আল্লাহ তায়ালার সৃষ্ট মাখলুক সমূহের মধ্য হতে জিন হচ্ছে এক প্রকার মাখলুক। যাদেরকে আল্লাহ তায়ালা আগুন থেকে সৃষ্টি করেছেন। পৃথিবীতে মানুষ ছাড়াও বিভিন্ন প্রকার মাখলুকাত বসবাস করে। চাই সেগুলো আমরা স্বচক্ষে দেখতে পাই অথবা না পাই। কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তায়ালা বলেন:
وَ مَا خَلَقۡتُ الۡجِنَّ وَ الۡاِنۡسَ اِلَّا لِیَعۡبُدُوۡنِ
আর আমি জিন এবং মানব জাতিকে আমার ইবাদাত করার জন্য সৃষ্টি করেছি। সূরা: আয যারিয়াত – ৫৬
এ ছাড়া জিনদের সম্পর্কে বহু আয়াত ও হাদিস বর্ণিত রয়েছে। ‘সূরাতুল জিন’ নামে স্বতন্ত্র একটি সূরাও রয়েছে।
আল্লাহ তায়ালা কুরআনুল কারীমে বলেন:
وَخَلَقَ الۡجَآنَّ مِنۡ مَّارِجٍ مِّنۡ نَّارٍ ۚ
আর জিনদেরকে সৃষ্টি করেছেন আগুনের শিখা দ্বারা। সূরা: আর রহমান – আয়াত নং: ১৫
قُلۡ اُوۡحِیَ اِلَیَّ اَنَّہُ اسۡتَمَعَ نَفَرٌ مِّنَ الۡجِنِّ فَقَالُوۡۤا اِنَّا سَمِعۡنَا قُرۡاٰنًا عَجَبًا ۙ
(হে রাসূল!) বলে দিন, আমার কাছে ওহী এসেছে যে, জিনদের একটি দল মনোযোগ সহকারে (কুরআন) শুনেছে অতঃপর (নিজ সম্প্রদায়ের কাছে গিয়ে) বলেছে, আমরা এক বিস্ময়কর কুরআন শুনেছি। সূরা: আল জিন – আয়াত নং: ১
উপরোক্ত আয়াতগুলো জিন জাতির অস্তিত্বের প্রমাণ বহন করে।
জিন জাতির প্রকারভেদ:
জিনদের মধ্যে ভালো-মন্দ উভয় প্রকারেরই জিন রয়েছে। ভালো জিনেরা সর্বদা ভালো কাজ করে, আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন থাকে। কারো কোনো প্রকার ক্ষতি সাধন করে না। অপরদিকে মন্দ জীনেরা নানা প্রকার অপকর্মে জড়িত থাকে। মানুষের ক্ষতি সাধন করে।
সুতরাং দৈনন্দিন জীবনে কুরআন ও হাদিসে বর্ণিত বিভিন্ন দোয়া ও আমলের মাধ্যমে সে সব দুষ্ট জীনদের অনিষ্টতা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
জিনের আছর ও অনিষ্টতা থেকে বাঁচার আমল
জিনের আছর ও অনিষ্টতা থেকে বাঁচতে হলে নিম্নোক্ত দোয়া ও আমলগুলোতে নিজেকে সর্বদা অভ্যস্ত করে তুলতে হবে। আশা করা যায়, জীনদের অনিষ্টতা থেকে আল্লাহ তায়ালা আপনাকে রক্ষা করবেন।
শৌচাগার / টয়লেটে প্রবেশের সময়ের দোয়া
