বাংলা ব্যাকরণ পাঠের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। ব্যাকরণ হলো ভাষার স্বরূপ, প্রকৃতি, অভ্যন্তরীণ বৈশিষ্ট্য, শুদ্ধ-অশুদ্ধ, প্রয়োগ, বিকাশ, সৌন্দর্য এবং সাহিত্যের বিষয়ক গঠিত কতিপয় নীতিমালা। যা একজন ভাষাভাষীর বিশেষত, একজন লেখক, সাহিত্যিকের জানা অপরিহার্য।
বাংলা ভাষা সম্পর্কে গভীর ও সুনির্দিষ্ট জ্ঞান, ভাষা-সাহিত্য-রূপ-রেখা জানার জন্য বাংলা ব্যাকরণ পাঠ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উক্ত প্রবন্ধে নবম ও দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের বাংলা ব্যাকরণ পাঠের উপযোগী বিষয়াষয় তুলে ধরা হয়েছে। এতে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে ণ-ত্ব বিধান, ষ-ত্ব বিধান, ভূত তত্ত্ব, ‘কি’ এবং ‘কী’ এর ব্যবহার, য-ফলার পর আকারের ব্যবহার, ‘স্ত’ ও ‘স্থ’ ব্যবহারের নিয়ম, সমাপিকা ক্রিয়া ও অসমাপিকা ক্রিয়া, অর্থের ভেদাভেদ, সাধু ও চলিত সংমিশ্রণ বিপত্তি এবং শব্দ ভাণ্ডার।
ণ-ত্ব বিধান:
১. ‘ট’ বর্গীয় বর্ণের (ট, ঠ, ড, ঢ, ণ) সঙ্গে কেবল ‘ণ’ যুক্ত হয়।
যেমন: কণ্টক, ঘণ্টা, কণ্ঠ, লুণ্ঠন, অবগুণ্ঠন, খণ্ড, ভাণ্ড, কাণ্ড ইত্যাদি।
২. ঋ, র, ষ, ৃ, ্র ও র্র (রেফ) এরপর ‘ণ’ আসে।
যেমন: ঋণ, বর্ণ, শ্রেণি, ত্রাণ, কারণ, করুণ, লক্ষণ ইত্যাদি।
৩. ‘ঋ’, ‘র’, ‘ষ’এর পরে স্বরবর্ণ, ক-বর্গীয় বর্ণ, প-বর্গীয় বর্ণ, ‘ষ’ অন্তস্থ‘ব’, ‘হ’ অথবা অনুস্বার থাকলে ‘ণ’ হয়।
যেমন: চরণ, হরিণ, রেণু, কৃপণ, অর্পণ, নির্বাণ, লক্ষ্মণ, প্রয়াণ, ম্রিয়মাণ, প্রমাণ, গ্রহণ ইত্যাদি।
মনে রাখবেন,
১. ‘ত’ বর্গীয় বর্ণের (ত, থ, দ, ধ, ন) আগে কখনো ‘ণ’ যুক্ত হয় না, কেবল ‘ন’ হয়।
যেমন: অন্ত, প্রান্ত, গ্রন্থ, ক্রন্দন, বন্ধন ইত্যাদি।
২. ‘ঋ’, ‘র’, ‘ষ’ এবং ‘দন্ত্য ন’ এর মাঝে অন্য কোন বর্গের বর্ণ থাকলে ‘ন’ ‘ণ’ পরিণত হয় না।
যেমন: রচনা, অর্চনা, দর্শন, নর্তন, প্রার্থনা ইত্যাদি।
৩. ক্রিয়াপদে র এরপর ‘ন’ ব্যবহৃত হয়।
৪. ‘ণ’ কখনোও বিদেশি শব্দে ব্যবহৃত হয় না।
ষ-ত্ব বিধান:
১. ‘ঋ’-কারের পর ‘ষ’ বসে। যেমন- ঋষি, বৃষ, কৃষক, তৃষা, কৃষি।
২. ‘ট’ বর্গীয় বর্ণের সঙ্গে কেবল ‘ষ’ যুক্ত হয়।
যেমন: দুষ্টু, কষ্ট, সৃষ্ট, নষ্ট, কাষ্ঠ, পৃষ্ঠ, কনিষ্ঠ, প্রতিষ্ঠা, কণ্ঠ, কণ্ঠা ইত্যাদি।
