উত্তম চরিত্র ও সদাচার মানুষের মহামূল্যবান একটি গুণ। যা মানুষকে শ্রেষ্ঠত্বে পৌছোতে সাহায্য করে। ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে উত্তম চরিত্রের গুরুত্ব অপরিসীম, যা কুরআন এবং হাদীসে বহুবার উল্লেখিত হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা কুরআনে প্রিয় রাসূল (সা.)-কে সম্বোধন করে বলেন:
فَبِمَا رَحۡمَۃٍ مِّنَ اللّٰهِ لِنۡتَ لَهُمۡ ۚ وَ لَوۡ کُنۡتَ فَظًّا غَلِیۡظَ الۡقَلۡبِ لَانۡفَضُّوۡا مِنۡ حَوۡلِکَ ۪ فَاعۡفُ عَنۡهُمۡ وَ اسۡتَغۡفِرۡ لَهُمۡ وَ شَاوِرۡهُمۡ فِی الۡاَمۡرِ ۚ فَاِذَا عَزَمۡتَ فَتَوَکَّلۡ عَلَی اللّٰهِ ؕ اِنَّ اللّٰهَ یُحِبُّ الۡمُتَوَکِّلِیۡنَ
“তুমি আল্লাহর রহমতের কারণে তাদের প্রতি কোমল ছিলে। যদি তুমি রূঢ় ও কঠোর হৃদয়ের হতে, তবে তারা তোমার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত। তাই তাদেরকে ক্ষমা কর, তাদের জন্য মাগফিরাতের প্রার্থনা কর, এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাদের সাথে পরামর্শ করো। এরপর যখন তুমি কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হও, তখন আল্লাহর উপর নির্ভর করো। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওয়াক্কুলকারীদেরকে ভালোবাসেন।” [সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৫৯]
এখানে, আল হাফিজ আব্দুর রউফ আল মুনাওয়ি (রহিমাহুল্লাহ) বর্ণিত ১০টি গুণাবলির আলোকে উত্তম চরিত্রের কিছু বিশেষ নিদর্শন আলোচনা করা হলো।
১০ টি উত্তম গুণাবলি:
অপ্রয়োজনীয় তর্কে লিপ্ত না হওয়া:
অপ্রয়োজনীয় তর্ক মানুষের হৃদয়কে কঠোর এবং মনকে উদ্দীপ্ত করে। উত্তম চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তিরা সাধারণত তর্ক-বিতর্ক এড়িয়ে চলেন। তারা অন্যদের মনোভাব বোঝার চেষ্টা করেন এবং অযথা বিতর্কে লিপ্ত হওয়া থেকে বিরত থাকেন।
অন্যদের সাথে ন্যায্য আচরণ করা:
ন্যায্যতা এবং সমতা উত্তম চরিত্রের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। একজন ন্যায়বান ব্যক্তি সবসময় চেষ্টা করেন যেন প্রত্যেকের সাথে ইনসাফ করা হয়।
মানুষের দোষ ত্রুটি খোঁজা থেকে বিরত থাকা:
উত্তম চরিত্রের অধিকারীরা অন্যের ত্রুটি খোঁজার পরিবর্তে নিজের ত্রুটিগুলির প্রতি মনোযোগী হন এবং আত্মসমালোচনার মাধ্যমে নিজেকে উন্নত করার চেষ্টা করেন।
যে কোন মন্দ গুণাবলী সংশোধন করার এবং নিজেকে উন্নত করার চেষ্টা করা:
উত্তম চরিত্রের লোকেরা মন্দ গুণাবলি সংশোধন এবং নিজেকে উন্নত করার চেষ্টায় নিরন্তর সচেষ্ট থাকেন। নিজেকে আরও ভালো করার চেষ্টায় তারা নিমগ্ন থাকেন।
মানুষের দোষ ত্রুটির ক্ষেত্রে ওজর তালাশ করা:
ক্ষমা মহৎ একটি গুণ এবং উত্তম চরিত্রের একটি বিশেষ দিক। এটি ব্যক্তির হৃদয়কে উদার করে তোলে এবং পারস্পরিক সখ্যতা গড়ে তুলতে সাহায্য করে। উত্তম চরিত্রের মানুষরা সহজেই অন্যের ভুল ক্ষমা করেন এবং ক্ষমাশীলতার মাধ্যমে মানুষের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন করেন।
বিপদে সবর করা:
ধৈর্য বা সবর উত্তম চরিত্রের একটি বিশিষ্ট বৈশিষ্ট্য। বিপদ বা কঠিন পরিস্থিতিতে ধৈর্য ধরার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি মানসিক শান্তি অর্জন করতে পারেন।
আত্মসমালোচনা করা:
আত্মসমালোচনা হলো উন্নতির প্রথম পদক্ষেপ। উত্তম চরিত্রের অধিকারীরা নিজের ভুলগুলো নিরীক্ষণ করতে পছন্দ করেন এবং সেগুলোর ভিত্তিতে নিজেদের উন্নতির চেষ্টা করেন।
নিজের ভুল সম্পর্কে সচেতন থাকা:
নিজের ভুল সম্পর্কে সচেতন থাকা একজন ব্যক্তির আত্মউন্নয়নের প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করে দেয়। নিজেকে উন্নত করার জন্য অন্যের ভুলগুলো নয় বরং নিজের ভুলগুলো বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন।
সর্বদা হাসিমুখে থাকা:
হাসিমুখে থাকা একজন মানুষের চরিত্রের মধ্যে বিনয় এবং দয়ার প্রতিফলন ঘটায়।
কথাবার্তায় নম্রতা অর্জন করা:
নম্রতা মানুষের হৃদয় জয় করার একটি অন্যতম গুণ। কথাবার্তায় নম্রতা প্রকাশ করার মাধ্যমে উত্তম চরিত্রের অধিকারীরা সহজেই মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করতে সক্ষম হন।
উত্তম চরিত্র
উত্তম চরিত্র ব্যক্তির মানসিক ও আধ্যাত্মিক প্রশান্তি এনে দেয়। উত্তম চরিত্র মানুষের অন্তরে স্থায়ী প্রভাব ফেলে এবং পারস্পরিক সম্পর্কের মাধুর্য বাড়ায়। আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের জন্য এই গুণগুলির চর্চা একান্তই গুরুত্বপূর্ণ। উত্তম চরিত্রের নিদর্শনসমূহ অনুসরণ করে মানুষ ব্যক্তিগত জীবনে সাফল্য এবং সমাজে শ্রদ্ধা অর্জন করতে পারে।