الحديث المعنعن (হাদিসে মুআনআন) ঐ হাদিসকে বলা হয়, যা عن عن যোগে বর্ণিত হয়। যেমন: (عن فلان عن فلان) অর্থাৎ, একজন রাবী অপর রাবী থেকে عن শব্দ যোগে সনদ বর্ণনা করেন। এবং তাতে سمعت (আমি শুনেছি) বা এ জাতীয় শব্দ থাকে না।
বিষয়টি ভালোভাবে বোঝার স্বার্থে প্রাথমিক আলোচনা করার প্রয়োজন। হাদিস সহীহ হওয়ার জন্য পাঁচটি শর্ত রয়েছে। তন্মধ্যে একটি হল: হাদিসের সনদ মুত্তাসিল হওয়া। অর্থাৎ প্রত্যেক রাবী তার মারবী আনহু থেকে হাদিসটি সরাসরি শ্রবণ করা।
এটা তখনই বুঝা যাবে, যখন রাবী হাদিসটি سمعت (আমি শুনেছি) বা এ জাতীয় শব্দ দ্বারা বর্ণনা করবেন।
যদি রাবী عن যোগে হাদিস বর্ণনা করেন। তখন বিষয়টি স্পষ্টভাবে বুঝা যায় না এবং এ ক্ষেত্রে একাধিক احتمال (সম্ভাবনা) থাকে।
১. হয়তো তিনি হাদিসটি মারবী আনহু থেকে সরাসরি শুনেছেন।
২. হয়তো তিনি হাদিসটি মারবী আনহু থেকে সরাসরি শুনেননি।
৩. বা সনদে انقطاع এর সম্ভাবনা রয়েছে।
যেহেতু মুআনআন হাদিস বর্ণনার মাঝে একাধিক সম্ভাবনা থাকে। তাই এর হুকুম সম্পর্কে اختلاف রয়েছে। অর্থাৎ হাদিসটি মুত্তাসিল হিসেবে গণ্য হবে নাকি মুনকাতি – এ ব্যাপারে اختلاف রয়েছে।
হাদিসে মুআনআন হুকুম
নিম্নোক্ত তিনটি সূরতে সকল মুহাদ্দিসীনের নিকট মুআনআন হাদিস منقطع (মুনকাতি) হিসেবে গণ্য হবে:
১. যদি রাবী ও মারবী আনহুর যুগ এক না হয়।
২. যদি রাবী ও মারবী আনহুর যুগ এক। তবে সারা জীবনে উভয়ের মাঝে সাক্ষাৎ না হওয়া প্রমাণিত।
৩. সারা জীবনে উভয়ের মাঝে সাক্ষাৎ না হওয়া প্রমাণিত নয়। তবে, রাবী মুদাল্লিস।
উপরোক্ত সুরতগুলোতে সকল ইমামগণের নিকট عن যোগে বর্ণিত হাদিস (মুনকাতি) হিসেবে গণ্য হবে।
اختلاف হল চতুর্থ সুরতে
অর্থাৎ ১. যদি রাবী ও মারবী আনহুর যুগ এক হয়। ২. সারা জীবনে উভয়ের মাঝে সাক্ষাৎ না হওয়া প্রমাণিত নয়। ৩. রাবী মুদাল্লিসও নয়।
এমন রাবীর রেওয়ায়াতকৃত হাদিস متصل (মুত্তাসিল) হিসেবে গণ্য হবে কি না?
