ভাষা সাহিত্যের পূর্ণতা লাভে অনুবাদমূলক সাহিত্যের ভূমিকা অপরিসীম। ‘সমৃদ্ধতর নানা ভাষা থেকে বিচিত্র নতুন ভাব ও তথ্য সঞ্চয় করে নিজ নিজ ভাষার বহন ও সহন ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলাই অনুবাদ সাহিত্যের প্রাথমিক প্রবণতা’ ১ ভাষার স্বকীয়তা রক্ষার্থে ব্যক্তকরণ সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হয়। আর তাতে সহায়তা করে অনুবাদকর্ম।
পৃথিবীতে কোনো ভাষায় স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। প্রতিটি ভাষা অন্য ভাষার দ্বারা প্রভাবিত হয় এবং অন্য ভাষাকে করে প্রভাবিত। ভিন্ন ভাষা থেকে বিপুল শব্দ গ্রহণ করা ভাষার স্বভাব। এই গ্রহণ-বর্জন প্রতিটি ভাষাতেই হয়ে থাকে।
মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের বিরাট একটি অংশ দখলে রেখেছে অনুবাদ সাহিত্য। সংস্কৃত, আরবি, ফারসি ও হিন্দি উৎসমূল থেকে বাংলায় অনূদিত হয় বহু গ্রন্থ। ধর্মীয় গ্রন্থের পাশাপাশি নাটক, প্রেমাখ্যান, শোককাব্য অনুদূত হয় বাংলায়। তবে, সে সময় ধর্মীয় ভাষা থেকে বঙ্গানুবাদের বিষয়টি ছিল একেবারেই নতুন। ফলে সমাজের দৃষ্টিতে বিবেচিত হতো গুরুতর অপরাধ ও গুনাহের কাজ হিসেবে। বিষয়টি মধ্যযুগের কবি শেখ মুত্তালিব এবং কবি মুজাম্মিলের লেখায় আঁচ পাওয়া যায়।
কবি শেখ মুত্তালিব লেখেন:
আরবীতে সকলে ন বুঝে ভালো মন্দ
তে কারণে দেশী ভাষে রচিলু প্রবন্ধ
মুছলমানী শাস্ত্রকথা বাঙ্গালা করিলু
বহু পাপ হৈল মোর নিশ্চয় জানিলু
কিন্তু মাত্র ভরসা আছয়ে মনান্তরে।
বুঝিয়া মুমিন দোয়া করিব আমারে
মুমিন আশীর্বাদে পুণ্য হইহেক
অবশ্য গফুল আল্লা পাপ খেমিবেক
কবি মুজাম্মিল লিখেছেন:
আরবী ভাষার লোকেঁ ন বুঝে কারণ
সভানে বুঝিতে কৈলুঁ পয়ার রচন
যে বলে বলৌক লোকেঁ করিলুং লিখন
ভালে ভাল মন্দে মন্দ যাত্র খণ্ডন