সিজদা অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। এর মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার প্রতি বান্দা পরিপূর্ণরূপে আনুগত্য প্রকাশ করে থাকেন। সিজদা আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম। বান্দা সিজদারত অবস্থায় দোয়া করলে তা কবুল হওয়ার সম্ভাবনা অধিক থাকে। কুরআনুল কারীমে এমন ১৪টি সিজদার আয়াত রয়েছে; যেগুলো পাঠ করলে অথবা শ্রবণ করলে কুরআনুল কারীম তেলাওয়াতকারীদের সিজদা করা ওয়াজিব। উক্ত আয়াতগুলোকে পরিভাষায় `সিজদার আয়াত’ বলা হয়।
সিজদার আয়াত সমূহ:
১ম আয়াত:
اِنَّ الَّذِیۡنَ عِنۡدَ رَبِّکَ لَا یَسۡتَکۡبِرُوۡنَ عَنۡ عِبَادَتِہٖ وَیُسَبِّحُوۡنَہٗ وَلَہٗ یَسۡجُدُوۡنَ
অর্থ: স্মরণ রেখ, যারা (অর্থাৎ ফিরিশতাগণ) তোমার রবের সান্নিধ্যে আছে, তারা তাঁর ইবাদত থেকে অহংকারে মুখ ফেরায় না এবং তাঁর তাসবীহ পাঠ করে এবং তাঁরই সম্মুখে সিজদাবনত হয়। [সূরা: আল আ’রাফ – আয়াত নং: ২০৬ ]
২য় আয়াত:
وَلِلّٰہِ یَسۡجُدُ مَنۡ فِی السَّمٰوٰتِ وَالۡاَرۡضِ طَوۡعًا وَّکَرۡہًا وَّظِلٰلُہُمۡ بِالۡغُدُوِّ وَالۡاٰصَالِ
অর্থ: আর আল্লাহকেই সিজদা করে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর সমস্ত সৃষ্টি, কেউ তো স্বেচ্ছায় এবং কেউ বাধ্য হয়ে। তাদের ছায়াও সকাল ও সন্ধ্যায় তাঁর সামনে সিজদায় লুটায়। [সূরা: আর রা’দ – আয়াত নং: ১৫]
৩য় আয়াত:
یَخَافُوۡنَ رَبَّہُمۡ مِّنۡ فَوۡقِہِمۡ وَیَفۡعَلُوۡنَ مَا یُؤۡمَرُوۡنَ
অর্থ: তারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করে, যিনি তাদের উপরে এবং তারা সেই কাজই করে, যার আদেশ তাদেরকে করা হয়। [সূরা: আন নাহল – আয়াত নং: ৫০]
৪র্থ আয়াত:
وَیَخِرُّوۡنَ لِلۡاَذۡقَانِ یَبۡکُوۡنَ وَیَزِیۡدُہُمۡ خُشُوۡعًا
এবং তারা কাঁদতে কাঁদতে থুতনির উপর লুটিয়ে পড়ে এবং এটা (অর্থাৎ কুরআন) তাদের অন্তরের বিনয় আরও বৃদ্ধি করে। [সূরা: বনী ইসরাঈল – আয়াত নং: ১০৯]
৫ম আয়াত:
اُولٰٓئِکَ الَّذِیۡنَ اَنۡعَمَ اللّٰہُ عَلَیۡہِمۡ مِّنَ النَّبِیّٖنَ مِنۡ ذُرِّیَّۃِ اٰدَمَ ٭ وَمِمَّنۡ حَمَلۡنَا مَعَ نُوۡحٍ ۫ وَّمِنۡ ذُرِّیَّۃِ اِبۡرٰہِیۡمَ وَاِسۡرَآءِیۡلَ ۫ وَمِمَّنۡ ہَدَیۡنَا وَاجۡتَبَیۡنَا ؕ اِذَا تُتۡلٰی عَلَیۡہِمۡ اٰیٰتُ الرَّحۡمٰنِ خَرُّوۡا سُجَّدًا وَّبُکِیًّا
আদমের বংশধরদের মধ্যে এরাই সেই সকল নবী, যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন। এদের কতিপয় সেই সব লোকের বংশধর, যাদেরকে আমি নূহের সাথে (নৌকায়) আরোহণ করিয়েছিলাম এবং কতিপয় ইবরাহীম ও ইসরাঈল (অর্থাৎ হযরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম)-এর বংশধর। আমি যাদেরকে হিদায়াত দিয়েছিলাম ও (আমার দীনের জন্য) মনোনীত করেছিলাম, এরা তাদের অন্তর্ভুক্ত। তাদের সামনে যখন দয়াময় আল্লাহর আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করা হত, তখন তারা কাঁদতে কাঁদতে সিজদায় লুটিয়ে পড়ত। [সূরা: মারইয়াম – আয়াত নং: ৫৮]
