আল্লাহ তায়ালা যুগে যুগে অসংখ্য অগণিত নবী-রাসুল প্রেরণ করেছেন তার দ্বীনকে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। হযরত আদম আ. থেকে হযরত মুহাম্মদ সা. পর্যন্ত বহু নবী-রাসুল তিনি দুনিয়ায় প্রেরন করেন; যাদেরকে তিনি তার দ্বীন প্রচারের কাজে মনোনীত করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় আল্লাহ তায়ালা হযরত মুহাম্মদ সা. একটি পূর্নাঙ্গ জীবনব্যবস্থাসহ দুনিয়ায় প্রেরণ করেন।
হযরত মুহাম্মদ সা.-এর জন্ম ও শৈশবকাল:
হযরত মুহাম্মদ সা. ৫৭১ খৃষ্টাব্দের ২০শে এপ্রিল মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন। অধিকাংশ হাদিস বিশারদগণের মতে তিনি ৮ই রবিউল আওয়ালে জন্ম গ্রহণ করেন। সাইয়্যিদা আমিনার ঔরসে মহানবী শিশু নবী মুহাম্মদ সা.-এর জর্ম হলে দাদা আব্দুল মুত্তালিব ভীষণ আনন্দিত হোন এবং ‘মুহাম্মদ’ নামে নামকরণ করেন।
পিতার ইন্তেকাল:
হযরত মুহাম্মদ সা.-এর পিতার নাম: আব্দুল্লাহ। রাসুল সা. মায়ের গর্ভে থাকাকালে আব্দুল্লাহ শাম থেকে বাণিজ্যিক কাফেলার সাথে প্রত্যাবর্তনকালে ইন্তেকাল করেন। মদিনায় আব্দুল্লাহকে নাজ্জার গোত্রের নিকটে দাফন করা হয়।
দুধমাতা হালিমা ও তায়েফ গমন:
আরবদের সাধারণ রীতি; তারা তাদের সন্তানদেরকে শৈশবে গ্রামে পাঠিয়ে দিতো। যেন শিশুরা শক্তিশালী দেহ এবং বিশুদ্ধভাষী হতে উঠতে পারে। কেননা, বিভিন্ন শহর থেকে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে আগত লোকদের কারণে শহরের ভাষা মিশ্রিত ভাষার রূপ ধারণ করেছিল।
হযরত মুহাম্মদ সা. ও এর ব্যতিক্রম ছিলেন না। তিনি শৈশবের বড় একটি অংশ বনু সাদ গোত্রে কাটান। অতঃপর তিনি তাঁর মায়ের কোলে ফিরে আসেন।
বক্ষ বিদারণের ঘটনা
দুধ মাতা হালিমা সাদিয়া রা. মুহাম্মদ সা. কে নিয়ে হঠাৎ মক্কায় আগমন করেন। হালিমা সাদিয়া রা.-এর হঠাৎ আগমন দেখে আমেনা চিন্তিত হোন এবং বিস্ময়ের সাথে জিজ্ঞেস করেন: ‘মুহাম্মদ (সা.)-এর কি হয়েছে?’
হালিমা সাদিয়া রা. শান্ত ভাবে বলেন: তাঁর কিছু হয়নি। তবে আমি তাকে আপনার কাছে অধিক নিরাপদ মনে করি।
তিনি আবার জিজ্ঞাসা করেন: কি হয়েছে তাঁর?
হালিমা সাদিয়া রা. বলেন: তাঁর সাথে আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটেছে; যা আমাকে আপনার কাছে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য করেছে।
একদা আমি আমার স্বামীর পাশে বসে ছিলাম। হঠাৎ আমাদের ছেলে চিৎকার করতে করতে দৌড়ে এসে বলল: আমার ভাইকে বাঁচাও! মুহাম্মদকে বাঁচাও!
