রাসুলুল্লাহ সা.-এর প্রতিটি সুন্নতের পিছনে রয়েছে বিশেষ হিকমত ও উপকারিতা। সুন্নতগুলোর মধ্যে মিসওয়াক একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। এটি শুধু মুখের পরিচ্ছন্নতার মাধ্যমই নয়, বরং শারীরিক ও আধ্যাত্মিক কল্যাণ লাভের মাধ্যমও বটে। প্রিয় নবী (সা.) মিসওয়াককে এতটাই গুরুত্ব দিয়েছেন যে, যদি এটি উম্মতের জন্য কষ্টদায়ক না হতো, তাহলে তিনি তা উম্মতের জন্য আবশ্যক করে দিতেন।
মিসওয়াকের গুরুত্ব এতটাই বেশি যে, এটি মুখ ও দাঁত পরিষ্কার রাখার পাশাপাশি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করার মাধ্যম। মিসওয়াকের উপকারিতা ও ফজিলত জানলে যে কেউ এটি পালনে আরও উৎসাহী হয়ে উঠবে। তাই এই সুন্নতের গুরুত্ব তুলে ধরার উদ্দেশ্যে আমরা আলোচনা করব মিসওয়াকের ফজিলত, উপকারিতা এবং ইসলামের দৃষ্টিতে এর মর্যাদা সম্পর্কে।
মিসওয়াক: হারিয়ে যাওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত
মিসওয়াক একটি প্রিয় সুন্নত যা প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) অত্যন্ত যত্নের সাথে পালন করতেন। এটি শুধুমাত্র মুখের পরিচ্ছন্নতার জন্য নয়, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ এবং ইবাদত কবুলের একটি মাধ্যমও।
রাসুল (সা.) এর পছন্দের একটি আমল
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সা. বলেন:
“যদি আমার উম্মতের উপর কষ্টসাধ্য মনে না করতাম, তাহলে আমি তাদের মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম।”
– সহীহ বুখারী হাদীস নং: ৬৭৪৬
এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, মেসওয়াকের প্রতি রাসুল (সা.) কতটা গুরুত্ব দিয়েছেন। তাছাড়া মিসওয়াক ফিতরাতের অন্তর্ভুক্ত।
মিসওয়াক করার উপকারিতা ও ফজিলত
মিসওয়াকের রয়েছে অসংখ্য ফজিলত ও উপকারিতা। নিয়মিত মিসওয়াক করলে একজন মুসলিমের জীবনে যে পরিবর্তন আসতে পারে, তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো:
- আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ: মিসওয়াক একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত যা আল্লাহর সন্তুষ্টির মাধ্যম।
- মুখের পরিচ্ছন্নতা: এটি মুখের পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করে এবং মাড়ি ও দাঁতকে পরিষ্কার রাখে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: মিসওয়াকের কারণে মুখের বিভিন্ন রোগ দূর হয় এবং দাঁতের ক্ষয় রোধ করে।
- চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধি: নিয়মিত মিসওয়াক দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।
- মাড়ি মজবুত করা: এটি মাড়িকে মজবুত ও সুস্থ রাখে।
- হজমশক্তি উন্নত করা: মিসওয়াকের ফলে হজমশক্তি বৃদ্ধি পায়।
- মিসওয়াক করলে ফেরেশতারা খুশি হন।
- ইবাদতে উন্নতি: মিসওয়াক করার ফলে নামাজের সওয়াব বৃদ্ধি পায়।
- স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি: নিয়মিত মিসওয়াক স্মৃতিশক্তি বাড়াতে কার্যকর।
- শয়তানের অসন্তুষ্টি: শয়তান মিসওয়াককারীর প্রতি বিরক্ত হয়।
- ইমানের মৃত্যু: নিয়মিত মৃত্যুকালে কালিমা পড়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
মিসওয়াকের গুরুত্ব নিয়ে হাদিস
আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সা. বলেছেন:
“তোমরা মিসওয়াক কর। কেননা মিসওয়াক মুখ গহ্বর পবিত্র করে এবং পরওয়ারদিগরের সন্তুষ্টি হাসিল করে। আমার কাছে যখনই জিবরাঈল (আ) আসেন, তখনই আমাকে মিসওয়াক করার উপদেশ দেন। এমনকি আমি আশংকা করছিলাম যে, তা আমার ও আমার উম্মতের উপর ফরয করা হবে। আমি যদি আমার উম্মতের উপর কষ্টের আশংকা না করতাম, তাহলে আমি তাদের জন্য মিসওয়াক করা ফরয করে দিতাম। আর আমি এত বেশী মিসওয়াক করি যে, আমার মুখের সম্মুখভাগের দাঁতের গোড়ায় প্রথম হওয়ার আশংকা করছি।”
– সুনানে ইবনে মাজা, হাদীস নং: ২৮৯
আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন:
“মিসওয়াক মুখের পবিত্রতা অর্জনের উপকরণ ও আল্লাহর সন্তোষ লাভের উপায়।”
– সুনানে নাসায়ী হাদীস নং: ৫
মিসওয়াক শুধু একটি সুন্নত নয়, বরং আমাদের দৈনন্দিন জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ অভ্যাস। এটি আমাদের শারীরিক এবং আধ্যাত্মিক জীবনে কল্যাণ বয়ে আনে।
আল্লাহ আমাদের সকলকে নিয়মিত মিসওয়াক করার তাওফিক দান করুন। আমীন।