সহীহ মুসলিম যা হাদিস শাস্ত্রের বিখ্যাত একটি কিতাব। যা ইমাম মুসলিম ইবনুল হাজ্জাজ (রহ.) তার তিন লক্ষ শ্রুত হাদিস থেকে অনেক যাচাই-বাছাই করে সংকলন করেন। ইমাম মুসলিম (রহ.) এ প্রসঙ্গে বলেন: “আমি তিন লক্ষ শ্রুত হাদিস থেকে অনেক যাচাই-বাছাই ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এই সহীহ মুসলিম সংকলন করেছি।” তারতীরের ক্ষেত্রে সহীহ মুসলিমের তারতীব সহীহ বুখারীর চেয়ে সুন্দর।
মর্যাদার দিক থেকে সহীহ বুখারীর পরেই সহীহ মুসলিমের অবস্থান। ইমাম মুসলিম (রহ.) ছিলেন ইমাম বুখারী (রহ.)-এর ছাত্র এবং জগৎ বিখ্যাত মুহাদ্দিস। সকল উলামায়ে কেরাম এটা এক বাক্যে স্বীকার করেন। তাঁর সংকলিত কিতাব সকল উলামায়ে কেরামের নিকট গ্রহণযোগ্য।
সহীহ মুসলিমের পূর্ণ নাম:
যদিও কিতাবটিকে ‘সহীহ মুসলিম’ নামে প্রসিদ্ধ। তবে এর রয়েছে এক দীর্ঘ নাম । তা হচ্ছে-
اَلْمُسْنَدُ الصَّحِيحُ الْمُخْتَصَرُ مِنَ السُّنَنِ بِنَقْلِ الْعَدْلِ عَنِ الْعَدْلِ عَنْ رَسُولِ الله صلى الله عليه وسلم .
(আল মুসনাদুস সহীহুল মুখতাসারু মিনাস সুনানি বি নাকলিল আদলি আনির আদলি আন রাসুলিল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )
এছাড়াও সহীহ মুসলিম-এর একাধিক নাম রয়েছে। যেগুলো হচ্ছে:
১. ‘সহীহ মুসলিম’ এই নামটি প্রসিদ্ধ। আর এটাই বাস্তবতার অধিক নিকটবর্তী।
২. ‘اَلْمُسْنَدُ الصَّحِيحُ ‘ (আল মুসনাদুস সহীহ)।
৩. ‘اَلْمُسْنَدُ ‘ (মুসনাদ)।
৪. الجَامِعُ (আল-জামে)।
সংকলনের কারণ ও ইতিহাস :
সহীহ মুসলিমের সংকলনের ইতিহাস সম্পর্কে মুকাদ্দিমায়ে মুসলিমে আলোচনা করা হয়েছে । সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে; ইমাম মুসলিম রহ.-এর এক শিষ্য কিতাবটি সংকলনের আবেদন করেন। সেই আবেদনের প্রেক্ষাপটে তিনি সহীহ মুসলিম কিতাবটি সংকলন করেন ।
সহীহ মুসলিম সম্পর্কে ইমাম মুসলিম (র.)-এর বক্তব্য :
ইমাম মুসলিম (র.)-এর সুদীর্ঘ পনেরো বছরের কঠোর পরিশ্রম ও সাধনার ফসল হচ্ছে মুসলিম শরীফ । ইমাম মুসলিম (র.) বলেন- “আমি তিন লক্ষ শ্রুত হাদিস থেকে অনেক যাচাই-বাছাই ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এই মুসলিম সংকলন করেছি।”
হাদিস গ্রহণে ইমাম মুসলিম (র.)-এর শর্তাবলি :
ইমাম মুসলিম (র.) তাঁর সহীহ মুসলিমে হাদিস গ্রহণের ক্ষেত্রে উল্লেখিত শর্তারোপ করেছেন:
১.হাদিসের সনদসূত্র অবশ্যই ‘মুত্তাসিল’ তথা পরস্পর সংযুক্ত ও অবিচ্ছিন্ন হবে, একজন ‘ছিকাহ’ ব্যক্তি অপর ‘ছিকাহ’ ব্যক্তির নিকট থেকে বর্ণনা করবেন, প্রথম হতে শেষ পর্যন্ত এ অবস্থাই হবে এবং এটি ‘শায’ ও ইল্লত তথা দোষত্রুটি থেকে মুক্ত হবে ।
২. رَاوِيْ ও مَرْوِي عَنْهُ رَاوِيْ উভয়েই সমসাময়িক হতে হবে ।
৩. কোনো রাবী শায তথা অজ্ঞাত হবে না। তাকে সর্বজন-পরিচিত হতে হবে ।
৪. মূল হাদিসে কোনো দোষত্রুটির অস্তিত্ব থাকবে না।