নোংরা ও অপরিচ্ছন্ন জায়গা দুষ্ট জিনদের আবাসস্থল। তাই শৌচাগার / টয়লেটে প্রবেশের সময় দুষ্ট জিনদের অনিষ্টতা থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য দোয়া পড়তে হয়। দোয়া পাঠের ফলে শৌচাগারে বিদ্যমান থাকা জিন ও মানুষের মধ্যে আল্লাহ তায়ালা অন্তরাল সৃষ্টি করে দেন। ফলে সে মানুষের কোনো ক্ষতি করতে পারে না।
للَّهُمَّ إِنِّى أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْخُبْثِ وَالْخَبَائِثِ
উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল খুবসি ওয়াল খাবা-ইস।
অর্থ : হে আল্লাহ, আমি আপনার নিকট দুষ্ট পুরুষ-জ্বিন ও দুষ্ট নারী-জ্বিনের অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। (বুখারি, হাদিস : ১৪২ )
সকাল-সন্ধ্যা সূরা, ইখলাস, ফালাক ও নাস পাঠ করা
সকাল-সন্ধ্যা সূরা, ইখলাস, ফালাক ও নাস পাঠ করার মাঝে বিশেষ ফজিলত রয়েছে। এর দ্বারা জীনের আছর থেকে রক্ষা পাওয়া যায় এবং যাদুগ্রস্থ ব্যক্তি জাদু থেকে মুক্তি পেতে পারেন। তাই দৈনিক ফজর ও মাগরিবের নামাজ আদায়ের পর তিন বার সূরা ইখলাস, তিন বার সূরা ফালাক ও তিন বার সূরা নাস পাঠ করতে হবে।
সূরা ইখলাস বাংলা উচ্চারণসহ:
قُلۡ ہُوَ اللّٰہُ اَحَدٌ ۚ
কুল হুওয়াল্লা-হু আহাদ।
اَللّٰہُ الصَّمَدُ ۚ
আল্লা-হুসসামাদ।
لَمۡ یَلِدۡ ۬ۙ وَلَمۡ یُوۡلَدۡ ۙ
লাম ইয়ালিদ, ওয়ালাম ইঊলাদ।
وَلَمۡ یَکُنۡ لَّہٗ کُفُوًا اَحَدٌ
ওয়া লাম ইয়াকুল্লাহূকুফুওয়ান আহাদ।
সূরা ইখলাস বাংলা উচ্চারণসহ:
قُلۡ اَعُوۡذُ بِرَبِّ الۡفَلَقِ ۙ
কুল আ‘ঊযুবিরাব্বিল ফালাক
مِنۡ شَرِّ مَا خَلَقَ ۙ
মিন শাররি মা-খালাক।
وَمِنۡ شَرِّ غَاسِقٍ اِذَا وَقَبَ ۙ
ওয়া মিন শাররি গা-ছিকিন ইযা-ওয়াকাব।
وَمِنۡ شَرِّ النَّفّٰثٰتِ فِی الۡعُقَدِ ۙ
ওয়া মিন শাররিন নাফফা-ছা-তি ফিল ‘উকাদ।
وَمِنۡ شَرِّ حَاسِدٍ اِذَا حَسَدَ
ওয়া মিন শাররি হা-ছিদিন ইযা-হাছাদ।
সূরা নাস বাংলা উচ্চারণ সহ:
قُلۡ اَعُوۡذُ بِرَبِّ النَّاسِ ۙ
কুল আ‘ঊযুবিরাব্বিন্না-ছ,
مَلِکِ النَّاسِ ۙ
মালিকিন্না-ছ,
اِلٰہِ النَّاسِ ۙ
ইলা-হিন্না-ছ।
مِنۡ شَرِّ الۡوَسۡوَاسِ ۬ۙ الۡخَنَّاسِ ۪ۙ
মিন শাররিল ওয়াছ ওয়া-ছিল খান্না-ছ।
الَّذِیۡ یُوَسۡوِسُ فِیۡ صُدُوۡرِ النَّاسِ ۙ
আল্লাযী ইউওয়াছবিছুফী সুদূরিন্নাছ-।
مِنَ الۡجِنَّۃِ وَالنَّاسِ