অতঃপর যখন আমরা ঘটনা সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম সে আমাদেরকে বলল: সাদা পোশাক পরিহিত দুই ব্যক্তি তাকে ধরে মাটিতে শুইছে দিয়েছে। অতঃপর তাঁর বক্ষ বিদীর্ণ করে তা হতে কিছু বের করছে।
এ কথা শুনা মাত্রই আমরা তাঁর নিকটে দৌড়ে গিয়ে দেখলাম: ভয়ে তাঁর চেহারা বিবর্ণ হয়ে গিয়েছে। আমরা তাকে শান্ত এবং ভয় দূর করতে লাগলাম এমনকি এক পর্যায়ে তাঁর ভয় কেটে গেলো।
এ কথা শুনে সাইয়্যিদা আমিনা হযরত মুহাম্মদ সা. এর কাছে গিয়ে তাকে ভালোবাসায় আগলে নিয়ে বলেন: আল্লাহর শপথ! আমার ছেলে বরকতময়। আমি তাঁর মাঝে বহু শুভলক্ষণ দেখেছি; যা আমার মনকে ভরে দেয়।
হযরত হালিমা সাদিয়া রা. হযরত মুহাম্মদ সা.কে তাঁর মায়ের কাছের কাছে রেখে তার গোত্রে ফিরে যান।
▶▶ সাহাবীদের জীবনী পড়ুন
মায়ের মৃত্যু:
হযরত সাইয়্যিদা আমিনা হযরত মুহাম্মদ সা. কে নিয়ে তাঁর বাবার মামার বংশীয় লোকদের সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে মদিনায় সফরের ইচ্ছা পোষণ করেন। শিশু মুহাম্মদ সা.-এর আনন্দ বেড়ে গেল; যখন তিনি তাঁর মায়ের মমতা, মায়া, স্নেহ ও ভালোবাসা উপলব্ধি করতে লাগলেন। বিরান মরুভূমির কষ্টময়ী সফরে তিনি তাঁর মা থেকে স্বল্প সময়ের জন্যও বিচ্ছিন্ন হননি। কষ্টময় দীর্ঘ সফর শেষে অবশেষে মদিনায় বনী নাজ্জারে পৌঁছেন।
সেখানে সকলেই তাকে সাদরে গ্রহণ করে নিল এবং আগমন উপলক্ষ্যে অভ্যর্থনা জানালো। তিনি সেখানে তাঁর পিতার বিকল্প পেয়ে যান; যিনি জন্মের পূর্বেই দুনিয়া থেকে বিদায় গ্রহণ করেন। মহা আনন্দে তিনি মদিনাতে বেশ কিছু দিন কাটান। অবশেষে আপন বাস ভূমি মক্কায় প্রত্যাবর্তনের সময় ঘনিয়ে এলো।
সাইয়্যিদা আমিনাও মক্কায় ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু পথিমধ্যে তিনিও রাসুল সা. কে একা রেখে পরকালে পাড়ি জমান। মা হারানোর পর মুহাম্মদ সা. মক্কা ফিরে আসেন। মায়ের মৃত্যুর শোকে তিনি ক্রন্দন করতেন। নিঃস্বতা তার অন্তরে দুঃখ, কষ্টের প্রভাব ফেলতে লাগল।
দাদা ও চাচার তত্ত্বাবধানে মুহাম্মদ সা. :
মায়ের মৃত্যুর পর দাদা আব্দুল মুত্তালিব তাঁর থেকে নিঃস্বতার কষ্ট দূর করতে চাইলেন। তিনি তাকে ভালোবাসা, স্নেহ, মায়া-মমতায় ঢেকে নেন। তিনি সর্বদা তাকে সাথে রাখতেন। এমনকি কুরাইশদের নেতৃস্থানীয়দের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকেও তাকে সাথে নিয়ে যেতেন।
কিন্তু কাল হযরত মুহাম্মদ সা.-এর জন্য নতুন বিপদ গোপন করছিল। রাসুল সা. যখন আট বছর বয়সে উপনীত হন, তখন তাঁর দাদা পর পাড়ি জমান। তিনি নতুনভাবে ব্যথিত হন। নতুনভাবে দুঃখ-কষ্ট তাঁর অন্তরে জায়গা করে নেয়।
আব্দুল মুত্তালিব এর মৃত্যুর পর হযরত মুহাম্মদ সা. তাঁর চাচা আবু তালেবের তত্ত্বাবধানে থাকতে লাগলেন। আবু তালেব, যিনি নিঃস্ব এবং অসচ্ছল ছিলেন; আল্লাহ তায়ালা এই বরকতময় এতিমের তত্ত্বাবধানের ফলে তাঁর অর্থ সম্পদে বরকত দান করেন।
মহানবীর সিরিয়া সফর:
হযরত মুহাম্মদ যখন ১৮ বছর বয়সে উপনীত হন তাঁর চাচা ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে শাম অর্থাৎ সিরিয়ায় ভ্রমণের ইচ্ছা পোষণ করেন। আবু তালেব তাঁর প্রতি স্নেহশীল হন এবং তাকে সাথে নিয়ে শামের উদ্দেশ্যে রওনা হন। এটিই ছিল হযরত মুহাম্মদ সা.-এর শামের উদ্দেশ্যে প্রথম সফর।
আবু তালেব হযরত মুহাম্মদ সা. কে সঙ্হে নিয়ে শামের উদ্দেশ্যে রওনা হোন। পথিমধ্যে ব্যবসায়িক কাফেলা একটি গির্জার পাশে যাত্রাবিরতি দিলে তাদের নিকট বুহাইরা নামক একজন পাদ্রী আগমন করেন। তিনি তাদেরকে মক্কার অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন এবং নিকটবর্তী সময়ে একজন নবীর আবির্ভাব হওয়ার সুসংবাদ প্রদান করেন।
