ইসলামে যুদ্ধের বিধান নাজিল হওয়ার পর মুসলমানদের উপর তা ফরজ হয়ে যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) কখনো সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতেন, আবার কখনো সৈন্য প্রেরণ করতেন। নববী যুগে সংঘটিত যুদ্ধগুলো দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়:
- গাজওয়া: যে যুদ্ধে রাসুলুল্লাহ (সা.) স্বশরীরে উপস্থিত ছিলেন।
- সারিয়া: যে যুদ্ধে তিনি উপস্থিত ছিলেন না, বরং সৈন্য প্রেরণ করেছিলেন।
গাজওয়া ও সারিয়ার মাঝে পার্থক্য
গাজওয়া:
যে যুদ্ধে রাসুলুল্লাহ (সা.) সরাসরি উপস্থিত ছিলেন, তা গাজওয়া নামে পরিচিত। এতে যুদ্ধ সংঘটিত হোক বা না হোক, রাসুলুল্লাহ সা.-এর উপস্থিতি গাজওয়ার বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ করে।
সারিয়া:
যে যুদ্ধে রাসুলুল্লাহ (সা.) সরাসরি উপস্থিত ছিলেন না, বরং সৈন্য পাঠিয়েছিলেন, সে যুদ্ধকে সারিয়া বলা হয়। চাই যুদ্ধ সংঘটিত হোক বা না হোক।
গাজওয়া ও সারিয়ার মোট সংখ্যা:
রাসুল (সা.)-এর যুগে সংঘটিত যুদ্ধের সংখ্যা নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে। কারণ, কখনো একই সফরে একাধিক যুদ্ধ সংঘটিত হলে কেউ একত্রে, আবার কেউ আলাদাভাবে গণনা করেছেন। ফলে গাজওয়া ও সারিয়ার সংখ্যায় ভিন্নতা দেখা দেয়। উদাহরণস্বরূপ, মক্কা বিজয়ের সময় তায়েফ, হুনাইন এবং আউতাস যুদ্ধ সংঘটিত হয়। কেউ কেউ এগুলো একত্রে ভাবে গণনা করেন। আবার কেউ আলাদা ভাবে গণনা করেন
গাজওয়ার সংখ্যা:
- ইমাম মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক (রহ.): ২৭টি।
- সাঈদ ইবনুল মুসাইয়্যাব (রহ.): ২৫টি।
- জাবের রা. (রহ.): ২১টি।
- যায়েদ বিন আরকাম (রা.): ১৯টি।
সারিয়ার সংখ্যা:
- ইবনুল বার (রহ.): ৩৫টি।
- ইমাম মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক (রহ.): ৩৮টি।
- ইবনুল জাওযী (রহ.): ৫৬টি।
গাজওয়ার হাদিস:
হযরত আবু ইসহাক (রহ.) থেকে বর্ণিত:
”আমি যায়েদ ইবনে আরকামের পাশে ছিলাম। তখন তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হল, রাসুল সা. কয়টি যুদ্ধ করেছেন? তিনি বললেন, উনিশটি। পুনরায় জিজ্ঞাসা করা হল, আপনি তাঁর সাথে কতটি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন? তিনি বললেন, সতেরটি। (আবু ইসহাক বলেন) আমি বললাম, এসব যুদ্ধের মধ্যে সর্বপ্রথম সংঘটিত হয়েছিল কোনটি? তিনি বললেন, উশায়রা বা উসায়রা। (বর্ণনাকারী বলেন) বিষয়টি আমি কাতাদা (রাহঃ)–এর কাছে আলোচনা করলে তিনিও বললেন, উশায়রা।”
– সহীহ বুখারী (আন্তর্জাতিক নং: ৩৯৪৯)
প্রথম গাজওয়া: গাযওয়াতে আবওয়া বা ওদ্দান
২য় হিজরির সফর মাসে শাম অভিমুখী কুরাইশদের বাণিজ্য কাফেলাকে প্রতিরোধ করার জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) ৬০ জন সাহাবী নিয়ে যাত্রা করেন। আবওয়া নামক স্থানে পৌঁছে তিনি জানতে পারেন যে, কাফেলা ইতোমধ্যে অতিক্রান্ত হয়েছে। ফলে তিনি সেখানে ১৫ দিন অবস্থান করে মদিনায় ফিরে আসেন।
আবওয়ার অবস্থান:
আবওয়া মক্কা ও মদিনার মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত, মদিনার নিকটবর্তী ইয়ানবু অঞ্চলের নিকটে একটি প্রসিদ্ধ জনপদ।
মুসলিম ও কাফেরদের সৈন্য সংখ্যা (ইতিহাস অনুযায়ী):
বদর যুদ্ধ:
- মুসলিম: ৩১৩ জন
- কাফের: ১০০০ জন
উহুদ যুদ্ধ:
- মুসলিম: ৭০০ জন
- কাফের: ৩০০০ জন
খন্দক যুদ্ধ:
- মুসলিম: ৩০০০ জন
- কাফের: ১২,০০০ জন
মুতা যুদ্ধ:
- মুসলিম: ৩০০০ জন
- কাফের: ১০০০
ইয়ারমুখ যুদ্ধ:
- মুসলিম: ৪০,০০০ জন
- কাফের: ২,৪০,০০০ জন
কাদেসিয়া যুদ্ধ:
- মুসলিম: ৮০০০ জন
- কাফের: ৬০,০০০ জন
স্পেন যুদ্ধ:
- মুসলিম: ৭০০০ জন
- কাফের: ১,০০,০০০ জন
সিন্ধু যুদ্ধ:
- মুসলিম: ৬০০০ জন
- কাফের: ৫০,০০০ জন
নবীজির (সা.) জীবনে সংঘটিত গাজওয়া ও সারিয়া সমূহ ইসলামী ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এসব যুদ্ধে কেবল সংখ্যা নয়, সাহস, নেতৃত্ব এবং কৌশলের মিশ্রণে ইসলামের সামরিক ইতিহাস গড়ে উঠেছে। ইসলামের বিজয়-অধিকারের ইতিহাসের প্রতিটি অংশ একেকটি শিক্ষণীয় দৃষ্টান্ত।