জাহান্নাম এমন আবাসস্থল, যা আল্লাহ তায়ালা কাফেরদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন। যার উত্তাপ হবে প্রকট, হাতুড়ি হবে লোহার তৈরি, গভীরতা এতটাই ব্যাপক; যদি তাতে বড় কোনো পাহাড় ছেড়ে দেওয়া হয়। তবুও তা তলদেশে পৌঁছতে লাগবে সত্তর বছর। কিয়ামত দিবসে তা সত্তরটি বেড়ি পড়িয়ে আনা হবে। প্রতিটি বেড়ি সত্তর জন ফেরেশতা ধরে থাকবেন।
জাহান্নামের আগুন ও শাস্তি:
দুনিয়ার আগুনের তাপ জাহান্নামের আগুনের তুলনায় সত্তর গুণ কম উত্তপ্ত। জাহান্নামের সাপ হবে উটের ঘাড়ের মত মোটা। বিচ্ছু হবে গাধা সাদৃশ্য। যা প্রত্যেক জাহান্নামীকে দংশন করবে। দংশনের বিষক্রিয়া ৪০ বছর পর্যন্ত জাহান্নামী ব্যক্তি অনুভব করবে।
জাহান্নামীদের পোশাক হবে আগুনের তৈরির। খাদ্য হিসেবে তারা কাঁটাযুক্ত জাক্কুম ফল গ্রহণ করবে। ফুটন্ত ও গরম পুঁচ পান করবে। যদি জাক্কুমের সামান্য অংশ দুনিয়ায় পতিত হয়। তাহলে দুনিয়া মানব বসবাসের অনুপযোগী হয়ে যাবে।
যে ব্যক্তি তা পানাহার করবে, তার অবস্থাই বা কী হবে! পান করার সাথে সাথেই পেটে থাকা সব কিছু গলে বেরিয়ে যাবে।
জাহান্নামীদের হাত ঘাড়ের সাথে শৃঙ্খলাবদ্ধ থাকবে। তাদের পাগুলো পিঠের পেছন দিক দিয়ে নিয়ে কপালের সাথে শেকলে বাঁধা থাকবে। তারা সর্বদা সেখানে শাস্তি ভোগ করবে। এক মুহূর্তের জন্যও তাদের শাস্তি কমানো হবে না। বরং প্রতিনিয়ত তাদের শাস্তি বৃদ্ধি করা হবে।
তারা শাস্তি থেকে মুক্তি পেতে মৃত কামনা করবে। তাদের এ কামনা তাদের কোনো কাজে আসবে না। তারা চিরকাল সেখানে অবস্থান করবে।
পরিশেষে তারা জাহান্নামের নির্দয়, কঠোর রক্ষকদের কাছে আবেদন করবে। যেন তারা আল্লাহ তায়ালার নিকট তাদের শাস্তি কমিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে আবেদন করে। যদিও তা এক এক দিনের জন্য হয়।
তারা বলবে: হায়! যদি এক দিন… এক মুহূর্তের জন্য যদি শাস্তি কমানো হতো। হায়! যদি আমরা ইমান আনতাম। হায়! যদি দুনিয়াতে জুলুম না করতাম।
তাদের আর্তনাদ তাদের কোনো কাজে আসবে না। তারা সর্বদা সেখানেই থাকবে এবং চিরকাল শাস্তি ভোগ করবে।
জাহান্নাম বিষয়ক আয়াত:
وَالَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا وَکَذَّبُوۡا بِاٰیٰتِنَاۤ اُولٰٓئِکَ اَصۡحٰبُ النَّارِ ۚ ہُمۡ فِیۡہَا خٰلِدُوۡنَ
আর যারা কুফরিতে লিপ্ত হবে এবং আমার আয়াতসমূহ প্রত্যাখ্যান করবে, তারা জাহান্নামবাসী। তারা সেখানে সর্বদা থাকবে।
[সুরা: আল বাকারা – আয়াত নং: ৩৯]
بَلٰی مَنۡ کَسَبَ سَیِّئَۃً وَّاَحَاطَتۡ بِہٖ خَطِیۡٓــَٔتُہٗ فَاُولٰٓئِکَ اَصۡحٰبُ النَّارِ ۚ ہُمۡ فِیۡہَا خٰلِدُوۡنَ
(আগুন তোমাদেরকে কেন স্পর্শ করবে না,) অবশ্যই (করবে), যে সব লোক পাপ কামায় এবং তার পাপ তাকে বেষ্টন করে ফেলে, তারাই জাহান্নামবাসী। তারা সর্বদা সেখানে থাকবে।
[সুরা: আল বাকারা – আয়াত নং: ৮১]
اِنَّ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا لَنۡ تُغۡنِیَ عَنۡہُمۡ اَمۡوَالُہُمۡ وَلَاۤ اَوۡلَادُہُمۡ مِّنَ اللّٰہِ شَیۡـًٔا ؕ وَاُولٰٓئِکَ اَصۡحٰبُ النَّارِ ۚ ہُمۡ فِیۡہَا خٰلِدُوۡنَ