যখন বুহাইরা হযরত মুহাম্মদ সা. কে দেখেন, তখন তিনি তাঁর মাঝে কিছু আলামত দেখতে পান; যা পূর্ববর্তী পবিত্র কিতাবগুলোতে লিপিবদ্ধ রয়েছে এবং বুঝতে পারেন যে, তিনিই প্রতিশ্রুত নবী। তিনি লোকদেরকে তাঁর অভিভাবক সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেন। লোকেরা তাকে তাঁর চাচার ব্যাপারে সংবাদ প্রদান করেন।
বুরাইরা রাসুল সা. এর চাচা আব্দুল মুত্তালিবকে লক্ষ্য করে বলেন: এই ছেলে উঁচু মর্যাদার অধিকারী হবেন। তিনি তাকে মক্কায় ফেরত পাঠানোর উপদেশ দেন এবং ইহুদিদের থেকে তাকে নিরাপদ রাখতে বলেন। শাম সফর শেষে রাসুল সা. মক্কায় ফিরে আসেন।
হিলফুল ফুজুল গঠনে মহানবী সা.:
মুহাম্মদ সা. তখন ২০ বছর বয়সে উপনীত হন। হঠাৎ একদিন মক্কার নিরবতা এবং শান্তি; ভয়ংকর ও রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের রূপ নিল। সেই সময়ে মক্কার বিপুল সংখ্যক লোককে এর বলির শিকার হতে হয়েছিল।
কতিপয় গোত্রে যুদ্ধ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল এবং প্রায় সমস্ত আরব উপজাতিকে গ্রাস করে নিল।
কুরাইশগণ যুদ্ধরত দলগুলোর মধ্যে পুনর্মিলন এবং ঝগড়া-বিবাদ মিমাংসা করার জন্য আরবদের মধ্যে একটি নতুন জোটের আহ্বান জানালেন। সেই জোটের নাম ছিল: ‘হিলফুল ফুযুল’।
মক্কার নেতৃবৃন্দ এবং যুদ্ধরত গোত্রের প্রধানগণ আব্দুল্লাহ ইবনে জুদআন এর বাড়িতে সমবেত হল। আরব গোত্রগুলোর মধ্য থেকে উপস্থিত লোকেরা প্রতিজ্ঞা করল যে, তারা মক্কার অধিবাসী এবং অন্যদেরকে নির্যাতিত হতে দিবে না। কেউ নির্যাতিত হলে তাকে সাহায্য করবে এবং তার থেকে জুলুম প্রতিহত করবে এবং জালেম থেকে তার হক এনে দিবে।
যে সেতুবন্ধন কুরাইশ নেতৃবর্গ এই নতুন সংঘের মাধ্যমে তৈরি করে দিলেন তাতে মক্কাবাসী আনন্দিত হল। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম তাতে তাঁর চাচাদের সাথে উপস্থিত ছিলেন এবং তিনি বাকি জীবন এ বিষয়টি নিয়ে গর্ব করতেন। কেননা হিলফুল ফুজুল গঠন ছিল পরস্পর সাহায্য-সহযোগিতা, নিরাপত্তা ও শান্তির বহিঃপ্রকাশ।
বিবাহ বন্ধন:
যখন মহানবী সা. পঁচিশ বছর বয়সে উপনীত হন, তখন চাচা মহানবী সা. কে ব্যবসার নিয়োজিত হওয়ার প্রস্তাব দেন। চাচা আবু তালেব মক্কার সবচেয়ে সম্মানিতা, সম্পদশালী মহিলা খাদিজা রা.-এর অর্থ সম্পদ ব্যবসায়িক কাজে লাগানোর ব্যবস্থা করেন।
মুহাম্মদ সা. খাদিজা রা.-এর একটি বিশাল বাণিজ্যিক কাফেলা নিয়ে শামের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েন। সফরে খাদিজা রা.-এর ক্রীতদাস ‘মায়সারা’ সফরে তাঁর সঙ্গী হলেন। রাসুল সা. এর উত্তম আদর্শ, নীতি-নৈতিকতা ও বিনয়িতা দেখে তাঁর প্রতি আগ্রহ বেড়ে যায়।
মায়সারা তার মনিবা খাদিজাকে মুহাম্মাদ সা.-এর নৈতিকতা ও বিশ্বস্ততা সম্পর্কে যা শুনেছেন এবং দেখেছেন, সে সম্পর্কে সংবাদ দেন। মায়সারার কথা খাদিজার আত্মার উপর দারুণ প্রভাব ফেলে। ফলে মুহাম্মদ সা.-এর শ্রেষ্ঠত্ব ও উত্তম আদর্শে তিনি প্রভাবিত হন।
যেহেতু খাদিজা রা. বিধবা ছিলেন তিনি রাসুল সা.-এর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করলেন। এমনকি একপর্যায়ে তিনি রাসুল সা.-এর নিকট তাঁর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার প্রতি আগ্রহ জানার জন্য প্রস্তাব পাঠান।
হযরত মুহাম্মদ সা. এ বিষয়ে তাঁর চাচার সাথে পরামর্শক্রমে প্রস্তাবে রাজি হন। হযরত মুহাম্মদ সা. তাঁর চাচাদের নিয়ে খাদিজা রা.-এর গৃহে উপস্থিত হন এবং সেখানে বিবাহের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হয়। বিবাহের খুতবা চাচা আবু তালেব পাঠ করেন এবং তাতে রাসুল সা.-এর উত্তম গুণাবলিগুলো তুলে ধরেন।
হযরত মুহাম্মদ সা.-এর স্ত্রীদের নাম:
উম্মাহাতুল মুমিনীন বা রাসুল সা.-এর পবিত্র স্ত্রীগণ হলেন: ১১ জন। তাদের মধ্যে হযরত আয়েশা রা. রাসুল (সা.) এর সবচেয়ে প্রিয় ছিলেন।
রাসুল (সা.)-এর ১১ জন স্ত্রীর নাম:
১. খাদিজা (রা.)