বি.দ্র.: ‘ষ’ কখনোও বিদেশি শব্দে ব্যবহৃত হয় না।
ভুল: পোষ্টার, ষ্টোর।
সঠিক: পোস্টার, স্টোর।
‘কি’ এবং ‘কী’ এর ব্যবহার
যদি প্রশ্ন করলে উত্তর ‘হ্যাঁ’ অথবা ‘না’ হয়। তাহলে ‘কি’ ব্যবহৃত হবে। আর যদি প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে বর্ণনা দিতে হয়। চাই বর্ণনাটি এক বা দুই শব্দে হোক বা দীর্ঘ বাক্যের মাধ্যমে। তাহলে ‘কী’ ব্যবহৃত হয়।
যেমন: তুমি কি খাবে? উত্তর: হ্যাঁ।
তুমি কী খাবে? উত্তর: আমি রুটি খাবো।
ভূত তত্ত্ব:
‘অদ্ভুত’ ও ‘ভুতুড়ে’ এই দুই ভূত ব্যতীত সকল ভুলে ‘ূ’ ব্যবহৃত হয়।
যেমন: ভূমি, ভূত, ভূমিকা, বশীভূত ইত্যাদি।
য-ফলার পর আকারের ব্যবহার:
দেশী শব্দে য-ফলা ‘্য’ এরপর ‘া’ (আকার) ব্যবহারের নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম নেই। তাই অভিধান দেখে প্রয়োজনীয় শব্দগুলো মুখস্থ করার বিকল্প নেই।
যে সকল শব্দ ‘্যা’ সহ ব্যহৃত হয়:
অ্যাঁ, ক্যাঁচ, ক্যাঁচরক্যাঁচর,চ্যাঁচানো, চ্যাংড়া, চ্যালা, ছ্যাবলা, ছ্যামড়া, ছ্যাঁকা, ছ্যাঁদা, জ্যান্ত, জ্যাঠা, ঝ্যাঁটা, ট্যাঁক, ট্যাটা, ঠ্যাকা, ঠ্যালাগাড়ি, ঠ্যাসানো, ড্যাবড্যাব, ড্যাকরা, ত্যাঁদড়, ত্যাড়া, ত্যারচা, থ্যাঁতলা, থ্যাবড়ানো, ধ্যাৎ, ন্যাংটো, ন্যালা, ন্যাকা, ন্যাকড়া, ন্যাড়া, প্যাঁক, প্যাঁচা, প্যাঁদানি, ফ্যালনা, ফ্যালফ্যাল, ব্যাঙাচি, ব্যাটা, ভ্যাংচানো, ভ্যানভ্যান, ভ্যাবাচ্যাকা, ভ্যাপসা, ম্যাজম্যাজ, ম্যাদামারা, ল্যাং, ল্যাংটা, ল্যাজ, ল্যাটা, ল্যাতপ্যাত, ল্যাদাপোকা, শ্যাওলা, স্যাঁতসেঁতে, হ্যাটা, হ্যাংলা, হ্যাঁ, হ্যাঁগা প্রভৃতি।
মনে রাখবেন, বিদেশি শব্দের ক্ষেত্রে ‘্য’ (য-ফলা) এরপর ‘া’ (আকার) ব্যবহার করা আবশ্যক।
যেমন: অ্যাকাডেমি, অ্যাটম, অ্যাটনি, অ্যাডভোকেট, অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিসেপটিক, অ্যান্টেনা, অ্যাফিডেভিট, অ্যামনেস্টি, ক্যানসার, ক্যামেরা, ক্যাম্পাস, ক্যালসিয়াম, গ্যালারি, গ্যাস, গ্যালন, চ্যানেল, জ্যাকেট, ট্যানারি, ট্যাবলেট, ট্যাক্স, ট্যাক্সি, ট্যাংক, ড্যাশ, প্যাকেট, প্যাট্রল, প্যাডেল, প্যান্ডেল, প্যারা, প্যারাশুট, ফ্যাসিস্ট, ফ্যাসিবাদ, ফ্যাশন, ফ্যান, ফ্যাক্স, ব্যাংক, ব্যাকটেরিয়া, ব্যাগ, ব্যানার, ব্যান্ড, ব্যাবসা, ব্যারিস্টার, ব্যালট, ব্যারোমিটার, ভ্যান, ভ্যাকসিন, ম্যাংগানিজ, ম্যাক্সি, ম্যাগাজিন, ম্যাচ, ম্যাজিস্ট্রেট, ম্যাডাম, ম্যাজিক, ল্যাংবোট, ল্যান্ড, ল্যাবরেটরি, ল্যামিনেশন, ল্যাম্প, শ্যাম্পু, শ্যাম্পেন, স্যাকরা (ফারসি), স্যানাটোরিয়াম, স্যান্ডউইচ, স্যান্ডেল, স্যার, হ্যাজাক, হ্যাট্রিক, হ্যান্ডনোট, হ্যান্ডবিল, হ্যান্ডশেক, হ্যাট প্রভৃতি।
‘স্ত’ ও ‘স্থ’ ব্যবহারের নিয়ম:
যদি যুক্তাক্ষর ছাড়া শব্দ কোনো অর্থ প্রদান করে। তাহলে ‘স্থ’ ব্যবহৃত হয়। আর যদি যদি যুক্তাক্ষর ছাড়া শব্দ অর্থ প্রদান না করে। তাহলে ‘স্ত’ ব্যবহৃত হয়।
যেমন: মুখস্থ। এখানে ‘স্থ’ বাদ দিলে ‘মুখ’ শব্দটি অবশিষ্ট থাকে। আর তা অর্থ প্রদান করে। সুতরাং এক্ষেত্রে ‘স্থ’ ব্যবহৃত হবে। অনুরূপভাবে ‘বিন্যস্ত’ শব্দটি। এখানে ‘স্ত’ বাদ দিলে ‘বিণ্য’ শব্দটি অবশিষ্ট থাকে। আর তা কোন অর্থ প্রদান করে না। সুতরাং এতে ‘স্ত’ ব্যবহৃত হবে।
সমাপিকা ক্রিয়া ও অসমাপিকা ক্রিয়া:
বাক্য সমাপ্ত হওয়ার দিক বিবেচনার ক্রিয়া দুই প্রকার।
১. সমাপিকা ক্রিয়া
২. অসমাপিকা ক্রিয়া
সমাপিকা ক্রিয়া: যে ক্রিয়া পদের দ্বারা বাক্য সমাপ্ত হয়। তাকে সমাপিকা ক্রিয়া বলে।
যেমন: সে সকালে ঘুম থেকে ওঠে।
অসমাপিকা ক্রিয়া: যে ক্রিয়া পদের দ্বারা বাক্য সমাপ্ত হয় না। বরং এরপর আরেকটি ক্রিয়াপদ অবশিষ্ট থাকে। তাকে অসমাপিকা ক্রিয়া বলে।
যেমন: সে ঘুম থেকে উঠে মুখ ধৌত করে।
সমাপিকা ক্রিয়ায় ‘ও’ অথবা ‘ে া’ ব্যবহৃত হয়।
যেমন: সে সকালে ঘুম থেকে ওঠে। তুমি কিতাব খোলো।
আর অসমাপিকা ক্রিয়ায় ‘উ’ অথবা ‘ু’ ব্যবহৃত হয়।
সমাপিকা ক্রিয়ার শেষে যদি ‘বে’ বা ‘ছে’ থাকে। তাহলে প্রথম অক্ষরে ব্যবহৃত ‘ে া’ টি ‘ু’ দ্বারা পরিবর্তন হয়ে যায়।
যেমন: সে কিতাব খুলছে। এখানে খোলা থেকে ‘খোলছে’ হওয়ার কথা ঠিক। কিন্তু তা হয়নি। বরং ‘খুলছে’ ব্যবহৃত হয়েছে।
অর্থের ভেদাভেদ:
কালো/কাল:
কাল আমি বাড়ি যাবো।
কালো রঙের পাখিটি বেশ সুন্দর।
মত/মতো:
এতে তোমার মত (মতামত) কি?
তোমার মতো (সাদৃশ্য) কেউ নেই।
হল/হলো:
এটা কি পরীক্ষার হল?
এটা কি কোনো পরীক্ষার হলো? (পরীক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে।)
কেন/কোনো:
এই কাজটি কেন করলে?
