্দে মুম্বাইয়ে ইংরেজদের সাথে আওরঙ্গজেবের চুক্তি হলে জব চার্নক পুনরায় বাংলায় প্রত্যাবর্তন করেন। ১৬৯১ খ্রিষ্টাব্দে সুবাদার ইব্রাহিম খাঁন সম্রাটের আদেশক্রমে ইংরেজদের অবাধ বাণিজ্যের অনুমতি দেন। ১৬৯৬ খ্রিষ্টাব্দে ইংরেজগণ তাদের বাণিজ্য কুঠিকে জলদস্যুদের আক্রমণ থেকে রক্ষার অজুহাতে সেগুলোকে দুর্গে পরিণত করার সুযােগ লাভ করে এবং এর ফলে বাংলায় তাদের ব্যবসা বাণিজ্য উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং তাদের ক্ষমতা ও প্রতিপত্তির সুদৃঢ় ভীত তৈরি হয়।

১৬৯৮ খ্রিষ্টাব্দে ইংরেজগণ বাৎসরিক বার শত টাকা খাজনা প্রদানের অঙ্গীকার ভিত্তিতে কলিকাতা (কালীঘাট), সুতানটি, গোবিন্দপুর নামে ৩টি গ্রামের জমিদারি লাভ করেন। পরবর্তীকালে এটিই মহানগরী কলিকাতায় রূপান্তরিত হয়।

১৭০০ খ্রিষ্টাব্দে ইংল্যান্ডের রাজা তৃতীয় উইলিয়ামের নামানুসারে কলিকাতায় ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গ প্রতিষ্ঠিত হয়। এভাবে কলিকাতা, মাদ্রাজ ও বোম্বাই ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শক্তির অভ্যুত্থানের প্রধান তিনটি কেন্দ্রে পরিণত হয়।

১৬৯৮ খ্রিষ্টাব্দে ইংল্যান্ডে একটি বিলের মাধ্যমে ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি নামে অপর একটি বাণিজ্য প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হয়। পুরাতন ও নতুন কোম্পানির মধ্যে দ্বন্দ্ব বেঁধে গেলে ১৭০৮ খ্রিষ্টাব্দে এ দুটি কোম্পানি যৌথভাবে ‘ইউনাইটেড ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি’ নামে পরিচিত হয় এবং ১৭৯৩ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এ কোম্পানি যৌথ ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করে।

ফররুখ শিয়রের ফরমান:

অষ্টাদশ শতাব্দীতে ইংরেজ বণিকদের ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারণের পথ সুগম হয়। ১৭১৫ খ্রিষ্টাব্দে কলিকাতা থেকে ইংরেজ দূত জন সুরমান মুঘল সম্রাট ফররুখ শিয়রের দরবারে উপস্থিত হয়ে সমগ্র মােঘল সাম্রাজ্যে বাণিজ্যিক সুযোগ-সুবিধা গ্রহণের চেষ্টা করেন। জন সুরমানের সঙ্গে চিকিৎসক হ্যামিল্টনও দিল্লীতে আগমন করেন এবং ফররুখ শিয়রের কঠিন অসুখের চিকিৎসা করে তাকে সুস্থ করে তোলেন।

এতে সম্রাট ইংরেজদের উপর প্রীত হয়ে ফরমান জারি করে সকল প্রদেশের সুবাদারকে ইংরেজদেরকে সকল প্রকার বাণিজ্যিক সুযােগ-সুবিধা প্রদানের আদেশ দেন। এ ফরমানের বদৌলতে ইংরেজরা বিনাশুল্কে বাৎসরিক মাত্র ৩০০০ টাকা খাজনা প্রদানের অঙ্গীকারে বাংলায় একচেটিয়া ব্যবসা করার অধিকার লাভ করে এবং কলিকাতার পার্শ্ববর্তী অঞ্চল ইজারা নেয়ার অধিকারও তারা লাভ করেন।