২, সাওদা (রা.)
৩. আশেয়া (রা.)
৪. হাফসা (রা.)
৫. যয়নব বিনতে খুজাইমা (রা.)
৬. উম্মে সালামা (রা.)
৭. যয়নব বিনতে জাহাশ (রা.)
৮. জুওয়াইরিয়া (রা.)
৯. উম্মে হাবিবা (রা.)
১০. সফিয়্যা (রা.)
১১. মায়মুনা (রা.)
রাসুল সা.-এর স্ত্রীগণের মধ্যে সর্বপ্রথম ইন্তেকাল করেন হযরত খাদিজা রা.। তিনি রাসুল সা.-এর সর্বপ্রথম স্ত্রী ছিলেন। হযরত খাদিজা রা. জীবিত থাকাকালে রাসুল সা. দ্বিতীয় কোনো বিয়েতে আবদ্ধ হন নি।
হযরত মুহাম্মদ সা.-এর উপর ওহীর সূচনা:
হযরত মুহাম্মদ সা. একাকিত্ব এবং ইবাদত করা পছন্দ করতেন। হেরা গুহায় নিজেকে নির্জন রেখে ইবাদতে মগ্ন থাকতেন। নিদ্রাহীন রাত-দিন সেখানে কাটাতেন। যখন গুহায় ছিলেন, হঠাৎ একজন ব্যক্তিকে দেখতে পান। এতে তাঁর মনে ভয় ও আতঙ্কের সঞ্চার হয়। তিনি তো আর কেউ নন, বরং আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে প্রেরিত স্বয়ং জিব্রাইল আ.।
জিব্রাইল আ. তাকে জড়িয়ে ধরে বললেন: “পড়ুন।”
হযরত মুহাম্মদ সা. বললেন: ‘আমি পড়তে জানি না।’
জিব্রাইল তাঁর কাছে পুনরাবৃত্তি করেন। তিনি তাকে বললেন: আমি কী পড়বো?
জিব্রাইল আ. বলেন: “আপনার পালনকর্তার নামে পড়ুন যিনি সৃষ্টি করেছেন।”
হযরত মুহাম্মদ সা. ভয় পেলেন এবং দ্রুত বাড়িতে ফিরে গেলেন। হযরত মুহাম্মদ সা. তাঁর স্ত্রী খাদিজার ঘরে প্রবেশ করলেন। কাঁপতে কাঁপতে দ্রুত বিছানায় শুয়ে পড়লেন এবং তাকে ঢেকে দিতে বললেন। খাদিজা তাকে ঢেকে দেন। ফলে ভয়-ভীতি দূর হয়ে গেল। তিনি খাদিজা রা.-এর কাছে তাঁর সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনার বিবরণ দিলেন। তারপর তিনি তাকে তাঁর সাথে তার চাচাতো ভাই ওয়ারাকা বিন নাওফালের কাছে নিয়ে গেলেন। তিনি তাওরাতের পণ্ডিত ছিলেন।
ওয়ারাকা মুহাম্মদ সা.-এর দিকে দীর্ঘ সময় ধরে তাকিয়ে রইলেন। তারপর মৃদু কণ্ঠে বললেন যে, তিনি ফেরেশতা জিব্রাইল যাকে আল্লাহ মূসা এবং ঈসা আ.-এর কাছে পাঠিয়েছিলেন। অতঃপর তিনি আকাশের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন। এরপর বলেন: হায়! আমি যদি শক্তিশালী যুবক হতাম, তাহলে আপনাকে আপনার দাওয়াতী কাজে সাহায্য করতাম এবং বিপদাপদে রক্ষা করতাম। এরপর থেকে হযরত মুহাম্মদ সা. জিব্রাইল আ. এর আগমনের অপেক্ষায় গুহায় বারবার যেতেন।
মক্কায় ইসলামের দাওয়াত:
হযরত মুহাম্মদ সা. লোকদেরকে গোপন ইসলামের দাওয়াত দিতে লাগলেন। প্রথম যুগের মুসলমানেরা গোপনে আরকাম বিন আবু আরকামের গৃহে সমবেত হতেন। ইসলামের জ্যোতি মক্কায় ছড়িয়ে পড়ল। ফলে, কুরাইশরা তাদের পূর্ব পুরুষদের ধর্মের বিপরীত নতুন এই ধর্মের বিপদ অনুভব করল। তাই তারা নবী সা.-এর প্রতি বিশ্বাসী প্রত্যেকের উপর অত্যাচার করতে লাগল।
প্রাথমিক যুগের মুসলমানগণ আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে জন্য সমস্ত ধরনের যন্ত্রণা ও কষ্ট সহ্য করেছিলেন। নবী সা. তিন বছর যাবত মানুষকে ইসলামের দিকে গোপনে আহ্বান করতে থাকেন। এক পর্যায়ে আল্লাহ তায়ালা তাকে প্রকাশ্যে ইসলামের প্রদি আহ্বান করার আদেশ দেন।
