বিদায় একটি নিষ্ঠুর শব্দ। এ পৃথিবীতে যার আছে শুরু, তার আছে শেষ। যার আছে অতীত, তার আছে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ। সময়ের সাথে গড়ে উঠা ভ্রাতৃত্বের বন্ধন বিদায় লগ্নে মনে করিয়ে দেয় অতীতের স্বপ্ন কোলাহল মুক্ত দিনগুলোর কথা। চোখের কোণে নেমে আসে জল। দৃশ্যপট হয়ে যায় ঝাপসা। সকল কল্পনা-জল্পনা তখন অতীতকে নিয়ে। বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্যের সৌন্দর্য বাড়াতে এমন কিছু ছন্দ, ছড়া বা কবিতা বা উক্তির প্রয়োজন; যা স্মরণ করিয়ে দেয় অতীত।যা ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে রাখার উদ্দীপনা যোগায়। আজকে বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্যে যোগ করার মত কিছু খণ্ড অংশ তুলে ধরব।
মাদ্রাসার বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য
আল বিদা! এই বিশাল অবনীতে যার হয়েছে জন্ম, বিশ্ব নিয়ন্তা তার জীবনীতে লিখেছেন মরণ; যার আছে শুরু, তার আছে শেষ। জামিয়ার এ কাননে ফুটল কত ফুল, ঝড়ে গেল শেষে। মৌমাছির আগমন হয়, হয় তার বিদায়।
এ বিদায়ের কাতারে আমাকেও দাঁড়াতে হবে তা জেনেছি, শুনেছি।কিন্তু ভাবিনি কখনো বা উপলব্ধি করিনি তার গভীরতা কত, কত তার ওজন। কখনো বুঝতে চাইনি তার বাস্তবতা। কিন্তু ধীরে ধরে তা আজ উপস্থিত আমাদের দোয়ারে, চেপে বসেছে আমারে উপরে। যার যন্ত্রণা ছড়িয়ে পড়েছে আমার মেধায়, মস্তিষ্কে, হৃদয় গহীনে। ধমনীর প্রতি ফোঁটা রক্তে। আজ আমার কান শুনছে সে বিদায়ের সুর, চোখ দেখছে বিদায়ী পরিবেশ, হাত স্পর্শ করছে বিদায়ী অভিমান, হৃদয় উপলব্ধি করছে বেদনা, মস্তিষ্ক অনুধাবন করছে বিদায়ের নিস্তব্ধতা।
বিদায়ের নিষ্ঠুর আঘাতে অব্যক্ত চাপা কান্নায় আমরা সবাই নির্বাক, নিশ্চল, নিথর। আহ্! কী করুণ বিদায়ের দৃশ্য।
স্কুলের বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য
ওহে প্রাণের বিদ্যালয়! ওহে বিদ্যালয়! ধন্য তুমি, ধন্য তোমার ক্রোড়, ধন্য তারা তোমার স্নেহময়ী ক্রোড়ে আশ্রয় নিয়েছে যারা। তুমি তো সেই মমতাময়ী মায়ের মত, কষ্ট বা দুঃখের সময় সন্তান আশ্রয়ণের যার আদর মাখা আঁচলের ছায়াতলে।
তুমি সে ধৈর্যের নীড়। শত যন্ত্রণাতেও যার চেহারায় ভেসে উঠে না বিরক্তির আভা। তুমি তো সেই দরদী মাতৃ ক্রোড়, মানবতার কল্যাণে নিজেকে বিলানো যার আদর্শ। দীর্ঘ এক দশক পূর্বে আমরা যখন পথ হারা পথিক তুমি তখন পথের দিশারী। যখন পাল বিহীন তরীর যাত্রী তখন তুমি সচেতন নাবিক।
সাগরের উদারতা নিয়ে মোদেরকে টেনে নিয়েছ তোমার মমতাময়ী বুকে, দিন-রজনীর প্রতি ক্ষণে ক্ষণে রেখেছ স্নেহের আঁচল তলে।