বাৎসরিক ১০,০০০ টাকার বিনিময়ে বিনা শুল্কে তারা সুরাটে অবাধ বাণিজ্য করতে থাকে। এই ফরমান বলেই কোম্পানি বোম্বাইয়ে মুদ্রা ছেপে সমগ্র মুঘল সাম্রাজ্যে চালু করে। ঐতিহাসিক ওরমে এই ফরমানকে ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানির ‘ম্যাগনা কাটা’ অথবা মহাসনদ বলে অভিহিত করে।

অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও সম্রাট আওরঙ্গজেবের পর দিল্লির সরকার অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে দেশীয় রাজন্যবর্গ স্ব স্ব অঞ্চলে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। যেমন, দক্ষিণাত্যে নিযামুল মুলক, অযোধ্যায় সাদাত খান, বাংলায় নবাব আলীবর্দী খান প্রভৃতি। এদিকে আঞ্চলিক অমুসলিম বিদ্রোহী শক্তিগুলো আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। যেমন: মারাঠা, জাঠ, শিখ, রাজপুত প্রভৃতি। এসব কারণে উপমহাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে মারাত্মক বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়, ফলে ইংরেজরা সুযােগের সদ্ব্যবহার করে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠা লাভের ষড়যন্ত্রে মেতে উঠে।

অপরাপর বণিক সম্প্রদায়ের সাথে ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতা:

বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে ইংরেজদেরকে এ দেশে একচ্ছত্র কর্তৃত্ব স্থাপনের জন্য অন্যান্য ইউরোপীয় বণিক দলের সাথে চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামতে হয়। এক্ষেত্রে ফরাসি বণিক শ্রেণি তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে দাঁড়ায়। অবশেষে ১৭৫৩ খ্রিষ্টাব্দে কর্নাটকের প্রথম ও দ্বিতীয় যুদ্ধে ফরাসিরা পরাজিত হলে এ দেশে ইংরেজ বণিকদের একচ্ছত্র বাণিজ্যিক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।

তথ্যসূত্র: দেওবন্দ আন্দোলন - আবুল ফাতাহ মুহাম্মদ ইয়াহইয়া
মুস্তফা সাঈদ মুস্তাক্বীম

মুস্তফা সাঈদ মুস্তাক্বীম

মুস্তফা সাঈদ মুস্তাক্বীম — লেখক, পাঠক, বর্ণপ্রেমী ও শিক্ষার্থী। বর্তমানে তিনি ‘আত-তাখাসসুস ফিল ফিকহি ওয়াল ইফতা’ বিভাগের ২য় বর্ষে অধ্যয়নরত। ইসলামী অর্থনীতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে তিনি দুই শতাধিক প্রবন্ধ লিখেছেন।

  • মূল পাতা
  • আমাদের সম্পর্কে
  • গোপনীয়তা নীতি
  • যোগাযোগ
  • ফতোয়া জিজ্ঞাসা করুন
যোগাযোগ: +৮৮ ০১৭৩৩০৮৯৫৭৩

© ২০২৫ মাদাহবিডি - কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | সম্পাদক ও প্রকাশক: মুস্তফা সাঈদ মুস্তাক্বীম

কোনো ফলাফল উপলভ্য নয়।
সকল প্রবন্ধ দেখুন
  • মূল পাতা
  • ইসলাম ও জীবন
    • আমল
    • হাদিস
  • ইসলামী অর্থনীতি
  • ফতোয়া ও মাসআলা-মাসায়েল
  • জীবণী
    • নবীজি সা.
      • মক্কী জীবনী
      • মাদানী জীবনী
      • যুদ্ধ
    • উম্মাহাতুল মুমিনীন
    • সাহাবী
    • তাবেয়ী
    • আকাবির ও মনীষী
  • ইতিহাস
  • ডাউনলোড
  • প্রযুক্তি
  • বাংলা ফন্ট
  • অন্যান্য
    • সম্পাদকীয়
    • বাংলা ব্যাকরণ
    • বিবিধ
    • টুকরো পাতা
    • রিভিউ

© ২০২৫ মাদাহবিডি - কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | সম্পাদক ও প্রকাশক: মুস্তফা সাঈদ মুস্তাক্বীম