(এর বিপরীতে) যারা কুফল অবলম্বন করেছে, আল্লাহর বিপরীতে তাদের অর্থ-সম্পদ তাদের কোনও কাজে আসবে না এবং তাদের সন্তান-সন্ততিও নয় এবং তারা জাহান্নামবাসী। তাতেই তারা সর্বদা থাকবে।
[সুরা: আলে ইমরান – আয়াত নং: ১১৬]
اَفَمَنِ اتَّبَعَ رِضۡوَانَ اللّٰہِ کَمَنۡۢ بَآءَ بِسَخَطٍ مِّنَ اللّٰہِ وَمَاۡوٰىہُ جَہَنَّمُ ؕ وَبِئۡسَ الۡمَصِیۡرُ
তবে যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি অনুসরণ করে, সে কি ওই ব্যক্তির মত হতে পারে যে, আল্লাহর অসন্তুষ্টি নিয়ে ফিরেছে আর যার ঠিকানা হচ্ছে জাহান্নাম; যা অতি নিকৃষ্ট ঠিকানা?
[সুরা: আলে ইমরান – আয়াত নং: ১৬২]
وَمَنۡ یَّعۡصِ اللّٰہَ وَرَسُوۡلَہٗ وَیَتَعَدَّ حُدُوۡدَہٗ یُدۡخِلۡہُ نَارًا خَالِدًا فِیۡہَا ۪ وَلَہٗ عَذَابٌ مُّہِیۡنٌ ٪
পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের অবাধ্যতা করবে এবং তাঁর (স্থিরীকৃত) সীমা লঙ্ঘন করবে, তিনি তাকে দাখিল করবেন জাহান্নামে, যাতে সে সর্বদা থাকবে এবং তার জন্য আছে লাঞ্ছনাকর শাস্তি।
[সুরা: আন নিসা – আয়াত নং: ১৪]
فَمِنۡہُمۡ مَّنۡ اٰمَنَ بِہٖ وَمِنۡہُمۡ مَّنۡ صَدَّ عَنۡہُ ؕ وَکَفٰی بِجَہَنَّمَ سَعِیۡرًا
সুতরাং তাদের মধ্যে কতক তো তার প্রতি ঈমান আনে এবং কতক তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। (ওই কাফিরদের সাজা দেওয়ার জন্য) জ্বলন্ত আগুনরূপে জাহান্নামই যথেষ্ট।
[সুরা: আন নিসা – আয়াত নং: ৫৫]
وَمَنۡ یَّقۡتُلۡ مُؤۡمِنًا مُّتَعَمِّدًا فَجَزَآؤُہٗ جَہَنَّمُ خٰلِدًا فِیۡہَا وَغَضِبَ اللّٰہُ عَلَیۡہِ وَلَعَنَہٗ وَاَعَدَّ لَہٗ عَذَابًا عَظِیۡمًا
যে ব্যক্তি কোনও মুসলিমকে জেনেশুনে হত্যা করবে, তার শাস্তি জাহান্নাম, যাতে সে সর্বদা থাকবে এবং আল্লাহ তার প্রতি গজব নাজিল করবেন ও তাকে লানত করবেন। আর আল্লাহ তার জন্য মহাশাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন।
[সুরা: আন নিসা – আয়াত নং: ৯৩]
وَالَّذِیۡنَ کَذَّبُوۡا بِاٰیٰتِنَا وَاسۡتَکۡبَرُوۡا عَنۡہَاۤ اُولٰٓئِکَ اَصۡحٰبُ النَّارِ ۚ ہُمۡ فِیۡہَا خٰلِدُوۡنَ
আর যারা আমার আয়াতসমূহ প্রত্যাখ্যান করেছে ও অহংকারবশে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে, তারা হবে জাহান্নামবাসী। তারা তাতে সর্বদা থাকবে।
[সুরা: আল আরাফ – আয়াত নং: ৩৬]
জাহান্নাম বিষয়ক হাদিস:
عن أبي هريرة، قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ” اشتكت النار إلى ربها وقالت أكل بعضي بعضا فجعل لها نفسين نفسا في الشتاء ونفسا في الصيف فأما نفسها في الشتاء فزمهرير وأما نفسها في الصيف فسموم “
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: জাহান্নাম আল্লাহ্ তাআলার দরবারে অভিযোগ করে এবং বলে, আমার কতক অংশ আর কতককে গ্রাস করে নিচ্ছে।
তখন আল্লাহ তাআলা তার দুটো শ্বাসের ব্যবস্থা করেন। একটি শ্বাস শীতে আরেকটি শ্বাস গ্রীষ্মে। শীতের শ্বাস হল যামহারীর (শৈত্যপ্রবাহ) আর গ্রীষ্মের শ্বাস হল সামূম (লূ প্রবাহ)।
[তিরমিজী – ২৫৯২]
জাহান্নামের আগুনের উত্তাপ থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য প্রার্থনা করা:
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ سَأَلَ اللَّهَ الْجَنَّةَ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ قَالَتْ الْجَنَّةُ اللَّهُمَّ أَدْخِلْهُ الْجَنَّةَ وَمَنْ اسْتَجَارَ مِنْ النَّارِ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ قَالَتْ النَّارُ اللَّهُمَّ أَجِرْهُ مِنْ النَّارِ
আনাস ইবনে মালিক রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: যে ব্যক্তি তিনবার আল্লাহর নিকট জান্নাত চায়, তখন জান্নাত বলে: হে আল্লাহ্! আপনি তাকে জান্নাতে প্রবেশ করান। আর যে ব্যক্তি তিনবার জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণ চায়, জাহান্নাম বলে: হে আল্লাহ! আপনি তাকে জাহান্নাম হতে পরিত্রাণ দিন।
[সুনানে নাসায়ী – ৫৫২১]
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ مَسْعُودٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ” يُؤْتَى بِجَهَنَّمَ يَوْمَئِذٍ لَهَا سَبْعُونَ أَلْفَ زِمَامٍ مَعَ كُلِّ زِمَامٍ سَبْعُونَ أَلْفَ مَلَكٍ يَجُرُّونَهَا ” .
আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: সেই দিন (কিয়ামতের দিন) জাহান্নামকে আনা হবে। এর থাকবে সত্তর হাজার লাগাম। প্রতিটি লাগামের সাথে থাকবে সত্তর হাজার ফিরিশতা। তারা এটি ধরে তা টানবে।
[তিরমিজী – ২৫৭৪]
জাহান্নামের গহ্বর:
عَنِ الْحَسَنِ، قَالَ قَالَ عُتْبَةُ بْنُ غَزْوَانَ عَلَى مِنْبَرِنَا هَذَا مِنْبَرِ الْبَصْرَةِ عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ” إِنَّ الصَّخْرَةَ الْعَظِيمَةَ لَتُلْقَى مِنْ شَفِيرِ جَهَنَّمَ فَتَهْوِي فِيهَا سَبْعِينَ عَامًا وَمَا تُفْضِي إِلَى قَرَارِهَا “
হাসান (রাহ:) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উতবা ইবনে গাযওয়ান রা. আমাদের এই বসবার মিম্বরে দাঁড়িয়ে নবী (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেছেন: জাহান্নামের কিনারা থেকে একটা বিরাট পাথর ফেলা হবে। সত্তর বছর ধরে তা নিচে পড়তে থাকবে কিন্তু স্থির হতে পারে এমন স্থানে গিয়ে পৌঁছবে না।
[তিরমিজী – ২৫৭৫]
জাহান্নামীদের পানীয়:
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَرَأَ هَذِهِ الآيَةَ: (اتَّقُوا اللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلاَ تَمُوتُنَّ إِلاَّ وَأَنْتُمْ مُسْلِمُونَ) قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ” لَوْ أَنَّ قَطْرَةً مِنَ الزَّقُّومِ قُطِرَتْ فِي دَارِ الدُّنْيَا لأَفْسَدَتْ عَلَى أَهْلِ الدُّنْيَا مَعَايِشَهُمْ فَكَيْفَ بِمَنْ يَكُونُ طَعَامَهُ “
ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এ আয়াতটি তিলাওয়াত করলেন:
اتَّقُوا اللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلاَ تَمُوتُنَّ إِلاَّ وَأَنْتُمْ مُسْلِمُونَ
(হে মুমিনগণ) তোমরা আল্লাহকে যথার্থভাবে ভয় করবে আর মুসলিম না হয়ে তোমরা যেন না মর। (আলে ইমরান ৩: ১০২)
এরপরে তিনি বললেন: (জাহান্নামীদের খাদ্য) যক্কুমের একটা ফোঁটাও যদি দুনিয়ায় পড়ত তবে তা দুনিয়াবাসীদের যিন্দেগীই দুর্বিষহ করে তুলত। (এখন) এই জিনিস যাদের খাদ্য হবে তাদের কি অবস্থা হবে?
