সূরা কাহাফ হলো কুরআনুল কারীমের ১৫তম পারায় ১৮নং সূরা, সূরাটি ১১০টি আয়াতের সমন্বিত। সূরা কাহাফে রয়েছে আসহাবে কাহাফের বিবরণ, কোন কাজের শেষে ইনশাআল্লাহ বলার উপদেশ, পূর্ববর্তী দুই ব্যক্তির ঘটনা, মূসা আ. ও খিজির আ.-এর ঘটনা, জুলকারনাইন ও ইয়াজুজ-মাজুজের বিবরণ।
সূরা কাহাফ পাঠের ফজিলত:
যে ব্যক্তি প্রতি শুক্রবারে সূরা কাহাফ তেলাওয়াত করবে। আল্লাহ তায়ালা তাকে দাজ্জালের ফিতনা থেকে হেফাজত কবরেন।
হযরত আবুদ দারদা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
مَنْ حَفِظَ عَشْرَ آيَاتٍ مِنْ أَوّل سُوْرة الكَهْفِ عُصِمَ مِنَ الدَّجَّال.
যে ব্যক্তি সূরা কাহফের প্রথম দশ আয়াত মুখস্থ করবে, সে দাজ্জালের ফেতনা থেকে রক্ষা পাবে। [সহীহ মুসলিম, হাদীস ৮০৯]
হযরত আবু সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- যে ব্যক্তি জুমআর দিন সূরা কাহাফ তেলাওয়াত করবে পরবর্তী জুমআ পর্যন্ত তার জন্য নূর হয়ে থাকবে। [সুনানে কুবরা বায়হাকী ৩/৩৪৯]
হযরত আবু ইসহাক (রহ.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হযরত বারা (রা.)–কে বলতে শুনেছি। এক ব্যক্তি সূরা কাহফ পড়ছিলেন। এমন সময় দেখেন তাঁর ঘোড়াটি লাফালাফি করছে। তখন তিনি তাকিয়ে দেখেন মেঘের মত বা ছায়ার মত একটি বস্তু। তিনি রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) এর কাছে এলেন এবং এ বিষয়টির উল্লেখ করলেন। রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বললেন: এ হল সাকীনা (বিশেষ প্রশান্তি) কুরআনের সঙ্গে অথবা তিনি বলেছেন কুরআনের উপর যা নাজিল হয়েছে।
সূরা কাহাফের প্রথম ১০ আয়াত:
اَلْحَمْدُ لِلّٰهِ الَّذِیْۤ اَنْزَلَ عَلٰی عَبْدِهِ الْكِتٰبَ وَ لَمْ یَجْعَلْ لَّهٗ عِوَجًا ؕ﴿ٜ۱﴾ قَیِّمًا لِّیُنْذِرَ بَاْسًا شَدِیْدًا مِّنْ لَّدُنْهُ وَ یُبَشِّرَ الْمُؤْمِنِیْنَ الَّذِیْنَ یَعْمَلُوْنَ الصّٰلِحٰتِ اَنَّ لَهُمْ اَجْرًا حَسَنًاۙ﴿۲﴾ مَّاكِثِیْنَ فِیْهِ اَبَدًا ۙ﴿۳﴾ وَّ یُنْذِرَ الَّذِیْنَ قَالُوا اتَّخَذَ اللّٰهُ وَلَدًا ٭﴿۴﴾مَا لَهُمْ بِهٖ مِنْ عِلْمٍ وَّ لَا لِاٰبَآىِٕهِمْ كَبُرَتْ كَلِمَةً تَخْرُجُ مِنْ اَفْوَاهِهِمْ اِنْ یَّقُوْلُوْنَ اِلَّا كَذِبًا ﴿۵﴾
فَلَعَلَّكَ بَاخِعٌ نَّفْسَكَ عَلٰۤی اٰثَارِهِمْ اِنْ لَّمْ یُؤْمِنُوْا بِهٰذَا الْحَدِیْثِ اَسَفًا ﴿۶﴾ اِنَّا جَعَلْنَا مَا عَلَی الْاَرْضِ زِیْنَةً لَّهَا لِنَبْلُوَهُمْ اَیُّهُمْ اَحْسَنُ عَمَلًا ﴿۷﴾ وَ اِنَّا لَجٰعِلُوْنَ مَا عَلَیْهَا صَعِیْدًا جُرُزًا ؕ﴿۸﴾ اَمْ حَسِبْتَ اَنَّ اَصْحٰبَ الْكَهْفِ وَ الرَّقِیْمِ كَانُوْا مِنْ اٰیٰتِنَا عَجَبًا﴿۹﴾ اِذْ اَوَی الْفِتْیَةُ اِلَی الْكَهْفِ فَقَالُوْا رَبَّنَاۤ اٰتِنَا مِنْ لَّدُنْكَ رَحْمَةً وَّ هَیِّئْ لَنَا مِنْ اَمْرِنَا رَشَدًا ﴿۱۰﴾
বাংলা অনুবাদ:
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর, যিনি নিজ বান্দার প্রতি কিতাব নাজিল করেছেন এবং তাতে কোনও রকমের বক্রতা রাখেননি। নাজিল করেছেন এক সরল-সঠিক গ্রন্থরূপে, মানুষকে নিজের পক্ষ থেকে এক কঠিন শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করার এবং যে সকল মুমিন সৎকর্ম করে, তাদেরকে এই সুসংবাদ দেওয়ার জন্য যে, তাদের জন্য রয়েছে উৎকৃষ্ট প্রতিদান। যাতে তারা সর্বদা থাকবে এবং সেই সকল লোককে সতর্ক করার জন্য, যারা বলে, আল্লাহ কোন সন্তান গ্রহণ করেছেন।
এ বিষয়ে কোন জ্ঞানগত প্রমাণ না তাদের নিজেদের কাছে আছে আর না তাদের বাপ-দাদাদের কাছে ছিল। এটা অতি গুরুতর কথা, যা তাদের মুখ থেকে বের হচ্ছে। তারা যা বলছে তা মিথ্যা ছাড়া কিছুই নয়। (হে নবী! অবস্থা দৃষ্টে মনে হয়) তারা (কুরআনের) এ বাণীর প্রতি ইমান না আনলে যেন তুমি আক্ষেপ করে করে তাদের পেছনে নিজের প্রাণনাশ করে বসবে। নিশ্চিত জেন, ভূপৃষ্ঠে যা-কিছু আছে আমি সেগুলোকে তার জন্য শোভাকর বানিয়েছি, মানুষকে এ বিষয়ে পরীক্ষা করার জন্য যে, কে তাদের মধ্যে বেশি ভালো কাজ করে। নিশ্চয়ই আমি ভূপৃষ্ঠে যা-কিছু আছে, একদিন তা সমতল প্রান্তরে পরিণত করব।
তুমি কি মনে কর গুহা ও রাকীমবাসীরা আমার নিদর্শনাবলির মধ্যে (বেশি) বিস্ময়কর ছিল? এটা সেই সময়ের কথা, যখন যুবক দলটি গুহায় আশ্রয় নিয়েছিল এবং (আল্লাহ তাআলার কাছে দু‘আ করে) বলেছিল, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের প্রতি আপনার নিকট থেকে বিশেষ রহমত নাজিল করুন এবং আমাদের এ পরিস্থিতিতে আমাদের জন্য কল্যাণকর পথের ব্যবস্থা করে দিন।