৬ষ্ঠ আয়াত:
اَلَمۡ تَرَ اَنَّ اللّٰہَ یَسۡجُدُ لَہٗ مَنۡ فِی السَّمٰوٰتِ وَمَنۡ فِی الۡاَرۡضِ وَالشَّمۡسُ وَالۡقَمَرُ وَالنُّجُوۡمُ وَالۡجِبَالُ وَالشَّجَرُ وَالدَّوَآبُّ وَکَثِیۡرٌ مِّنَ النَّاسِ ؕ وَکَثِیۡرٌ حَقَّ عَلَیۡہِ الۡعَذَابُ ؕ وَمَنۡ یُّہِنِ اللّٰہُ فَمَا لَہٗ مِنۡ مُّکۡرِمٍ ؕ اِنَّ اللّٰہَ یَفۡعَلُ مَا یَشَآءُ
তুমি কি দেখনি আল্লাহর সম্মুখে সিজদা করে যা-কিছু আছে আকাশমণ্ডলীতে, যা-কিছু আছে পৃথিবীতে এবং সূর্য, চন্দ্র, নক্ষত্ররাজি, পাহাড়, বৃক্ষ, জীবজন্তু ও বহু মানুষ? আবার এমনও অনেক আছে, যাদের প্রতি শাস্তি অবধারিত হয়ে আছে। আল্লাহ যাকে লাঞ্ছিত করেন তার কোন সম্মানদাতা নেই। নিশ্চয়ই আল্লাহ করেন যা তিনি চান। [সূরা: হজ্জ – আয়াত নং: ১৮]
৭ম আয়াত:
اَللّٰہُ لَاۤ اِلٰہَ اِلَّا ہُوَ رَبُّ الۡعَرۡشِ الۡعَظِیۡمِ
আল্লাহ তিনি, যিনি ছাড়া কেউ ইবাদতের উপযুক্ত নয়, তিনি মহা আরশের অধিপতি। [সূরা: নামহ – আয়াত নং: ২৬]
৮ম আয়াত:
وَاِذَا قِیۡلَ لَہُمُ اسۡجُدُوۡا لِلرَّحۡمٰنِ قَالُوۡا وَمَا الرَّحۡمٰنُ ٭ اَنَسۡجُدُ لِمَا تَاۡمُرُنَا وَزَادَہُمۡ نُفُوۡرًا
তাদেরকে যখন বলা হয়, ‘রহমান’কে সিজদা কর, তারা বলে রহমান কী? তুমি যে-কাউকে সিজদা করতে বললেই কি আমরা তাকে সিজদা করব? এতে তারা আরও বেশি বিমুখ হয়ে পড়ে। [সূরা: ফুরকান – আয়াত নং: ৬০]
৯ম আয়াত:
اِنَّمَا یُؤۡمِنُ بِاٰیٰتِنَا الَّذِیۡنَ اِذَا ذُکِّرُوۡا بِہَا خَرُّوۡا سُجَّدًا وَّسَبَّحُوۡا بِحَمۡدِ رَبِّہِمۡ وَہُمۡ لَا یَسۡتَکۡبِرُوۡنَ
আমার আয়াতসমূহে তো ঈমান আনে কেবল তারা, যারা এর দ্বারা যখন উপদেশ প্রাপ্ত হয়, তখন সিজদায় লুটিয়ে পড়ে এবং নিজ প্রতিপালকের সপ্রশংস তাসবীহ পাঠ করে। আর তারা অহংকার করে না। [সূরা: সিজদাহ – আয়াত নং: ১৫]
১০ম আয়াত:
قَالَ لَقَدۡ ظَلَمَکَ بِسُؤَالِ نَعۡجَتِکَ اِلٰی نِعَاجِہٖ ؕ وَاِنَّ کَثِیۡرًا مِّنَ الۡخُلَطَآءِ لَیَبۡغِیۡ بَعۡضُہُمۡ عَلٰی بَعۡضٍ اِلَّا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا وَعَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ وَقَلِیۡلٌ مَّا ہُمۡ ؕ وَظَنَّ دَاوٗدُ اَنَّمَا فَتَنّٰہُ فَاسۡتَغۡفَرَ رَبَّہٗ وَخَرَّ رَاکِعًا وَّاَنَابَ