মক্কায় ইসলামের প্রকাশ্যে দাওয়াত:
হযরত মুহাম্মদ সা. তিন বছর গোপনে ইসলামের দাওয়াত দেন এবং তাঁর দাওয়াতে মুমিনদের সংখ্যা দিন দিন বাড়তে থাকে। একদিন জিব্রাইল আ. নবী সা.-এর নিকট আগমন করেন; তাঁর রবের পক্ষ থেকে একটি মহান আদেশ নিয়ে, যাতে তিনি তাঁকে প্রকাশ্যে ইসলাম ধর্মের দিকে আহ্বান করতে আদেশ দেন।
আল্লাহর আদেশ পালনার্থে তিনি কাবার পার্শ্ববর্তী সাফা পাহাড়ে আরোহণ করলেন এবং উচ্চ কণ্ঠে মক্কাবাসীদের ডাকতে লাগলেন। লোকেরা সমবেত হলে তিনি তাদেরকে বলেন: আমি যদি তোমাদেরকে বলি যে, পাহাড়ের পেছনে শত্রু বাহিনী আছে। তোমরা কি আমাকে বিশ্বাস করবে?
তারা এক বাক্যে বলল: আমরা আপনাকে কখনো মিথ্যাবাদী পাইনি।
তিনি তাদের সংবাদ দেন যে, তিনি তাদের জন্য আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে প্রেরিত রাসুল এবং তিনি তাদেরকে এক আল্লাহর ইবাদতের দিতে আহ্বান করেন।
এ কথা শুনা মাত্রই আবু লাহাব গালি-গালাজ শুরু করে দিল এবং বলল: তোমার সারা দিন ধ্বংস হোক! এ জন্যই কি তুমি আমাদেরকে সমবেত করেছো?
মক্কায় কাফেরদের জুলুম-অত্যাচার:
হযরত মুহাম্মদ সা. ও তাঁর দাওয়াতি কাজে বিরোধীতার উপর কুরাইশরা ঐক্যবদ্ধ হলো। তারা তাকে নিয়ে হাসি-তামাশা করতে লাগল। তাঁর ব্যাপারে এ কথা বলে বেড়াতো যে, তিনি পাগল, তিনি একজন জাদুকর, মিথ্যুক এবং গণক যে অদৃশ্য সংবাদ জানার ব্যাপারে দাবি করে। (নাউজুবিল্লাহি মিন জালিক।)
হযরত মুহাম্মদ সা.-এর চাচা আবু লাহাব লোকদেরকে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ এবং তাঁর কথা শ্রবণ করার ব্যাপারে সতর্ক করত। কিন্তু এ সকল বাধা-বিপত্তি হযরত মুহাম্মদ সা. কে তাঁর দাওয়াতি কাজে দুর্বল করেনি।
এক পর্যায়ে কুরাইশরা হযরত মুহাম্মদ সা. কে প্রচণ্ডভাবে কষ্ট দিতে লাগলো। তারা তাঁর পথে কাঁটা বিছিয়ে দিত এবং তিনি নামাজরত অবস্থায় তাঁর উপর ময়লা নিক্ষেপ করত এবং তাকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করতো।
রাসুল সা.-এর উপর ঈমান আনা কেউই এই দুঃখ-কষ্ট থেকে নিরাপদ ছিল না। প্রত্যেক গোত্রই তাদের মাঝে ঈমান আনা ব্যক্তিদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়তো এবং তাদের সাথে রূঢ়তা পূর্ণ আচরণ করতো। তাদেরকে আগুন দিয়ে ছ্যাঁকা দিত। চাবুক দ্বারা প্রহার করত যতক্ষণ পর্যন্ত না তারা তাদের দ্বীন থেকে ফিরে আসত।
উমাইয়া বিন খলফ তার গোলাম হযরত বেলাল রা. কে প্রচণ্ড রোদে উক্ত বালিতে পাথর খণ্ড চাপা দিয়ে রাখত এবং এভাবেই তাকে দীর্ঘ সময় যাবত রেখে দিত। হযরত বেলাল রা. এ সকল দুঃখ-কষ্ট সহ্য করতেন এবং মুখে বলতেন: আহাদ!… আহাদ!… অর্থাৎ আল্লাহ এক, আল্লাহ এক।
হযরত বেলাল রা.-এর দুঃখ কষ্ট দেখে এক পর্যায়ে হযরত আবু বকর রা. তাকে ক্রয় করে আজাদ করে দেন।
মেরাজের ঘটনা:
