একটা কথা মনে রাখবেন: শিল্পী বাঁচলে শিল্প বাঁচবে। শিল্পীর সংকট শাস্ত্রের ইতি টেনে আনে। বাংলা ফন্ট নিয়ে আমি আমার বাজে অভিজ্ঞতার কথা বলব। কথাগুলো শুধুমাত্র আমার একার নয়; বরং আমার অভিজ্ঞতার অনেক ডিজাইনার একমত হবেন বলে আশা করি। বর্তমানে যারা টাইপফেস ডিজাইন বা ফন্ট ডেভেলপ করে থাকেন। তারা জানেন, এর পিছনে কতটুকু শ্রম দিতে হয়, ব্যস্ততার ফাঁকে সময় বের করে নিতে হয়, ফন্টকে আকর্ষণীয় করে তুলতে ইউনিক কনসেপ্ট খুঁজে বের করতে হয়; যা সময় সাপেক্ষ একটি কাজ।
তৈরি হবে না সৃজনশীল বাংলা ফন্ট?
বর্তমানে বাংলা ফন্টের সংখ্যা ৭০০ ‘র অধিক। এই বিপুল সংখ্যক ফন্টের সবগুলোই যেমন মৌলিক নয়, তেমনিভাবে সৃজনশীলও নয়। হাতেগুনো কয়েকটি ফন্ট সৃজনশীলতায় স্থান পেয়েছে। সাধারণত সৃজনশীল বাংলা ফন্টগুলোই প্রিমিয়াম হয়ে থাকে। ফ্রি ফন্টে ব্যবহারকারীরা প্রিমিয়াম ফন্ট কেনার আগ্রহ লালন করেন না। ফলে প্রিমিয়াম ফন্টগুলো স্বল্প মূল্যের হওয়া সত্যেও তেমন একটা বিক্রি হয় না। ফলে ডিজাইনারগণ নতুন করে ভালো কিছু করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।
ফন্ট তৈরির ক্ষেত্রে বহু ধাপ পারি দিতে হয়। ধাপগুলো অতিক্রম করাটাও বেশ কষ্টসাধ্য। ফলে, সাধারণভাবে একটি ফন্ট ডিজাইন করতে সময় লাগে ১০ দিনের মতো। এই দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর স্বল্প প্রাপ্তি অদম্য স্পৃহা নিয়ে বেড়ে যাওয়ার পথ রুদ্ধ করছে।
অপর দিকে প্রিমিয়াম মানের ফন্ট ডিজাইন করাটা বেশ কষ্টকর। এর পিছনে সময় ব্যয় করা সত্ত্বেও ডিজাইনারগণ যখন উপযুক্ত সম্মানী পান না, তখন নিজেদেরকে গুটিয়ে নেন।
আরেকটি কারণ
সৃজনশীল লা ফন্ট তৈরি না হওয়ার পিছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে, ফন্ট পাইরেসি। অবশ্যই আমি আর্দশিকভাবে এর গোড় বিরুধী। মাঝে মধ্যে দৃঃখের সাথেই বলতে হয়, হাতের নাগালে থাকা সবকিছু টাকা দিয়ে ক্রয় করলেও টাকা খরচ করে ফন্ট ক্রয় করতে চান না অনেকেই।
বর্তমানে ফন্ট পাইরেসির প্রবণতা বেড়েছে। একটি ফন্ট প্রকাশিত হওয়ার কয়েক দিনের মাঝেই গোপণে ব্যবহারকারীদের মাঝে আদান-প্রদান হয়ে যায়।
অবাক করা বিষয় হলো: যারা পাইরেসির সাথে জড়িত, তারা এটাকে মহৎ সেবা মনে করেন। তাদের স্লোগান হল: “ধনীর সম্পদ গরীবকে বিলিয়ে দিতে এসেছি।”
তবে এ কথা তারা ভুলে যান যে, ধনীর সম্পদ গরীবের মাঝে বিতরণ করতে অবশ্যই তা কিনে বিতরণ করতে হয়। একটা ফন্টের মূল্যই বা কত টাকা হবে? বড়জোর ১০০ থেকে ২০০ টাকা। ফন্ট ক্রয়ে সামান্য অর্থ ব্যয়ে সম্মত নন তারা।
পরিশেষে, শিল্পী বাঁচলে শিল্প বাঁচবে। শিল্পীর সংকট শাস্ত্রের ইতি টেনে আনে। প্রত্যেকেই তার কাজের প্রাপ্য চাইতে পারে। চাওয়াটা দূষণীয় নয়। যদি এভাবেই ফন্ট পাইরেসি চলতে থাকে, তাহলে একটা সময় এমন আসবে যে, বাংলা ফন্ট তৈরির আগ্রহ ডিজাইনাররা হারিয়ে ফেলবে। যার ফলে, সৃজনশীল ফন্ট তৈরির ক্ষেত্রে বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হতে হবে।