এ ব্যাপারে দুটি মাযহাব রয়েছে
১. কোনো কোনো মুহাদ্দিসের মতে, হাদিসটি متصل (মুত্তাসিল) হিসেবে গণ্য হবে না। বরং منقطع (মুনকাতি) হিসেবে গণ্য হবে।
২. জমহুর মুহাদ্দিসীনের মতে, হাদিসটি متصل (মুত্তাসিল) হিসেবে গণ্য হবে।
যারা বলেন, منقطع (মুনকাতি) হিসেবে গণ্য হবে। তাদের দলিল হচ্ছে:
সকল যুগেই রাবী মারবী আনহুর সাথে لقاء ও سماع (শ্রবণ ও সাক্ষাৎ) ব্যতীত عن যোগে হাদিস বর্ণনা করে থাকেন। এবং এ পদ্ধতিতে হাদিস বর্ণনা করাটা কাছে নিকট বৈধ। এ সুতরাং এ ক্ষেত্রে انقطاع এর সম্ভাবনা রয়েছে।
আর যখন জীবনে অন্তত এক বার হলেও মারবী আনহুর সাথে সাক্ষাৎ হওয়ার প্রমাণ থাকবে। তখন এই সম্ভাবনা দূরীভূত হয়ে যাবে। ফলে এমন ব্যক্তির عنعنة কে ইত্তিসালের অন্তর্ভুক্ত ধরে নেওয়া হবে।
দলিলের জবাব:
উক্ত দলিলটি সঠিক নয়। কেননা তা অধিকাংশ মুহাদ্দিসীনে কেরামের সিদ্ধান্তের বিপরীত। বারী তার মারবী আনহুর সাথে সাক্ষাতের প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও মারবী আনহুর থেকে বর্ণিত হাদিসটি মারবী আনহু থেকে নাও শ্রবণ করতে পারেন।
সুতরাং শুধু সাক্ষাতের প্রমাণ থাকার শর্ত করার দ্বারা এতে কোন বিশেষ কল্যান পরিলক্ষিত নয়।
যাদের মতে এরূপ মুআনআন হাদিস متصل হিসেবে গণ্য হবে। তাদের দলিল হচ্ছে:
প্রথম দলিল: মুতাকাদ্দিনীর উলামায়ে কেরামগণের কারো থেকে উল্লিখিত সুরতে (চতুর্থ সুরতে) সনদ ইত্তিসাল হওয়ার জন্য لقاء (সাক্ষাৎ) প্রমাণিত হওয়া শর্ত নয়।
দ্বিতীয় দলিল: এমন অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে; যেখানে لقاء (সাক্ষাৎ) প্রমাণিত নয়। হাদিসের ইমামগণ ঐ রাবীদের মুআনআন হাদিসগুলো মুত্তাসিল গণ্য করেন।
যেমন: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ইয়াজিদ আনসারী (রা.) হয়রত হুযাইফা (রা.) থেকে عن যোগে একটি হাদিস বর্ণনা করেন। অনুরূপ তিনি হযরত আবু মাসউদ আনসারী (রা.) থেকে عن যোগে একটি হাদিস বর্ণনা করেন।
অথচ আব্দুল্লাহ-এর সাক্ষাত বা সামনা-সামনি হাদিস শোনার কোনো রেওয়ায়েত নেই। কিন্তু যেহেতু সমসাময়িক এবং সাক্ষাতের সম্ভাবনা রয়েছে। তাই হাদিসের ইমামগণ তার عن যোগে রেওয়ায়েতকে মুত্তাসিল সাব্যস্ত করেন।
রাবীর সাক্ষাৎ প্রমাণিত হওয়ার শর্তারোপ করেছেন কে?
মুআনআন হাদিসের ক্ষেত্রে সাক্ষাৎ প্রমাণিত হওয়ার শর্তারোপ কে করেছেন; এ ব্যাপারে ইমাম মুসলিম (রহ.) সুস্পষ্টভাবে নাম উল্লেখ করেননি। তবে অধিকাংশ উলামায়ে কেরামের মতে, ইমাম মুসলিম (রহ.) তাঁর বক্তব্যের দ্বারা উদ্দেশ্য নিয়েছেন ইমাম বুখারী (রহ.) ও তার উস্তাদ আলী ইবনে মাদীনী (রহ.) কে।
তবে, মুফতী সাঈদ আহমদ পালনপুরী (রহ.)-এর মতে উক্ত দাবিটি সঠিক মনে করেন না। তিনি এভাবে দলিল পেশ করেন:
প্রথম দলিল: ইমাম মুসলিম দলিল স্বরূপ তার কিতাবে যে সকল হাদিস উল্লেখ করেছেন। তার মধ্যে প্রায় সাতটি বুখারী শরীফে উল্লেখ রয়েছে।
দ্বিতীয় দলিল: সহীহ বুখারী সহীহ মুসলিমের পূর্বে সংকলিত হয়েছে। সুতরাং ইমাম মুসলিম (রহ.) তাঁর বক্তব্যের দ্বারা যদি ইমাম বুখারী (রহ.) কে উদ্দেশ্য নিতেন। তাহলে অবশ্যই মতামত খণ্ডন করতে গিয়ে বলতেন: উক্ত মতের প্রবক্তার অমুক কিতাবে অমুক অমুক হাদিস বিদ্যমান রয়েছে।
তৃতীয় দলিল: শাইখাইনের মাঝে যে হৃদ্যতা ও সুগভীর সম্পর্ক ছিল। তা এ কথার প্রমাণ বহন করে যে, ইমাম মুসলিম (রহ.) তার বক্তব্য দ্বারা ইমাম বুখারী (রহ.)কে উদ্দেশ্য নেন নি।
তাহলে উক্ত বক্তব্যের দ্বারা কে উদ্দেশ্যে?
ইমাম মুসলিম (রহ.) তাঁর বক্তব্যের দ্বারা উদ্দেশ্য নিয়েছেন এমন কতিপয় লোকদেরকে; ইতিহাসে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়নি অথবা যাদের নাম আমাদের পর্যন্ত পৌঁছেনি।