দাঊদ বলল, সে তার দুম্বাদের সাথে মেলানোর জন্য তোমার দুম্বাটিকে দাবি করে নিশ্চয়ই তোমার উপর জুলুম করেছে। যাদের মধ্যে অংশীদারিত্ব থাকে, তাদের অনেকেই একে অন্যের প্রতি জুলুম করে থাকে। ব্যতিক্রম কেবল তারা, যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে। কিন্তু তারা বড় কম। তখন দাঊদ উপলব্ধি করল যে, মূলত আমি তাকে পরীক্ষা করেছি। কাজেই সে তার প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করল এবং সিজদায় লুটিয়ে পড়ল আর আল্লাহর অভিমুখী হল। [সূরা: ছোয়াদ – আয়াত নং: ২৪]
১১তম আয়াত:
فَاِنِ اسۡتَکۡبَرُوۡا فَالَّذِیۡنَ عِنۡدَ رَبِّکَ یُسَبِّحُوۡنَ لَہٗ بِالَّیۡلِ وَالنَّہَارِ وَہُمۡ لَا یَسۡـَٔمُوۡنَ
তারপরও যদি তারা (অর্থাৎ কাফেরগণ) অহমিকা প্রদর্শন করে, তবে (তা করতে থাকুক) তোমার প্রতিপালকের কাছে যারা (অর্থাৎ যেই ফেরেশতাগণ) আছে, তারা রাত-দিন তাঁর তাসবীহ পাঠ করে এবং তারা ক্লান্তি বোধ করে না। [সূরা: হা-মীম সিজদাহ – আয়াত নং: ৩৮]
১২তম আয়াত:
فَاسۡجُدُوۡا لِلّٰہِ وَاعۡبُدُوۡا
এখন (ও সময় আছে) আল্লাহর সামনে ঝুঁকে পড় এবং তাঁর বন্দেগীতে লিপ্ত হও। [সূরা: নাজম – আয়াত নং: ৬২]
১৩তম আয়াত:
وَاِذَا قُرِئَ عَلَیۡہِمُ الۡقُرۡاٰنُ لَا یَسۡجُدُوۡنَ
এবং যখন তাদের সামনে কুরআন পড়া হয়, তখন সিজদা করে না? [সূরা: ইনশিকাক – আয়াত নং: ২১]
১৪তম আয়াত:
کَلَّا ؕ لَا تُطِعۡہُ وَاسۡجُدۡ وَاقۡتَرِبۡ
সাবধান! তার আনুগত্য করো না এবং সিজদা কর ও নিকটবর্তী হও। [সূরা: আলাক – আয়াত নং: ১৯]
সিজদার আয়াতে সিজদা দেওয়ার নিয়ম:
সিজদার আয়াত পাঠ করার পর সিজদা দেওয়ার নিয়ম হলো: পাক-পবিত্র অবস্থায় জায়নামাজে কেবলামুখী দাড়িতে হবে। অতঃপর হাত না উঠিয়ে শুধু ‘আল্লাহু আকবর’ বলে সরাসরি সিজদায় চলে যেতে হবে। অতঃপর সিজদারত অবস্থায় তিন বার ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আজীম’ পাঠ করতে হবে। এরপর ‘আল্লাহু আকবর ‘ বলে দাঁড়াবে হবে। উল্লেখ্য যে, এতে কোনো তাশাহহুদ বা সালাম নেই। এভাবে সিজদাহর আয়াত পাঠ করলে সিজদা দিতে হয়।
তবে, কেউ যদি একই বৈঠকে একাধিক বার সিজদাহ আয়াত তেলাওয়াত করে অথবা শ্রবণ করে। এ ক্ষেত্রে একই আয়াতের পুনরাবৃত্তি ঘটুক বা ভিন্ন ভিন্ন আয়াতের। তাহলে একটি মাত্র সিজদাহ দিতে হবে।
অনুরূপভাবে কেউ যদি নামাজরত অবস্থায় নামাজের বাইরে কাউকে সিজদাহর আয়াত তেলাওয়াত করতে শুনে; তাহলে নামাজরত ব্যক্তির সিজদা দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রথমে সে নিজের নামাজ সম্পন্ন করবে। অতঃপর উপরোল্লিখিত নিয়মে সিজদা আদায় করবে।
শেষ কথা,
উক্ত প্রবন্দে কুরআনুল কারীমে বর্ণিত সিজদার আয়াত সমূহ ও সিজদা দেওয়ার নিয়ম নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আশা করছি; আপনারা উপকৃত হতে পারবেন।