হযরত সালমান ফারসী রা. ছিলেন একজন বিখ্যাত সাহাবী। তিনি ইস্পাগানের ‘জাই’ নামক স্থানে জন্মগ্রহণ করেন। ইসলাম গ্রহণের পূর্বে তার নাম ছিল মাবিহ ইবনে বুজখ্শান। প্রথমে তিনি অগ্নিপূজারী ছিলেন। এরপর সত্য ধর্মের অনুসন্ধানে তিনি তার ঘর-বাড়ি ত্যাগ করে খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করেন। পরিশেষে তিনি ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় নেন।
সালমান ফারসী রা. -এর পরামর্শে রাসুল সা. আহজাব যুদ্ধে খন্দক খনন করেন। তিনি নিজেই নিজের ইসলাম ধর্ম গ্রহণের ঘটনা উল্লেখ করেন। হাদিসে এর বিস্তারিত বিবরণ পায়া যায়। শামায়েলে মুহাম্মাদী যা শামায়েলে তিরমিজী নামেও প্রসিদ্ধ। গ্রন্থটিতে সালমান ফারসী রা. এর ইসলাম গ্রহণের হাদিসটি বর্ণেত রয়েছে।
হাদিসের আলোকে সালমান ফারসী রা এর ইসলাম
سمعت ابي بريدة، يقول: جاء سلمان الفارسي الى رسول الله صلى الله عليه وسلم، حين قدم المدينة بمايدة عليها رطب، فوضعها بين يدي رسول الله صلى الله عليه وسلم، فقال: يا سلمان ما هذا؟ فقال: صدقة عليك، وعلى اصحابك، فقال: ارفعها، فانا لا ناكل الصدقة، قال: فرفعها، فجاء الغد بمثله، فوضعه بين يدي رسول الله صلى الله عليه وسلم، فقال: ما هذا يا سلمان؟ فقال: هدية لك، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم لاصحابه: ابسطوا ثم نظر الى الخاتم على ظهر رسول الله صلى الله عليه وسلم، فامن به، وكان لليهود فاشتراه رسول الله صلى الله عليه وسلم، بكذا وكذا درهما على ان يغرس لهم نخلا، فيعمل سلمان فيه، حتى تطعم، فغرس رسول الله صلى الله عليه وسلم، النخل الا نخلة واحدة، غرسها عمر فحملت النخل من عامها، ولم تحمل نخلة، فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: ما شان هذه النخلة؟ فقال عمر: يا رسول الله، انا غرستها، فنزعها رسول الله صلى الله عليه وسلم، فغرسها فحملت من عامها
আবু আম্মার হুসায়ন ইবন হুরায়ছ খুযাঈ (র) … আবদুল্লাহ ইবন বুরায়দা তাঁর পিতা বুরায়দা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর মদিনায় হিজরতের পর একদা সালমান ফারসী (রা.) একটি পাত্রে কিছু কাঁচা খেজুর নিয়ে এলেন এবং তিনি তা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সামনে রাখলেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন : হে সালমান! এ কিসের খেজুর? (অর্থাৎ হাদিয়া না সদাকা?) তিনি বললেন, আপনার ও আপনার সাহাবাদের জন্য সাদকা। তখন তিনি (রাসূলুল্লাহ (ﷺ)) বললেন : এগুলো নিয়ে যাও। আমরা সাদকা খাই না। তিনি (হাদিস বর্ণনাকারী) বলেন : তিনি তা তুলে নিলেন।
পরের দিন তিনি অনুরূপ খেজুর নিয়ে আসলেন এবং রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সামনে পেশ করেন। তখন তিনি বললেন : হে সালমান! এ কিসের খেজুর? তিনি বললেন, আপনার জন্য হাদিয়া। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর সাহাবীদের বললেন: তোমরা হাত প্রসারিত কর (অর্থাৎ হাদিয়া গ্রহণ কর)।
এরপর সালমান (রা.) রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর পৃষ্ঠদেশে মোহরে নবুওয়াত দেখে তাঁর প্রতি ঈমান আনলেন।
(হাদিস বর্ণনাকারী বলেন), সালমান (রা.) জনৈক ইহুদীর গোলাম ছিলেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ তাকে এত এত দিরহামের বিনিময়ে এবং এই শর্তে খরিদ করেন যে, সালামন তাঁর ইয়াহুদী মুনিবের জন্য একটি খেজুর বাগান করে দেবে এবং তাতে ফল আসা পর্যন্ত তত্ত্বাবধান করতে থাকবে।
রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর পবিত্র হাতে একটি চারা ব্যতীত সবগুলো রোপণ করলেন এবং একটি চারাগাছ উমর (রা.) রোপণ করেছিলেন। ঐ বছরই সকল গাছে ফল আসল কিন্তু একটি গাছে খেজুর ধরলো না। তখন রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বললেন : এ গাছটির এ অবস্থা কেন? উমর (রা.) বললেন : ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমি সেটি রোপণ করেছিলাম। তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ঐ চারাটি পুনঃ নিজ হাতে তা রোপণ করলেন। ফলে সে বছরেই তাতে খেজুর ধরলো।
[ত্বহাবী শরীফ: ২৯৭৭-৭৮]
শেষ কথা,
সালমান ফারসী রা. সত্য দ্বীন তালাশে দেশ থেকে দেশ, শহর থেকে শহর ঘুরিয়ে বেড়িয়েছেন। এটি সত্য দ্বীনের উপর অবিচল থাকার আগ্রহের একটি উত্তম নিদর্শন। যা পরবর্তী উম্মাহর প্রতি দ্বীনি বিষয়ে শিথিলতা না করার বিরাট একটি বার্তা বহন করে।