মিনাল জিন্নাতি ওয়ান্না-ছ।
আয়াতুল কুসরী পাঠের ফজিলত:
রোগ মুক্তি, জ্বীনের আছর ও জাদু-টোনা থেকে রক্ষার জন্য আয়াতুল কুরসী পাঠ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল। ফরজ নামাজের পর, সকাল সন্ধ্যা ও ঘুমানোর পূর্বে আয়াতুল কুরসী পাঠ করলে বিভিন্ন প্রকার মুসিবত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
আয়াতুল কুসরী বাংলা উচ্চারণ সহ:
اَللّٰہُ لَاۤ اِلٰہَ اِلَّا ہُوَ ۚ اَلۡحَیُّ الۡقَیُّوۡمُ ۬ۚ لَا تَاۡخُذُہٗ سِنَۃٌ وَّلَا نَوۡمٌ ؕ لَہٗ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَمَا فِی الۡاَرۡضِ ؕ مَنۡ ذَا الَّذِیۡ یَشۡفَعُ عِنۡدَہٗۤ اِلَّا بِاِذۡنِہٖ ؕ یَعۡلَمُ مَا بَیۡنَ اَیۡدِیۡہِمۡ وَمَا خَلۡفَہُمۡ ۚ وَلَا یُحِیۡطُوۡنَ بِشَیۡءٍ مِّنۡ عِلۡمِہٖۤ اِلَّا بِمَا شَآءَ ۚ وَسِعَ کُرۡسِیُّہُ السَّمٰوٰتِ وَالۡاَرۡضَ ۚ وَلَا یَـُٔوۡدُہٗ حِفۡظُہُمَا ۚ وَہُوَ الۡعَلِیُّ الۡعَظِیۡمُ
আল্লা-হু লাইলা-হা ইল্লা-হুওয়া আল হাইয়ুল কাইয়ূমু লা-তা’খুযুহূ ছিনাতুওঁ ওয়ালা-নাওমুন লাহূ মা-ফিছ ছামা-ওয়া-তি ওয়ামা-ফিল আরদি মান যাল্লাযী ইয়াশফা‘উ ‘ইনদাহূইল্লা-বিইযনিহী ইয়া‘লামুমা-বাইনা আইদীহিম ওয়ামা-খালফাহুম ওয়ালা-ইউহ ীতূনা বিশাইইম মিন ‘ইলমিহীইল্লা-বিমা-শাআ ওয়াছি‘আ কুরছিইয়ুহুছ ছামা-ওয়া-তি ওয়াল আরদা ওয়ালা-ইয়াঊদুহু হিফজু হুমা-ওয়া হুওয়াল ‘আলিইয়ূল ‘আজীম।
অর্থ:
আল্লাহ তিনি, যিনি ছাড়া কোনও মাবুদ নেই, যিনি চিরঞ্জীব, (সমগ্র সৃষ্টির) নিয়ন্ত্রক, যাঁর কখনও তন্দ্রা পায় না এবং নিদ্রাও নয়, আকাশমণ্ডলে যা-কিছু আছে (তাও) এবং পৃথিবীতে যা-কিছু আছে (তাও) সব তাঁরই। কে আছে, যে তাঁর সমীপে তাঁর অনুমতি ছাড়া সুপারিশ করবে? তিনি সকল বান্দার পূর্ব-পশ্চাৎ সকল অবস্থা সম্পর্কে সম্যক অবগত। তারা তাঁর জ্ঞানের কোনও বিষয় নিজ আয়ত্তে নিতে পারে না কেবল সেই বিষয় ছাড়া, যা তিনি নিজে ইচ্ছা করেন। তাঁর কুরসী আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীকে পরিবেষ্টন করে রেখেছে। আর এ দু’টোর তত্ত্বাবধানে তাঁর বিন্দুমাত্র কষ্ট হয় না এবং তিনি অতি উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন ও মহিমাময়।