আল্লাহ তায়ালা হযরত মুহাম্মদ সা. কে সান্ত্বনা দিতে চাইলেন এবং তাঁর অন্তর থেকে দুঃখ কষ্ট দূর করতে চাইলেন। এক রাতে আল্লাহ তায়ালা হযরত মুহাম্মদ সা. কে মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা নিয়ে যান। সেখান থেকে ঊর্ধ্ব আকাশে গমন করেন। এই সফরে তিনি অনেক বড় বড় নিদর্শন দেখতে পান। যেমন: জান্নাতে প্রবেশ, জাহান্নাম সম্পর্কে অবগতি এবং আল্লাহ তায়ালার সাথে কথোপকথন, নবীদের সাথে সাক্ষাৎ। এ রাতেই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করা হয়। বরকতময় সফর শেষে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সে রাতেই মক্কায় ফিরে আসেন। সকাল বেলায় যখন তিনি সে ব্যাপারে কুরাইশদেরকে সংবাদ দেন। তারা তাকে নিয়ে উপহাস করতে লাগলো এবং মসজিদুল আকসার বিবরণ জিজ্ঞাসা করতে লাগলো।
আল্লাহ তাআলা জিব্রাইল আ.-এর মাধ্যমে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট মসজিদুল আকসা তুলে ধরেন। তিনি তা দেখে দেখে মসজিদুল আকসার সম্পূর্ণ বিবরণ প্রদান করেন। যেমনিভাবে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম তাদের নিকট আগত কাফেলার ব্যাপারে সংবাদ প্রদান করেন, যার অপেক্ষা তারা দীর্ঘদিন যাবত করছিল এবং আগত কাফেলা পৌঁছার সময়সীমা নির্ধারণ করে দেন।
অতঃপর কাফেলাটি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্ধারিত সময়সীমা ভিতর মক্কায় এসে পৌঁছায়। এ সকল নিদর্শন এবং মুজিজা দেখা সত্ত্বেও তারা তাদের মিথ্যা এবং অবাধ্যতার উপর অটল রইল। তারা আবু বকর রা. নিকট গিয়ে নবীজি সা.-এর ব্যাপারে সংবাদ দিল। আবু বকর রা. তাদেরকে বলেন: আল্লাহর শপথ! যদি নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এমনটি বলে থাকেন, তাহলে তিনি সত্যই বলেছেন। সেদিন থেকে আবু বকর রা. কে ‘সিদ্দিক’ উপাধীতে ভূষিত করা হয়।
বাইয়াতে আকাবা:
নবুওয়াতের ১১ তম বৎসর হযরত মুহাম্মদ সা. হজ্জের মওসুমে মক্কায় আগত কাফেলাদের উদ্দেশ্যে রওনা হন। মিনায় আকাবার নিকটে মদিনা থেকে আসা ১১জন লোকের সাথে মিলিত হন। তাদের সামনে ইসলাম পেশ করেন এবং কুরআনুল কালীম থেকে বিভিন্ন আয়াত পাঠ করে শুনান। ফলে তারা বিশ্বাস করল যে, তিনি আল্লাহর নবী, যার আবির্ভাবের ব্যাপারে ইহুদিরা ভবিষ্যত বাণী করত।
তারা তাদের সম্প্রদায়ের নিকট প্রত্যাবর্তন করে ইসলামের প্রতি তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করে লাগল। রাসুল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লামের আবির্ভাব হওয়ার বিষয়টি মদিনায় ছড়িয়ে পড়ল। এমনকি মদিনার কোন ঘর বাকি ছিল না যেখানে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম-এর ব্যাপারে আলোচনা হত না।
প্রথম বাইয়াতে আকাবা:
পরবর্তী বছর হজের মৌসুমে মদিনা থেকে ১২ জন লোক মক্কায় আগমন করেন। তারা রাসুল সা.-এর কাছে মিনায় আকাবাতুল উলার নিকট সাক্ষাৎ করেন। তারা আল্লাহ তায়ালা ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য এবং দ্বীনী কাজের সাহায্য করার ব্যাপারে রাসুল সা.-এর নিকট অঙ্গীকারবদ্ধ হোন। এই বাইয়াতকে ‘বাইয়াতুল আক্বাবাতিল উলা’ বা প্রথম বাইয়াতে আকাবা নামে নামকরণ করা হয়।
বাইয়াতুল আক্বাবাতিস সানী:
নবুয়তের ১২ তম বছরে হজের মৌসুমে মদিনার মুসলমানদের থেকে ৭৩ জন পুরুষ এবং দুইজন মহিলা মক্কায় আগমন করেন এবং তারা রাসুল সা.-এর সাথে আকাবার নিকট রাত্রে সাক্ষাৎ করার ব্যাপারে অঙ্গীকারবদ্ধ হন।
