বাংলা ফন্ট ডিজাইনের পূর্বে এর কিছু কৌশল রপ্ত করতে হয়। কৌশল অবলম্বনে যেমনিভাবে ফন্ট সুন্দর দেখা যায়, তেমনিভাবে এর আকার-আকৃতিও ঠিক থাকে। এমনই কিছু কৌশল নিয়ে আজকের আয়োজন। বাংলা বর্ণমালায় মোট ৫০টি বর্ণ রয়েছে। বর্ণমালাগুলো হলো:
অ, আ, ই, ঈ, উ, ঊ, ঋ, এ, ঐ, ও, ঔ
ক, খ, গ, ঘ, ঙ, চ, ছ, জ, ঝ, ঞ, ট, ঠ, ড, ঢ, ণ, ত, থ, দ, ধ, ন, প, ফ, ব, ভ, ম, য, র, ল, শ, ষ, স, হ, ড়, ঢ়, য়, ৎ, ং, ঃ, ঁ
ভালোভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, বর্ণমালাগুলোর অধিকাংশই আকৃতিগত ভাবে একটি অপরটির সাথে মিল রাখে। যেমন: ‘ব, র, ক’ বর্ণগুলোর আকৃতি একইরকম; এমনিভাবে ‘ড, ড়, জ’ বর্ণগুলোর আকৃতি একইরকম।
বাংলা ফন্ট ডিজাইনের সহজ কৌশল:
সুতরাং যদি প্রথমে ‘ব’ বর্ণ ডিজাইন করা হয়। তাহলে এর উপর ভিত্তি করে ‘র, ৰ, ৱ, ধ, ক, ঝ, ঋ’ বর্ণগুলো নিমিষেই ডিজাইন হয়ে যাবে। ফন্ট ফিনিশিংয়ের জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
যদি প্রতিটি বর্ণ আলাদাভাবে ডিজাইন করা হয়। তাহলে একেকটির আকৃতি একের রকম হবে। ফলে ফন্টটি দেখতেও অসুন্দর দেখাবে।
এক বর্ণ থেকে একাধিক বর্ণ ডিজাইন:
নিন্মে বর্ণগুলো ডিজাইনের তালিকাটি অনুসরণ করলে অতি সহজে ফন্ট ডিজাইনের জটিল বিষয় সমাধান হয়ে যাবে।
ত= ত, থ, ভ অ, আ, ও, এ
হ= হ, ই, ঈ
ড= ড, জ, উ, ঊ, ঙ, ড়, ন
ঢ= ঢ, ঢ়, ট, চ, ছ
ব= ব, র, ৰ, ৱ, ধ, ক, ঝ, ঋ
য= য, খ, ঘ, ষ, য়, ফ
এ= এ, ঐ, ঞ
ন- ন, ণ
উক্ত বর্ণগুলোর ডিজাইন শেষ হলে বাকি থাকবে ‘গ, ঠ, দ, প, ম, ল, শ, স, ৎ, ং, ঃ, ঁ’ বর্ণগুলো। সকল বর্ণের ডিজাইন সম্পন্ন হলে প্রাথমিক বাংলা ফন্ট ডিজাইন সম্পন্ন হয়ে যাবে।
বাংলা ফন্ট ডিজাইনের দ্বিতীয় ধাপ:
বাংলা ফন্ট ডিজাইনের দ্বিতীয় ধাপে প্রতিটি বর্ণের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। যেন তা সামাঞ্জস্যপূর্ণ থাকে। মাত্রাতিরিক্ত দৈর্ঘ্য-প্রস্থ ফন্টের আকৃতিগত সৌন্দর্য নষ্ট করে দেয়।
আকার ভেদে বর্ণের প্রস্থ কম-বেশী হতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ: ‘ব, র, ৰ, ৱ’ বর্ণগুলোর প্রস্থ সমান হবে। যেহেতু বর্ণগুলোর ডানে বা বামে অতিরিক্ত কোনো অংশ নেই। সে তূলনায় ‘ক, ঝ, ঋ’ বর্ণগুলো প্রশস্ত হবে। কেননা, ‘ক’ বরর্ণের ডানে অতিরিক্ত অংশ রয়েছে। ’ঝ’ এবং ‘ঋ’ এর ডানেও অতিরিক্ত অংশ রয়েছে। বাংলা ফন্ট ডিজাইনে বিষয়টি লক্ষণীয়।
বর্ণের দৈঘ্য-প্রস্থ নির্ধারণের সহজ পদ্ধতি:
সহজে বর্ণের সঠিক দৈঘ্য-প্রস্থ নির্ধারণের জন্য আপনার ডিজাইন করা ফন্টটি মূলধারা / প্যারাগ্রাফ বাংলা ফন্টের ভিত্তি করে তৈরি করতে পারেন। এটি করার জন্য Adobe Illustrator এ যেকোন প্যারাগ্রাফ বাংলা ফন্টকে নিচে রাখুন এবং opacity: 30% এ রেখে লক করে দিন।
এবার আপনার ডিজাইনকৃত ফন্টকে তার উপর রেখে দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ নির্ধারণ করুন। এভাবে সহজেই প্রতিটি বর্ণের সঠিক দৈঘ্য-প্রস্থ নির্ধারণ করা সম্ভব।
ব = ব, র, ৰ ৱ
বর্ণগুলোর তুলনায় প্রশস্ত হবে ঋ, ক, ঝ বর্ণগুলো। কেননা, এ বর্ণগুলোর পার্শ্বে অতিরিক্ত অংশ রয়েছে। ‘ব’ বর্ণের থেকে একটু প্রসস্ত হবে ‘ঢ’ জাতীয় বর্ণমালাগুলো।
ঢ= ট, ঢ, ঢ়, চ
উক্ত বর্ণগুলোর তুলনায় ‘ছ’ বর্ণটি একটু প্রশস্ত হবে । ‘ঢ’ বর্ণ থেকে একটু প্রশস্ত হবে ‘য; জাতীয় মুক্ত বর্ণমালাগুলো।
য= য, য়, খ, ঘ, ষ, থ
উক্ত বর্ণগুলোর তুলনায় প্রশস্ততা বৃদ্ধি পাবে ‘ফ’ বর্ণের। য বর্ণের থেকে একটু প্রশস্ত হবে ‘ন’ জাতীয় বর্ণগুলো।
ন= ন, ণ, হ, ই
তবে, ‘ন’ বর্ণের থেকে একটু প্রশস্ত হবে ‘ম, গ, প’ এবং ঈ বর্ণগুলো। অত:পর, ‘ন’ বর্ণের থেকে একটু প্রশস্ত হবে ‘ড’ জাতীয় বর্ণগুলো।
ড= ড, ড়, ঙ, ভ, স
‘ড’ বর্ণ থেকে প্রসস্থ হবে ‘উ, ঊ, জ, শ এবং ল’ বর্ণগুলো। ‘ড’ বর্ণের থেকে একটু প্রসস্ত হবে ‘ত’ জাতীয় বর্ণগুলো।
ত= ত, ও, এ
’ত’ থেকে প্রসস্থ হবে অ, আ, ঐ, ঔ এবং ঞ বর্ণগুলো।
ফন্ট দৃষ্টিনন্দন করার পদ্ধতি:
যদি আপনি একজন টাইপফেস ডিজাইনার হন। তাহলে ফন্ট ডিজাইনে আপনাকে বিষয়টি ভালো ভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে, আপনার তৈরিকৃত ফন্ট দিয়ে সবকিছু লেখা যায়। ফন্টের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত বোল্ট অথবা অতিরিক্ত লাইট সুন্দর্য নষ্ট করে দেয়। তবে, ফন্টের একাধিক ভেরিয়েন্ট হলে তা ভিন্ন বিষয়।
রেগুলার ফন্ট ডিজাইনের জন্য Adobe Illustrator এ যেকোন প্যারাগ্রাফ বাংলা ফন্টকে নিচে রাখুন এবং opacity: 30% এ রেখে লক করে দিন।
অতঃপর উক্ত ফন্টের আকৃতির প্রশস্থতা অনুসরণ করে আপনার ডিজাইনকৃত বাংলা ফন্টের আকৃতির প্রসস্থতার মিল রাখুন।
আপনি উপরোল্লিখিত পদ্ধতি অনুসারে ডিজাইন করতে পারেন। এতে করে আপনার বাংলা ফন্ট ডিজাইনটি বেশ সুন্দর দেখাবে। আপনি যদি ক্রিপ্ট ফন্ট ডিজাইন করেন। তাহলে, এ নিয়ম অনুসরণ করাটা আপনার জন্য অত্যাবশ্যকীয় নয়। তবে, প্যারাগ্রাফ ফন্টের জন্য অনুসরণীয়।