ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত, মাকরুহ, মুস্তাহাব, নফল, মুবাহ, হারাম ইত্যাদি ইসলামি ফিকহের পরিভাষা। ফিকহে বিধি-বিধান বর্ণনা করার জন্য এ সকল পরিভাষা ব্যবহার করা হয়। জন সাধারণের নিকট পরিভাষাগুলো অস্পষ্ট বিধায় স্পষ্টকরণে প্রতিটির পরিচয় তুলে ধরা হলো।
ফরজ এর পরিচয়, প্রকারভেদ ও হুকুম:
ফরজ: অকাট্য দলিল দ্বারা প্রমাণিত বিধানকে ফরজ বলে। যেমন: নামাজ আদায় করা, রোজা রাখা, হজ পালন করা ইত্যাদি।
ফরজের প্রকারভেদ: ফরজ দুই প্রকার। যথা: ১. ফরজে আইনী। ২. ফরজে কিফায়া।
ফরজে আইনী বলা হয়: যা আদায় করা সকলের উপর ফরজ। কেউ আদায় না করলে সে ব্যক্তি গোনাহগার হবে। যেমন: পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা।
ফরজে কিফায়া বলা হয়: যা আদায় করা সকলের উপর ফরজ নয়। বরং কতিপয় ব্যক্তি আদায় করলে সকলের পক্ষ থেকে তা আদায় হয়ে যায়। কেউ আদায় না করলে সকলেই গোনাহগার হবে। যেমন: জানাজার নামাজ।
ফরজ বিধান অস্বীকারের হুকুম: ১. ফরজ বিধান পরিত্যাগকারী ফাসিক ও শাস্তির যোগ্য। ২. কেউ যদি কোনো ফরজ বিধান অস্বীকার করে বা তা নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ করে; তাহলে সে মুরতাদ হয়ে যায়। তার তওবা করা পুনরায় ইসলাম গ্রহণ করা আবশ্যকীয়।
ওয়াজিব এর পরিচয় ও হুকুম:
ওয়াজিব: দলিলে জন্নী দ্বারা প্রমাণিত বিধানকে ওয়াজিব বলা হয়।
ওয়াজিব বিধান অস্বীকারের হুকুম: কেউ যদি বিনা ওজরে ওয়াজিব বিধান পরিত্যাগ করে; তাহলে সে ফাসেক হিসেবে গণ্য হবে। কেউ ওয়াজিব বিধান অস্বীকার করলে সে ফাসেক হিসেবে গণ্য হবে।
সুন্নত এর পরিচয়, প্রকারভেদ ও হুকুম:
সুন্নত: রাসুল সা. ও সাহাবায়ে কেরাম রা. এর কর্মকে সুন্নত বলে।
সুন্নত দুই প্রকার। যথা: ১. সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। ২. সুন্নতে গাইরে মুয়াক্কাদাহ।
সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ: এমন কাজ, যা রাসুল সা. এবং সাহাবা রা. সর্বদা করতেন। এবং ওজর ছাড়া কখনো পরিত্যাগ করেন নি।
সুন্নতে গাইরে মুয়াক্কাদাহ: সুন্নতে গাইরে মুয়াক্কাদাহ বলা হয় এমন সুন্নত কে; যা রাসুল সা. এবং সাহাবা রা. ওজর ব্যতীত কখনো কখনো পরিত্যাগ করেছেন।
সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ এর হুকুম: বিনা ওজরে সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ পরিত্যাগকারী এবং অভ্যস্ত ব্যক্তি ফাসেকরূপে গণ্য হবে।
সুন্নতে গাইরে মুয়াক্কাদাহ এর হুকুম: এরূপ সুন্নত পরিত্যাগকারী ফাসেক এবং শাস্তিযোগ্য নয়। এই সুন্নতকে সুন্নতে জায়েদাও বলা হয়।
মুস্তাহাব এর পরিচয়:
মুস্তাহাব: যে কাজ রাসুল সা. এবং সাহাবা রা. অধিকাংশ সময় করেন নি; বরং মাঝে মাঝে করেছেন। তাকে নফল বলা হয়। ফিকহের পরিভাষায় একে নফল, মুস্তাহাব, মানদুব, তাতাব্বু’ ও বলা হয়।
মুস্তাহাব এর হুকুম: মুস্তাহাব কাজ আদায়কারী সওয়াবের অধিকারী হবে। কেউ যদি তা পরিত্যাগ করে; তাহলে তার কোনো গুনাহ হবে না।
হারাম এর পরিচয়:
হারাম: যে সকল কাজ নিষিদ্ধ হওয়া অকাট্য দলিল দ্বারা প্রমাণিত। তাকে হারাম বলে। যেমন: মদ পান করা। ব্যভিচার করা। পর্দার বিধান লঙ্ঘন করা।
হারাম এর হুকুম: ওজর ব্যতীত হারাম কাজে লিপ্ত ব্যক্তি ফাসিক এবং শাস্তির যোগ্য। হারাম অস্বীকারকারী ব্যক্তি মুরতাদ হিসেবে গণ্য হবে।
মাকরুহ এর পরিচয়, প্রকার ও হুকুম:
মাকরুহ দুই প্রকার। যথা: ১. মাকরুহে তাহরীমী। ২. মাকরুহে তানজীহী।
মাকরুহে তাহরীমী: দলিলে জন্নী দ্বারা যে সকল বিধান নিষিদ্ধ হওয়া প্রমাণিত; তাকে মাকরুহে তাহরীমী বলে।
মাকরুহে তাহরীমী এর হুকুম: বিনা ওজরে মাকরুহে তাহরীমীর কাজে লিপ্ত ব্যক্তি এবং এর অস্বীকারকারী ফাসেক।
মাকরুহে তানজীহী: মাকরুহে তানজীহী বলা হয় এমন কাজকে, যা করলে সওয়াব হয় আর না করলে গুনাহ নেই।
মুবাহ এর পরিচয়:
মুবাহ: মুবাহ বলা হয় এমন কাজকে; যা করা এবং না করা উভইটিই সমান। অর্থাৎ করলেও সওয়াব নেই এবং না করলেও সওয়াব নেই।