[তিরমিজী – ২৫৮৫]
عَنْ أَبِي الدَّرْدَاءِ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ” يُلْقَى عَلَى أَهْلِ النَّارِ الْجُوعُ فَيَعْدِلُ مَا هُمْ فِيهِ مِنَ الْعَذَابِ فَيَسْتَغِيثُونَ فَيُغَاثُونَ بِطَعَامٍ مِنْ ضَرِيعٍ لاَ يُسْمِنُ وَلاَ يُغْنِي مِنْ جُوعٍ
فَيَسْتَغِيثُونَ بِالطَّعَامِ فَيُغَاثُونَ بِطَعَامٍ ذِي غُصَّةٍ فَيَذْكُرُونَ أَنَّهُمْ كَانُوا يُجِيزُونَ الْغُصَصَ فِي الدُّنْيَا بِالشَّرَابِ فَيَسْتَغِيثُونَ بِالشَّرَابِ فَيُرْفَعُ إِلَيْهِمُ الْحَمِيمُ بِكَلاَلِيبِ الْحَدِيدِ فَإِذَا دَنَتْ مِنْ وُجُوهِهِمْ شَوَتْ وُجُوهَهُمْ
فَإِذَا دَخَلَتْ بُطُونَهُمْ قَطَّعَتْ مَا فِي بُطُونِهِمْ فَيَقُولُونَ ادْعُوا خَزَنَةَ جَهَنَّمَ فَيَقُولُونَ أَلَمْ تَكُ تَأْتِيكُمْ رُسُلُكُمْ بِالْبَيِّنَاتِ قَالُوا بَلَى . قَالُوا فَادْعُوا وَمَا دُعَاءُ الْكَافِرِينَ إِلاَّ فِي ضَلاَلٍ . قَالَ فَيَقُولُونَ ادْعُوا مَالِكًا
فَيَقُولُونَ: (يَا مَالِكُ لِيَقْضِ عَلَيْنَا رَبُّكَ ) قَالَ فَيُجِيبُهُمْ: (إِنَّكُمْ مَاكِثُونَ ) ” . قَالَ الأَعْمَشُ نُبِّئْتُ أَنَّ بَيْنَ دُعَائِهِمْ وَبَيْنَ إِجَابَةِ مَالِكٍ إِيَّاهُمْ أَلْفَ عَامٍ . قَالَ ” فَيَقُولُونَ ادْعُوا رَبَّكُمْ فَلاَ أَحَدَ خَيْرٌ مِنْ رَبِّكُمْ فَيَقُولُونَ: (رَبَّنَا غَلَبَتْ عَلَيْنَا شِقْوَتُنَا وَكُنَّا قَوْمًا ضَالِّينَ * رَبَّنَا أَخْرِجْنَا مِنْهَا فَإِنْ عُدْنَا فَإِنَّا ظَالِمُونَ ) قَالَ فَيُجِيبُهُمْ: (اخْسَؤُوا فِيهَا وَلاَ تُكَلِّمُونِ ) قَالَ فَعِنْدَ ذَلِكَ يَئِسُوا مِنْ كُلِّ خَيْرٍ وَعِنْدَ ذَلِكَ يَأْخُذُونَ فِي الزَّفِيرِ وَالْحَسْرَةِ وَالْوَيْلِ ” .
