জান্নাতুল বাকি হলো মদিনায় অবস্থিত একটি ঐতিহাসিক কবরস্থান, যাকে বাকিউদ গারকাদ বলা হয়। এটি ইসলামের প্রথম যুগ থেকে মুমিনদের চিরশায়িত স্থান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এটি মসজিদে নববীর পাশে অবস্থিত। এখানে বহু সাহাবী, তাবেয়ী, তাবে তাবেয়ী, ফকিহ, মুহাদ্দিসসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের দাফন করা হয়েছে।
জান্নাতুল বাকি: দাফনকৃত ব্যক্তিদের পরিচিতি
জান্নাতুল বাকিতে ইসলামি ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বদের দাফন করা হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন:
- রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর পরিবারবর্গ: হযরত ফাতিমা (রা.), হযরত রোকাইয়া (রা.), হযরত উম্মে কুলসুম (রা.), হযরত আব্বাস (রা.)।
- সাহাবীগণ: হযরত উসমান ইবনে আফফান (রা.), হযরত আবদুর রহমান ইবনে আউফ (রা.), হযরত সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস (রা.)।
- উম্মুল মুমিনিন: হযরত আয়েশা (রা.)।
- ইসলামি ব্যক্তিত্ব: ইমাম মালিক ইবনে আনাস রহ., ইমাম মুহাম্মদ হায়া আল সিন্ধি রহ.,ইমাম শামিল রহ., মুহাম্মদ সাইয়িদ তানতাওয়ি রহ., মুহাম্মদ জাকারিয়া কান্ধলভি রহ., খলিফা দ্বিতীয় আবদুল মজিদ
জান্নাতুল বাকি জিয়ারতের সুন্নত পদ্ধতি
জান্নাতুল বাকি জিয়ারতের জন্য রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর শেখানো দোয়া অনুসরণ করা সুন্নত। এভাবে যিয়ারত করতে হয়:
দোয়া ১:
السَّلَامُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمٍ مُؤْمِنِيْنَ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللهُ بِكُمْ لاَحِقُوْنَ، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِأَهْلِ بَقِيْعِ الغَرْقَدِ.
উচ্চারণ:
“আস-সালামু আলাইকুম দারাকাউমুম মুমিনীন, ওয়া ইন্না ইনশাআল্লাহু বিকুম লাহিকুন। আল্লাহুম্মাগফির লি আহলি বাকিয়িল গারকাদ।”
অর্থ: ”আপনাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক, মুমিন সম্প্রদায়ের আবাস স্থল। আমরা আপনাদের সাথে যুক্ত হব ইনশাআল্লাহ। হে আল্লাহ আপনি আহলে বাকিদেরকে মাফ করে দিন।”
দোয়া ২:
السَّلَامُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الدِّيَارِ مِنَ المُؤْمِنِيْنَ وَالمُسْلِمِيْنَ ، وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللهُ لَلَاحِقُوْنَ ، أَسْأَلُ اللهَ لَنَا وَلَكُمْ العَافِيَةَ.
উচ্চারণ: “আস-সালামু আলাইকুম আহলাদ্দিয়ারি মিনাল মুমিনিনা ওয়াল মুসলিমিন। ওয়া ইন্না ইনশাআল্লাহু লালাহিকুন। আসআলুল্লাহা লানা ওয়ালাকুমুল আফিয়া।”
অর্থ: ”আপনাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক হে অত্র জায়গায় বসবাসকারী মুমিন-মুসলিমগণ। আমরা (আপনাদের সাথে) যুক্ত হব, ইনশাআল্লাহ। আমাদের জন্য ও আপনাদের জন্য আল্লাহর দরবারে পরিত্রাণ কামনা করি।”
জান্নাতুল বাকি জিয়ারতের সময়:
দৈনিক ফরজের নামাজ আদায়ের পর থেকে ঘণ্টাখানিক সময়ের জন্য সর্ব সাধারণের জন্য জান্নাতুল বাকির প্রবেশপথ উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এ সময়ে জান্নাতুল বাকি যিয়ারত করা যায়। এ ছাড়া অন্যান্য সময় প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয় না। সর্বোত্তম হলো মসজিদে নববীতে ফজরের নামাজ আদায় করে জান্নাতুল বাকি যিয়ারত করা।
জান্নাতুল বাকি জিয়ারতের গুরুত্ব ও ফজিলত
- মৃতদের জন্য দোয়া করা: জান্নাতুল বাকি জিয়ারতের মাধ্যমে মৃতদের জন্য দোয়া করার গুরুত্ব প্রতিফলিত হয়। এটি তাদের মাগফিরাত কামনা করার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়।
- আখিরাতের স্মরণ: এই জিয়ারত মুমিনদের আখিরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয় এবং তাদের ইবাদতের প্রতি মনোযোগী হতে উদ্বুদ্ধ করে।
জান্নাতুল বাকি জিয়ারত মৃতদের জন্য দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে আখিরাতের স্মরণ এবং ইমান দৃঢ় করার একটি মাধ্যম। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে জান্নাতুল বাকি জিয়ারতের তওফিক দান করুন।