তোমার জান্নাতী সমাদারে বিমোহিত হয়ে ভুলে গিয়েছি দুনিয়ার সকল সাজ-সজ্জায়। এ হৃদয়ে চির আপন করেছি তোমাকে। তুমি যে অতুলনীয় অনন্য। কিন্তু হঠাৎ কর্ণ কুহরে ধ্বনিত হলো এক বেদনা বিধুর ধ্বণি। আজ তোমার প্রতিটি ধূলি-কণা থেকে ভেসে আসছে চাপা কান্নার ফুসফুসানি। হৃদয় রাজ্য বিদায় বিরহে ব্যথিত তোমার।
কেঁদোনা ওহে প্রাণের বিদ্যালয়! তোমায় কথা দিচ্ছি। আমরা তোমাকে ভুলবো না জীবনের কোনো ক্ষণে। জগতের আনাচে কানাচে পৌঁছে দিবো তোমার পুণ্যকীর্তি।
বিদায় অনুষ্ঠানের উপস্থাপনায় যে সকল ছন্দ, বাক্য ও কবিতা সকলের মন কাড়ে। সেগুলো pdf আকারে দেওয়া হলো। আশা করছি, ছন্দ, বাক্য ও কবিতাগুলো সকলের মনোযোগ আকর্ষণে সক্ষম হবে।
শিক্ষকবৃন্দের উদ্দেশ্যে বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য
ওহে মোদের শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষকবৃন্দ! লক্ষ্য কোটি বনী আদমের মাঝে আমরা কতক অবুঝ জ্ঞান অন্বেষণের দূর্বার স্পৃহা, দৃঢ় মনোবল ও তীব্র আশা নিয়ে ভিড় জমিয়েছিলাম আপনাদের চরণ তলে। যার সুবাদে আমাদেরকে আপনারা প্রস্ফুটিত করে তুলেছেন জ্ঞানের ঊষার ও আলোর মাধ্যমে।
সাগর সম উদারতা, পাহাড় সম ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে আমাদের প্রাণে জ্বেলেছেন আলোর প্রদীপ। জাগিয়ে তুলেছেন চেতনা। সোনার মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে প্রাণান্তকর চেষ্টাকে রেখেছেন সদা অব্যাহত।
স্নেহ প্রীতির আদলে আগলে রেখেছেন মমতাময়ী মা-বাবার মত। সত্যিই আপনাদের এই ঋণ শোধ হওয়ার নয়। তাই ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বিদায়ের এ সন্ধিক্ষণে ক্ষমা চাচ্ছি সকল অবাঞ্ছিত আচরণের জন্য। কামনা করছি, সকলের নেক দোয়া, যেন ইলমে নববীর আলো পৌঁছে দিতে পারি সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে।
এটাই আমাদের শেষ ফরিয়াদ।
অনুজদের উদ্দেশ্যে বিদায় অনুষ্ঠানের বক্তব্য
স্নেহ প্রতিম ছোট ভায়েরা!
বিদায়ের এই মূহুর্তে স্মরণ হচ্ছে অতীতের শত স্মৃতি, শত মায়ের কোল থেকে এসে আমরা ছিলাম জ্ঞানী পরিবারের এক মায়ের সন্তানের মত। জ্ঞান অন্বেষণের অমিয় বন্ধনে তোমাদের সাথে মোদের গড়ে উঠে ভ্রাতৃত্বের অপরূপ। আশা করছি ভালোবাসার এই রশ্মি উদ্ভাসিত হবে চিরদিন মনের গহীনে, হৃদয়ে গভীরে।
শিক্ষা জীবনের এই দীর্ঘ সফরে কখনো তোমাদের স্নেহ দিয়েছি কখনো বা দিয়েছি বেদনা। কোন কষ্টের কথা হয়তো মুছে গেছে স্মৃতির এ্যালবাম থেকে। কোন কষ্টের কথা হয়তো এখনো ব্যথিত করছে তোমাদের মনকে। বিদায়ের এই অন্তিম মূহুর্তে আমাদেরকে হাসি মুখে বিদায় দাও। সব ভুল মুছে ফেলে দাও হৃদয় থেকে। আর আমাদেরকেও স্মরণে রেখো তোমাদের মুনাজাতে।