এই বইটি কেনো (ক্রয় করো।)
কোণ/কোন/কোনো:
কোণে গিয়ে আমি দেখলাম একটি সুন্দর মহিলা বসতি করছে একটি ছোট্ট কুঁচকট কুটিরে।
কোনটা কিনছ? (নির্দিষ্ট অর্থে)
কোনোটা কিনছ? (অনির্দিষ্ট অর্থে)
ভাল/ভালো:
আমার ভাল থেকে ঘাম ঝড়ছে।
এটি ভালো খাবার।
অনুরূপভাবে, হত (আহত), হতো (হওয়া), বাধা (প্রতিহত করা), বাঁধা (প্যাঁচানো) শব্দের অর্থে পার্থক্য রয়েছে।
সাধু ও চলিত সংমিশ্রণ:
সাধু এবং চলিত উভয়ভাবে বাংলা ভাষায় ভাব প্রকাশ করা যায়। এক্ষেত্রে পুরো বাক্য সাধু কিংবা চলিত ভাষায় প্রকাশ করতে হবে। সাধু ও চলিত ভাষার সংমিশ্রণ মারাত্মক একটি ভুল।
যেমন: আমি তার সঙ্গে ঘুরতেছি। এখানে ‘ঘুরতেছি’ শব্দটি সাধু শব্দ। অপর দিকে ‘তার’ শব্দটি চলিত। এখানে সাধু ও চলিত শব্দের সংমিশ্রণ বিদ্যমান। যা মারাত্মক একটি ভুল।
নিম্নে সাধু ও চলিত শব্দের তালিকা প্রদান করা হলো:
সাধু শব্দ | চলিত শব্দ |
---|---|
লক্ষ ন্যায় বাহিরে বিবাহ ব্যতীত নিকটে পিছনে ভিতরে বিকালে হিসাব পড়তেছিলাম খাইতেছিলাম তাহার তাহাদের তাহারা তাহাকে কাটিছে ইহাদের,ইহাদিগের উহারা উহাদের,উহাদিগের যাহা তাহা যাহাদের কাহাদের কেহ হস্ত কর্ণ নাসিকাওষ্ঠ কফোণি মণিবন্ধ ঘৃত ব্যাঘ্র শৃগাল হস্তী পক্ষী মৎস্য অগ্নি অদ্য তজ্জন্য অদ্যাপি কদাচ, কদাচিৎ তথাপি নচেৎ,নতুবা প্রায়শ,প্রায়শঃ যদ্যপি কুত্রাপি কিঞ্চিৎ ইত্যবসরে ইত্যবকাশে যদর্থেহাসিতেছি করিতেছি হাসিতেছিস করিতেছিসকরিতেছেন হাসিতেছেন হাসিতেছে করিতেছে হাসিয়াছি করিয়াছি হাসিয়াছিস করিয়াছিস হাসিয়াছিস করিয়াছিস হাসিয়াছেন করিয়াছেন হাসিয়াছে করিয়াছে হাসিলাম করিলাম হাসিলে করিলে হাসিনি করিলি হাসিল করিল হাসিতেছিলাম করিতেছিলাম হাসিতেছিলে করিতেছিলে হাসিতেছিলি করিতেছিলিহাসিতেছিলেন করিতেছিলেন হাসিতেছিল করিতেছিল হাসিয়াছিলাম করিয়াছিলাম হাসিয়াছিলে করিয়াছিলে করিয়াছিলি হাসিয়াছিলেন করিয়াছিলেন হাসিয়াছিল করিয়াছিল হাসিব করিব হাসিবে করিবে হাসিবি করিবি হাসিবেন করিবেন হাসিবে করিবে |
লাখ মত বাইরে বিয়ে ছাড়া কাছে পেছনে ভেতরে বিকেলে হিসেব পড়ছিলাম খাচ্ছিলাম তার তাদের তারা তাকে এরা এদের ওরা ওদের যা তা যাদের কাকে কেউ হাত কান নাকঠোঁট কনুই কবজি ঘি বাঘ শেয়াল হাতি পাখি মাছ আগুন আজ সে কারণে আজও কখনো তবুও নইলে,নাহলে প্রায়ই যদিও কোথাও কিছু, কিছুটা, কিঞ্চিৎ এই সুযোগে এই সুযোগে যে কারণেহাসছি করছি হাসছিস করছিসকরছেন হাসছেন হাসছে করছে হেসেছি করেছি হেসেছিস করেছিস হেসেছিস করেছিস হেসেছেন করেছেন হেসেছে করেছে হাসলাম, হাসলুম করলুম হাসলে করলে হাসলি করলি হাসলো করলো, করলে হাসছিলাম করছিলাম হাসছিলে করছিলে হাসছিলি করছিলিহাসছিলেন করছিলেন হাসছিল করছিল হেসেছিলাম করেছিলাম হেসেছিলে করেছিলে হেসেছিলি করেছিলি হেসেছিলেন করেছিলেন হেসেছিল করেছিল হাসবো করবো হাসবে করবে হাসবি করবি হাসবেন করবেন হাসবে করবে |