আবুদ দারদা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বরেন, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন: জাহান্নামবাসীদের উপর ক্ষুধা চাপিয়ে দেওয়া হবে। তারা যে আযাবে ছিল ক্ষুধাও এর বরাবর (আজাব) হয়ে দাঁড়াবে। তারা কাতর হয়ে (আল্লাহর কাছে) ফরিয়াদ করতে থাকবে। তখন দারী’ (কণ্টকাকীর্ণ একজাতীয় বিষাক্ত গুল্ম) খাদ্য দিয়ে তাদের এই ফরিয়াদের জওয়াব দেওয়া হবে।
যা তাদেরকে পুষ্টও করবে না এবং তাদের ক্ষুধাও নিবারণ করবে না। আবার তারা ফরিয়াদ করবে। অনন্তর তাদেরকে এমন খাদ্য দেওয়া হবে যা গলায় আটকে যাবে। তখন তারা দুনিয়াতে পানি খেয়ে গলার আটকা দূর করার কথা স্মরণ করবে। তাই তারা পানির জন্য ফরিয়াদ করবে। লোহার আঁকশী দিয়ে তাদের ফুটন্ত পানি দেওয়া হবে। তাদের মুখের নিকটবর্তী হওয়া মাত্র তা তাদের চেহারা দগ্ধ করে ফেলবে।
পেটে প্রবিষ্ট হওয়া মাত্র পেটে নাড়ি–ভুঁড়ি যা কিছু আছে সব গলিয়ে ছিন্ন–ভিন্ন করে ফেলবে। তারা বলবে, (নিজেরা নিজেরা) যাও জাহান্নামের তত্ত্বাবধায়কদেরকে ডাক। জাহান্নামের তত্ত্বাবধায়কগণ বলবেন: তোমাদের কাছে কি সুস্পষ্ট প্রমাণসহ রাসুলগণের আগমন হয়নি?
তারা বলবে: অবশ্যই হয়েছিল। তত্ত্বাবধায়কগণ বলবেন: ডাকতে থাক, কাফিরদের ডাক তো নিষ্ফল হওয়া ব্যতিরেকে কিছুই নয়। নবী (ﷺ) বলেন, তারা (নিজেরা নিজেরা) বলবে যাও (জাহান্নামের প্রধান রক্ষক) মালিককে ডাক। তারা বলবে: হে মালিক, তোমার প্রভু যেন আমাদের মওত দিয়ে দেয়।
নবী (ﷺ) বলেন: তখন তাদের জওয়াব দেওয়া হবে: না, এখানেই তোমাদের অবস্থান করতে হবে। আ’মাশ (রাহ:) বলেন, আমি অবহিত হয়েছি যে তাদের এই ডাক ও মালিকের জওয়াব প্রদানের মাঝে হবে এক হাজার বছরের ব্যবধান।
এরপর তারা (পরস্পর) বলবে: চল, তোমাদের পরওয়ারদিগারকে ডাক। যেহেতু তোমাদের পরওয়ারদিগারের চেয়ে উত্তম কেউ নেই। তারা বলবে: আমাদের দুর্ভাগ্য আমাদের উপর প্রবল হয়ে গেছে। আমরা তো ছিলাম পথভ্রষ্ট সম্প্রদায়। হে পরওয়ারদিগার, এখান থেকে আমাদের বের করে নিন। আমরা যদি পুনরায় নাফরমানি করি তবে অবশ্যই আমরা জালিম হব।
তাদের জওয়াব দেওয়া হবে: এখানেই তোমরা লাঞ্ছনার মধ্যে বসবাস করবে, কোন কথা বলবে না। তখন থেকেই এরা সব কল্যাণের আশা থেকে নিরাশ হয়ে যাবে। আর তারা এই ধ্বংসের কারণে আফসোস সহকারে গাধার ন্যায় চিৎকার দিতে থাকবে।
[তিরমিজী – ২৫৮৬]
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং জান্নাতের পখ প্রশস্ত করে দেন।