মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা. যখন জানতে পারলেন যে, আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে কুরাইশদের বড় ব্যবসায়ী কাফেলা সিরিয়া থেকে মক্কার দিকে ফিরছে। মক্কায় মুহাজিরদের মাল যেভাবে কুফেররা জবরদখল করেছিল, মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বদলায় তাদের উপর আক্রমণ করার দৃঢ় সংকল্প করেন।
আবু সুফিয়ান বিষয়টি বুঝতে পেরে কাফেলা নিয়ে পালিয়ে গেল এবং মক্কায় দ্রুত সাহায্য তলবের জন্য একজন দূত প্রেরণ করেন। কুরাইশরা তাদের ব্যবসায়ী কাফেলা রক্ষার্থে সৈন্য দল নিয়ে বেড়িয়ে পড়ল। আবু সুফিয়ান সেখান থেকে পালাতে করতে সক্ষম হন। কাফেলা রক্ষায় বেরিয়ে পড়া লোকদেরকে তিনি মক্কায় ফিরে আসার আহ্বান জানান।
তবে কুরাইশ নেতৃবর্গ, যাদের শীর্ষে আবু জাহেল রয়েছে; মুসলমানদের সাথে লড়াইয়ের জন্য পিড়াপীড়ি করতে লাগলো। এমনকি তারা তাদের দলবল নিয়ে মদিনায় পৌঁছল। যাদের সংখ্যা ছিল এক হাজারের কাছাকাছি।
বদর ময়দানে মহানবী সা.-এর গমন:
মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম কুরাইশদের সৈন্যবাহিনী প্রতিহত করার জন্য ৩১৩ জন মুহাজির ও আনসার সাহাবী নিয়ে বেরিয়ে পড়েন। মুসলমানদের সেদিন মাত্র ৭০ টি উট ছিল। যেগুলোর উপর তারা পালাক্রমে আরোহণ করত। মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা., আলী রা. এবং মারসাদ ইবনে আবী মারসাদ একটি উটে পালাবদল করে আরোহণ করতেন।
হযরত আলী রা. ও মারসাদ রা. একমত হলেন যে, তারা পুরো সফর পায়ে হেঁটে করবেন। যেন মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম উটে আরোহণ করে সফর করতে পারেন। মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা. তাদের এই প্রস্তাব প্রত্যাখান করে বলেন: তোমরা দুজন পায়ে হাঁটতে আমার থেকে অধিক শক্তিশালী নও। আর আমিও প্রতিদানের বেলায় তোমাদের চেয়ে অধিক মুখাপেক্ষী।
বদর যুদ্ধের সূচনা
রমজান মাসের ১৭ তারিখ রোজ শুক্রবার মুসলমানগণ মুশরিকদের সাথে বদর প্রান্তরে প্রথম লড়াই লিপ্ত হন। এই মহান দিবসে আল্লাহ তায়ালা ইসলামকে সম্মানিত করেছেন, মুসলমানদের পতাকা উড্ডীন করেন।
বদরে যুদ্ধের ফলাফল
যখন সাহাবাগণ ধৈর্য ধারণ করলেন এবং অবিচল রইলেন, আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে ৫ হাজার ফেরেশতার মাধ্যমে সাহায্য করেন; যারা তাদের সাথে বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। এই দিনে মুশরিকদের থেকে ৭০ জন নিহত হয়, ৭০ জন বন্দী হয়েছে আর মুসলমানদের থেকে কেবল ১৪ জন শহীদ হন; যাদের ছয় জন ছিলেন মুহাজির আর আট জন ছিলেন আনসার।
বদরের প্রান্তরে আবু জাহেল নিহত হলো যেভাবে:
মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা. মক্কায় ১৩ বছর আল্লাহর প্রেরিত দ্বীন প্রচার করেন। এতে তিনি বহু কষ্টের শিকার হয়েছেন। মক্কার কুফফারদের মধ্য থেকে যারা মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা. কে সর্বদা কষ্ট দিত। আবু জাহল তাদের মধ্যে অন্যতম। আবু জাহল ইসলামের সূর্যকে চিরতরে নিভিয়ে দেওয়ার জন্য এক হাজার সৈন্য নিয়ে মক্কা থেকে মদিনার উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
বদর যুদ্ধে আবু জাহল সহ মক্কার কাফেরদের বৃহৎ একটি নিহত হয়। যার বিবরণ হল এই যে, হযরত মুয়াজ এবং মুআওয়াজ (রা.) পূর্ব থেকে শপথ নিয়েছিলেন যে, যদি তারা আবু জাহেলকে দেখতে পায়; তাহলে তারা তাকে হত্যা করবে।
অবশেষে বদর যুদ্ধে তারা কাঙ্ক্ষিত সুযোগটি তারা পেয়ে যায়। উভয়ের আবু জাহলের উপর এক যুগে আক্রমণ করে বসে। তাদের আক্রমণের ফলে আবু জাহেল মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা. আবু জাহেল কোন অবস্থায় রয়েছে? তা জানতে চাইলে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. আবু জাহেলের সন্ধানে বেরিয়ে আসেন। তিনি আবু জাহেলকে তার অন্তিম মুহূর্তে পান।
তিনি তরবারির আঘাতে আবু জাহলের মাথা ছিন্ন করে ফেলেন। ফলে আবু জাহেলের প্রাণ বাইরে বের হয়ে যায়।
আবু জাহেলের হত্যাকারী কে?
আবু জাহেলের হত্যাকারী হলেন মুয়াজ রা. এবং মুআওয়াজ রা. ।
ইসলামে নারীর মর্যাদা
বদর যুদ্ধের পর বনু কায়নুকার ইহুদিরা মুসলমানদের উপর প্রকাশ্যভাবে দুঃসাহস দেখাতে লাগলো। এমনকি বদর যুদ্ধে মুসলমানদের মহান বিজয় কে তারা খাটো করে দেখতে লাগলো। এরই মধ্যে একজন মুসলিম নারী বনু কায়নুকার বাজারে এক ইহুদি স্বর্ণকারের দোকানে গিয়ে দরদাম করছিল। ইহুদি মহিলার মুখ খুলতে বললে মুসলিম মহিলাটি তা স্বীকার করল।
গাদ্দার ইহুদিটি উঠে গিয়ে মহিলার কাপড় আঁচল তার পিঠের সাথে বেঁধে দেয় এবং অন্যান্য ইহুদিরা বিষয়টি নিয়ে হাসাহাসি করতে লাগলো। মহিলাটি চিৎকার করে বলে উঠলো: ইসলাম কোথায়!
তা দেখে মুসলমান এক ব্যক্তি সেই স্বর্ণকারের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাকে হত্যা করে। উপস্থিত ইহুদিরা সে ব্যক্তিকে ধীরে ফেলল। এক পর্যায়ে তারা তাকে হত্যা করল।
বনু কায়নুকায় যুদ্ধ
মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা. বিষয়টি সম্পর্কে অবগত হলে সৈন্য বাহিনী প্রস্তুত করেন এবং বনু কায়নুকার ইহুদীদের কে প্রচণ্ড ভাবে বয়কট করেন। এই বয়কট লাগাতার ১৫ ছিল অব্যাহত ছিল। অবশেষে তারা নতি স্বীকার করে এবং মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশে নিচে অবতরণ করল। মুনাফিক সর্দার আব্দুল্লাহ বিন সালুল তাদেরকে ক্ষমা করে দেওয়ার ব্যাপারে পিড়াপীড়ি করতে থাকেন।
অবশেষে তিনি তার ডাকে সাড়া দেন এবং ইহুদিদেরকে মদিনা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। অতঃপর ইহুদিরা মুসলমানদের জন্য সম্পদ অবশিষ্ট রেখে তাদের নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের সাথে নিয়ে মদিনা থেকে বেড়িয়ে যান। এভাবেই ইহুদিরা মদিনা থেকে বহিস্কৃত হয়।