রাসুল মদিনা থেকে আগত দলের সাথে নির্ধারিত সময় সাক্ষাৎ করেন। তারা রাসুল সা. কে স্বাগত জানায় এবং সকলেই এ বিষয়ে বাইয়াত হন যে, তারা রাসুল সা. কে রক্ষা ও সাহায্য করবে এবং আগত বিপদ-আপদে পাশে দাঁড়াবে, যেমনি ভাবে তারা তাদের অর্থ-সম্পদ, সন্তানাদি এবং মহিলাদের বিপদে পাশে দাঁড়ায়। তারা রাসুল সা.-এর সাথে যুদ্ধ করবে, যারা রাসুল সা.-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং তাদেরকে নিরাপত্তা দিবে, রাসুল সা. যাদেরকে নিরাপত্তা দেন।
হযরত মুহাম্মদ সা.-এর মদিনায় হিজরত:
কুরাইশ নেতৃবর্গ যখন বুঝতে পারল যে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম অচিরেই তার সাথীদের সাথে মদিনায় মিলিত হবেন। রাসুল সা. ও তার দাওয়াত প্রতিহত করার ব্যাপারে পরামর্শের জন্য তারা দারুন নদওয়ায় বড় বৈঠক ডাকল। এর উপর তাদের সিদ্ধান্ত স্থির হলো যে, প্রত্যেক গোত্র থেকে একজন শক্তিশালী যুবক বেরিয়ে আসবে, যার হাতে ধারালো তরবারি দেওয়া হবে, অতঃপর তারা সকলে মিলে রাসুল সা.-এর উপর আঘাত হানবে এবং তাকে হত্যা করবে। তার রক্ত গোত্রগুলোর মাঝে ভাগাভাগি হয়ে যাবে। ফলে তার পরিবারের কেউই সকল গোত্র থেকে প্রতিশোধ নিতে সক্ষম হবে না।
যেদিন কাফেররা রাসুল সা. কে হত্যার ব্যাপারে নির্ধারণ করেছিল, জিব্রাইল আলাইহিস সালাম এসে রাসুল সা. কে কুরাইশদের ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে সংবাদ প্রদান করেন এবং তাকে আদেশ দেন, তিনি যেন সে রাতে তার গৃহে অবস্থান না করেন। আল্লাহ তায়ালা রাসুল সা. কে মদিনায় হিজরতের সুসংবাদ দেন। ফলে রাসুল সা. হিজরতের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করতে শুরু করলেন। তিনি হিজরতের কথা আবু বকর রা, কে জানান। আবু বকর রা. রাসুল সা.-এর সাথে হিজরতের ইচ্ছা পোষণ করলে রাসুল সা. এতে সম্মত হোন।
রাতে রাসুল সা. হযরত আবু বকর রা.-এর গৃহে যান। উভয়ে মিলে দক্ষিণ দিকে রওনা হন। এমনকি একটি গুহায় পৌঁছান। যাকে ‘গারে সাওর’ বলা হয়। সেখানে তিন দিন আত্মগোপনে থাকেন।
মদিনার উদ্দেশ্যে হিজরত:
রাসুল সা. এবং আবু বকর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু আব্দুল্লাহ বিন উরাইক্বিতকে পারিশ্রমিক দিয়ে নিযুক্ত করেন। রাসুল সা. মরুভূমির পথে তার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে চাইলেন। উভয়েই তার নিকট দুটি উট অর্পণ করেন এবং যেগুলো নিয়ে তিন দিন অতিক্রম হওয়ার পর গুহার মুখে সাথে সাক্ষাৎ করার অঙ্গীকার নিয়েছিলেন। তিন দিন অতিক্রম হওয়ার পর আব্দুল্লাহ বিন উরাইক্বিত তার নির্ধারিত সময় দুটি বাহন নিয়ে গুহার এসে পৌঁছেন।
প্রথম হিজরীর রবিউল আউয়াল মাসের শুরুতে রাসুল সা., তার সাথী আবু বকর সিদ্দিক রা. এবং তাদের সাথে আমের বিন ফুহাইরা ও আব্দুল্লাহ বিন উরাইক্বিত মদিনা অভিমুখে বরকতময় যাত্রা শুরু করেন। কাফেরদেরকে লক্ষ্যচূত করার জন্য ইয়ামেন অভিমুখে দক্ষিণ দিকে আবু বকর ও রাসুল সা. কে নিয়ে আমের বিন উরাইক্বিত যাত্রা শুরু করেন।
