পৃথিবীর বুকে মুসলিম জাতিই হল সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি। আর প্রত্যেক জাতির নিজস্ব ইউনিফর্ম তথা স্বতন্ত্র প্রতীক থাকে। সুতরাং মুসলিম জাতির স্বতন্ত্র ইউনিফর্ম থাকবে। একথা সর্বজন স্বীকৃত যে, যে জাতি ইউনিফর্ম রক্ষা করে না তারা অচিরেই অন্যান্য জাতির মাঝে বিলীন হয়ে যায়।
ইতিহাস সাক্ষী যে, এদেশে তাঁতারী, তুর্কি, সুদানি প্রভৃতির জাতির আগমন ঘটেছে, কিন্তু তাদের পৃথক কোন রীতিনীতি অবশিষ্ট নেই বরং হিন্দুত্ববাদে বিলীন হয়ে গেছে। কেননা তারা নিজস্ব ইউনিফর্ম বাদ দিয়ে অন্য ইউনিফর্ম গ্রহণ করেছিল। বাস্তব ক্ষেত্রে ইউনিফর্ম এর গুরুত্ব অপরিসীম। যে কোন রাষ্ট্রের প্রতিটি বিভাগের ভিন্ন ভিন্ন ইউনিফর্ম থাকে। সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী, নৌ বাহিনী সহ বিভিন্ন সংস্থার পৃথক পৃথক না হয় তাহলে কর্ম ক্ষেত্রে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। ডিউটির সময় কাউকে যদি ইউনিফর্ম ছাড়া পাওয়া যায় তাহলে তাকে শাস্তির সম্মুখীন হতে হয়। একাধিকবার কারো বিরুদ্ধে এরকম অপরাধ প্রমাণিত হলে তাকে চাকরীচ্যুত করা হয়।
ইসলামে দাড়ি রাখার বিধান
মুসলিম জাতির জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আল্লাহ প্রদত্ত এক ডিউটিতে লিপ্ত রয়েছে তাই তাদেরকে আল্লাহ তায়ালার নির্দেশিত ইউনিফর্ম অবসর গ্রহণ করতে হবে। নতুবা তারা নাফরমান হিসেবে গণ্য হবে। এমনকি তারা ধীরে ধীরে ইসলামের গণ্ডি থেকে বের হয়ে যেতে পারে।ইসলামি এই ইউনিফর্মে দাড়ি ও পোশাক অন্যতম। এ জন্য দাড়ি রাখার বিধান ইসলামে রয়েছে।
দাড়ি রাখা কেন ওয়াজিব?
রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন: তোমরা দাড়ি লম্বা কর এবং মোচ ছোট কর। দাড়ি সংক্রান্ত এই সহিহ হাদিসটি একাধিক হাদিস গ্রন্থে বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত হয়েছে।
হযরত ওমর (রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু)-এর হাদিসে আছে – রাসুলে কারিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন: তোমরা দাড়ি লম্বা কর, গোঁফ ছোট করে রাখ। কোন কোন হাদিসে উপরোক্ত বাক্যের পূর্বে আছে: “তোমরা মুশরিকদের বিরোধিতা কর”। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর দাড়ি মোবারক ছিল কালো, ঘন ও প্রশস্ত। তাহলে বক্ষ মোবারক বাড়িতে ভরে যেতো।
দাড়ি বিহীন চেহারা নারী জাতির চেহারার সাথে সামঞ্জস্য রাখে। এ ধরনের সামঞ্জস্য অবলম্বন করা হারাম। এর দ্বারা দাড়ি রাখার প্রয়োজনীয়তা বুঝে আসে।
প্রিয় নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দাড়ি রেখেছেন এবং গোটা উম্মতকে দাড়ি রাখার প্রতি তাগিদ দিয়েছেন।
চার মাজহাবের কোনো মাজহাবে এ নিয়ে কোন বিতর্ক নেই যে, দাড়ি রাখা সুন্নত। যেমন যুগের অনেকেই ধারণা করেন এবং দাড়ি রাখার ব্যাপারে মারাত্মক অবহেলা করেন। ফলশ্রুতিতে ২৪ ঘণ্টা কবিরা গুনাহে লিপ্ত থাকেন।
এক কথায় দাড়ি লম্বা করা ওয়াজিব। আলেমদের অভিমত হল, আদেশ সূচক বাক্য দ্বারা কোন কাজকে জরুরি এবং ওয়াজিব সাব্যস্ত করা হয়। দাড়ি এক মুষ্টির ভিতরে কর্তন করা কিংবা ছাটা হারাম।
১. দাড়ি মুণ্ডানো এবং ছোট করা মুশরিক, অগ্নিসংযোগ এবং বিধর্মীদের আলামত আর মুসলমানদের জন্য বিধর্মীদের সাদৃশ্য অবলম্বন করা হারাম। হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে: যে ব্যক্তি অন্য কোন জাতির বেশভূষা, আকার-আকৃতি সাদৃশ্য অবলম্বন করবে সে ওই জাতির অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে।
-জামে সগির:২/৮
২. দাড়ি বিহীন চেহারা নারী জাতির চেহারার সাথে সামঞ্জস্য রাখে। এ ধরনের সামঞ্জস্য অবলম্বন করা হারাম। হাদিসে এরশাদ হয়েছে: আল্লাহ তায়ালা অভিসম্পাত করেন সেসব পুরুষদের উপর যারা নারীদের সাদৃশ্য গ্রহণ করে।
৩. সারাজীবন রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) লম্বা দাড়ি রেখেছেন। যদি দাড়ি মুণ্ডানো কিংবা মুষ্টি পরিমাণের আগে কর্তন করা জায়েজ হত, তাহলে তিনি সারা জীবনে কমপক্ষে একবার হলেও এটা পড়ে দেখাতেন। অথচ তার দ্বারা এটা প্রমাণিত নয়।
৪. সকল সাহাবীর দাড়ি লম্বা ছিল। কোন একটি দুর্বল হাদিসও এমন পাওয়া যায় না, যা দ্বারা বোঝা যায়, কোনো একজন সাহাবী জীবনে কখনো দাঁড়ি মুণ্ডিয়েছেন বা খাটো করেছেন।
৫. ফতোয়ায়ে শামী তে বর্ণিত হয়েছে যে, পুরুষদের জন্য দাড়ি মুণ্ডন করা হারাম।
এ বিষয়ে সম্প্রতি প্রকাশিত একটি চমকপ্রদ লেখা হচ্ছে আমেরিকান ডাক্তার চার্লস হোমারের। তিনি বলেছেন: এক ব্যক্তি দাড়ি কাটানোর জন্য বৈদ্যুতিক সুঁই আবিষ্কারের জন্য আমাকে নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে শশ্রু মুণ্ডাতে অযথা সময় ব্যয় করতে না হয়। কিন্তু এ কথা আমার বুঝে আসে না, দাড়ির নামে মানুষ কেন এত ভীত সন্ত্রস্ত হয়?
মানুষ যখন মাথায় চুল রাখে, সাথে সাথে মুখে দাড়ি রাখতে অসুবিধা কি? মাথার কোনো স্থান থেকে যদি চুল পড়ে যায় তাহলে মানুষ মাথায় টাক পড়ার কারণে লজ্জা বোধ করে।কিন্তু এটা সম্পূর্ণ হাস্যকর যে, মানুষ নিজের সম্পূর্ণ চেহারাকে ইচ্ছাকৃত টাক বানাচ্ছে। বঞ্চিত করছে নিজেকে দাড়ি হতে। এটা কতইনা লজ্জার বিষয়!
এ জন্য দাড়ি রাখার বিধান ইসলামে রয়েছে।
- দাড়ি পুরুষের জন্য সবচেয়ে উজ্জ্বল চিহ্ন।
- পুরুষের চেহারায় দাড়ি চরিত্রে দৃঢ়তা, ব্যক্তিত্বে পূর্ণতা এবং নর-নারীর মাঝে পার্থক্য সৃষ্টি করে।
- দাড়ি দৃঢ়তা এবং বীরত্বের সাক্ষ্য বহন করে।
কারণ, দাড়ি ছাড়া অন্যান্য চুল ও পশম মহিলা-পুরুষ নির্বিশেষে সবারই হয়ে থাকে। নারী জাতি দাড়িকে সম্মানের চোখে দেখে আন্তরিকভাবে। মানসিকভাবে দাড়ি বিহীন পুরুষ অপেক্ষা দাড়িওয়ালা পুরুষের প্রতি তারা বিশেষ অনুরক্ত। বাহ্যত হয়তো তাদের নিকট দাড়ি ভালো লাগে না। কিন্তু এর কারণ শুধু এটাই যে তারা ফ্যাশনে দাসী আধুনিক পোশাক বাতিকগ্রস্তা। দুর্ভাগ্যবশত বর্তমানে দাড়ি ফ্যাশন এর দরবার হতে বিদায় নিয়েছে।
দাড়ি রাখার উপকারিতা
নিন্মে কয়েকটি দাড়ি রাখার উপকারিতা তুলে ধরা হলো:
- দৃষ্টিশক্তি ঠিক থাকে
- মন্দ কাজ থেকে বিরত থাকার সহজ হয়। দাড়ির কারণে অবৈধ কাজে অংশগ্রহণে লজ্জাবোধ হয়।
- একজন মুমিন হিসেবে পরিচিত হওয়া যায়। নতুবা মুমিন এবং কাফের পার্থক্য করা মুশকিল হয়ে দাঁড়ায়।
- রাস্তাঘাটে অথবা অপরিচিত স্থানে মারা গেলে মুসলমান হিসেবে সসম্মানে তার গোসল ও কাপড় নসিব হয়।
- হাশরের ময়দানে রাসুলের উম্মত দাবি করা সহজ হবে এবং তার সুপারিশ লাভের অসিলা হবে। এছাড়া আরো অনেক উপকার রয়েছে।
দাড়ি না রাখার ক্ষতিসমূহ
দাড়ি রাখার উপকারিতাও যেমন রয়েছে; অনুরূপভাবে দাড়ি না রাখার ক্ষতিও রয়েছে। দাড়ি না রাখার কয়েকটি ক্ষতিকর দিক তুলে ধরা হলো:
- দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পেতে থাকে
- সুরা কেরাত সহিহ শুদ্ধ থাকলেও আযান, ইকামতের এবং ইমামতির যোগ্যতা থাকে না।
- অন্যান্য গোনাহ একবার করলে একবারই লেখা হয়। কিন্তু দাড়ি না রাখলে সর্বদাই গুনাহ লেখা হতে থাকে। কেননা এটা গুনাহে জারিয়ার অন্তর্ভুক্ত।
- কবরে মুনকার নাকিরের প্রশ্নোত্তর কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
শরীয়তের প্রতিটি বিধান পালন করা অত্যাবশ্যকীয়। দাড়ি রাখার বিধান ইসলামে রয়েছে। প্রতিটি মুমিন-মুসলমানের জন্য এর প্রতি যত্নবান হওয়া আবশ্যক।
ইসলামে দাড়ি রাখার বিধান ও এর উপকারী সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। আশা করছি, প্রবন্ধটি আপনাদের জন্য উপকারী ছিল। ইসলামী সমাধান দ্রুত খুঁজে পেতে ভিজিট করুন আলকাউসার.কম-এ।