অতঃপর লোহিত সাগর ঘেঁষে উত্তর দিকে রওনা হন। তিনি তাদের নিয়ে এমন একটি পথে চললেন, যে পথে সাধারণত কেউ চলাচল করে না। কাফেলা আল্লাহ তায়ালার নিরাপত্তায় চলতে লাগলো, এমনকি মদিনার উপকণ্ঠে এসে পৌঁছালো।
বিদায় হজ্জ:
১০ম হিজরীতে মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা. প্রায় ১ লক্ষ সাহাবী সাথে নিয়ে হজ্জ পালনে বের হন। সকলের মুখে একই বাক্য: ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক ।’ এটিই ছিল মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা.-এর জীবনের প্রথম ও শেষ হজ্জ; যাকে বিদায় হজ্জ নামে নামকরণ করা হয়।
মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা. হজ্জের দিন আরাফাত ময়দানে খুতবা দেন; যা বিদায় হজ্জের খুতবা হিসেবে প্রসিদ্ধ। তাতে তিনি কিতাবুল্লাহ আঁকড়ে রাখা; সুন্নতের অনুসরণ; হালাল-হারামের বিবরণ; মহিলা, গোলাম ও অন্যান্যদের ব্যাপারে উপদেশ প্রদান করেন।
রাসুল সা. উপস্থিত জনতাকে উদ্দেশ্য করে বলেন: আমি কি তোমাদের নিকট পৌঁছাতে পেরেছি? লোকেরা বলল: আপনি যথার্থভাবে পৌঁছিয়েছেন।
তিনি বললেন: হে আল্লাহ! আপনি সাক্ষী থাকুন।
অতঃপর আল্লাহ তায়ালা উক্ত আয়াতটি নাজিল করেন:
اليوم اكملت لكم دينكم واتممت عليكم نعمتي ورضيت لكم الاسلام دينا
অর্থ: আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম, তোমাদের প্রতি আমার নেয়ামত পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন হিসেবে মনোনীত করলাম।
হযরত ওমর রা. এই আয়াত শুনে কাঁদতে লাগলেন। লোকেরা তাকে জিজ্ঞাসা করল: হে ওমর! আপনি কেন কাঁদছেন? তিনি বললেন: প্রত্যেক পরিপূর্ণতার পর কমতি ব্যতীত কিছুই আছে না।
মহানবী সা.-এর মৃত্যু তারিখ:
হজ্জ শেষে রাসুল সা. মদিনায় প্রত্যাবর্তনের পর জান্নাতুল বাকী জিয়ারত করেন এবং সেখানে শায়িত মুসলমানদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এমনিভাবে তিনি উহুদ যুদ্ধে শহীদদের কবর জিয়ারত করেন। যেন তিনি তাদের থেকে বিদায় নিচ্ছেন।
এরপর তিনি মদিনায় ফিরে আসেন। মদিনায় ফিরে আসার পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। যখন অসুস্থতা তীব্র আকার ধারণ করল। তিনি তার স্ত্রীদের থেকে অনুমতি নিয়ে হযরত আয়েশা রা.-এর গৃহে অবস্থান করতে থাকেন।
মৃত্যুর পূর্বে একদিন রাসুল সা. সাহাবায়ে কেরামের সাথে সাক্ষাৎ করতে আসেন। সাহাবায়ে কেরাম তখন নামাজরত ছিলেন। রাসুল সা.-এর হঠাৎ আগমন দেখে তারা প্রচণ্ড আনন্দিত হন। তারা পরস্পরে বলতে লাগলেন: রাসুল সা. সুস্থ হয়ে গিয়েছেন।
অতঃপর রাসুল সা. আয়েশা রা.-এর ঘরে ফিরে যান। আশেয়া রা. অনুভব করলেন যে, রাসুল সা.-এর মাথা ভারি হয়ে যাচ্ছে। তিনি তাঁর চোখের দিকে তাকান; দেখেন তার চোখ নড়ছে না….
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। ১১ হিজরীর ১২ই রবিউল আওয়াল মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা. আপন রবের ডাকে সাড়া দিয়ে দুনিয়া ত্যাগ করেন।