কোনো নেক আমলের ওসিলার মাধ্যমে দোয়া করলে; দ্রুত দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভবনা থাকে। যেমনটি হাদিসে বর্ণিত রয়েছে বনী ইসরাইলের তিন যুবক সম্পর্কে; যারা গুহায় অবস্থান করছিল। আকস্মিক এক প্রস্তরখণ্ড এসে গুহার প্রবেশপথ আটকে দেয়। অতঃপর তারা প্রত্যেকেই আল্লাহর কাছে জীবনের সবচেয়ে ভালো আমলের ওসিলায় দোয়া করতে থাকেন।
প্রথম ব্যক্তির দোয়ার ফলে গুহার মুখ থেকে প্রস্তরখণ্ড সামান্য সড়ে যায়। অতঃপর দ্বিতীয় ব্যক্তি জীবনের সবচেয়ে ভালো আমলের ওসিলায় দোয়া করতে লাগল। এক পর্যায়ে আল্লাহ তায়ালা তার দোয়াও কবুল করে নেন। ফলে গুহার প্রবেশস্থল থেকে প্রস্তরখণ্ডটি আরেকটু সড়ে গেল। অনুরূপভাবে তৃতীয় ব্যক্তিও আল্লাহর দরবারে জীবনের সবচেয়ে ভালো আমলের ওসিলায় দোয়া করলেন।
আল্লাহ তায়ালা তাঁর দোয়াও কবুল করে নেন। ফলে, প্রস্তরখণ্ডটি গুহার মুখ থেকে পরিপূর্ণ সরে গেল। ফলে তারা গুহার মুখ থেকে নিরাপদে বেড়িয়ে আসেন। এভাবেই গুহায় আটকে পড়া তিন যুবক মুক্তি লাভ করেন।
হদিসে গুহায় আটকে পড়া বনী ইসরাইলের তিন যুবকের ঘটনাটি বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
যার বিবরণ হলো এই-
حَدَّثَنَا يَعْقُوبُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، حَدَّثَنَا أَبُو عَاصِمٍ، أَخْبَرَنَا ابْنُ جُرَيْجٍ، قَالَ: أَخْبَرَنِي مُوسَى بْنُ عُقْبَةَ، عَنْ نَافِعٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ [ص:80]،
قَالَ: ” خَرَجَ ثَلاَثَةُ نَفَرٍ يَمْشُونَ فَأَصَابَهُمُ المَطَرُ، فَدَخَلُوا فِي غَارٍ فِي جَبَلٍ، فَانْحَطَّتْ عَلَيْهِمْ صَخْرَةٌ، قَالَ: فَقَالَ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ: ادْعُوا اللَّهَ بِأَفْضَلِ عَمَلٍ عَمِلْتُمُوهُ،
فَقَالَ أَحَدُهُمْ: اللَّهُمَّ إِنِّي كَانَ لِي أَبَوَانِ شَيْخَانِ كَبِيرَانِ، فَكُنْتُ أَخْرُجُ فَأَرْعَى، ثُمَّ أَجِيءُ فَأَحْلُبُ فَأَجِيءُ بِالحِلاَبِ، فَآتِي بِهِ أَبَوَيَّ فَيَشْرَبَانِ، ثُمَّ أَسْقِي الصِّبْيَةَ وَأَهْلِي وَامْرَأَتِي، فَاحْتَبَسْتُ لَيْلَةً، فَجِئْتُ فَإِذَا هُمَا نَائِمَانِ، قَالَ: فَكَرِهْتُ أَنْ أُوقِظَهُمَا، وَالصِّبْيَةُ يَتَضَاغَوْنَ عِنْدَ رِجْلَيَّ، فَلَمْ يَزَلْ ذَلِكَ دَأْبِي وَدَأْبَهُمَا، حَتَّى طَلَعَ الفَجْرُ، اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنِّي فَعَلْتُ ذَلِكَ ابْتِغَاءَ وَجْهِكَ، فَافْرُجْ عَنَّا فُرْجَةً نَرَى مِنْهَا السَّمَاءَ، قَالَ: فَفُرِجَ عَنْهُمْ،
وَقَالَ الآخَرُ: اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنِّي كُنْتُ أُحِبُّ امْرَأَةً مِنْ بَنَاتِ عَمِّي كَأَشَدِّ مَا يُحِبُّ الرَّجُلُ النِّسَاءَ، فَقَالَتْ: لاَ تَنَالُ ذَلِكَ مِنْهَا حَتَّى تُعْطِيَهَا مِائَةَ دِينَارٍ، فَسَعَيْتُ فِيهَا حَتَّى جَمَعْتُهَا، فَلَمَّا قَعَدْتُ بَيْنَ رِجْلَيْهَا قَالَتْ: اتَّقِ اللَّهَ وَلاَ تَفُضَّ الخَاتَمَ إِلَّا بِحَقِّهِ، فَقُمْتُ وَتَرَكْتُهَا، فَإِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنِّي فَعَلْتُ ذَلِكَ ابْتِغَاءَ وَجْهِكَ، فَافْرُجْ عَنَّا فُرْجَةً، قَالَ: فَفَرَجَ عَنْهُمُ الثُّلُثَيْنِ،
وَقَالَ الآخَرُ: اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنِّي اسْتَأْجَرْتُ أَجِيرًا بِفَرَقٍ مِنْ ذُرَةٍ فَأَعْطَيْتُهُ، وَأَبَى ذَاكَ أَنْ يَأْخُذَ، فَعَمَدْتُ إِلَى ذَلِكَ الفَرَقِ فَزَرَعْتُهُ، حَتَّى اشْتَرَيْتُ مِنْهُ بَقَرًا وَرَاعِيهَا، ثُمَّ جَاءَ فَقَالَ: يَا عَبْدَ اللَّهِ أَعْطِنِي حَقِّي، فَقُلْتُ: انْطَلِقْ إِلَى تِلْكَ البَقَرِ وَرَاعِيهَا فَإِنَّهَا لَكَ، فَقَالَ: أَتَسْتَهْزِئُ بِي؟ قَالَ: فَقُلْتُ: مَا أَسْتَهْزِئُ بِكَ وَلَكِنَّهَا لَكَ، اللَّهُمَّ إِنْ كُنْتَ تَعْلَمُ أَنِّي فَعَلْتُ .
ذَلِكَ ابْتِغَاءَ وَجْهِكَ، فَافْرُجْ عَنَّا فَكُشِفَ عَنْهُمْ ”
2215 – حدثنا يعقوب بن إبراهيم، حدثنا أبو عاصم، أخبرنا ابن جريج، قال: أخبرني موسى بن عقبة، عن نافع، عن ابن عمر رضي الله عنهما، عن النبي صلى الله عليه وسلم [ص:80]،
قال: ” خرج ثلاثة نفر يمشون فأصابهم المطر، فدخلوا في غار في جبل، فانحطت عليهم صخرة، قال: فقال بعضهم لبعض: ادعوا الله بأفضل عمل عملتموه، فقال أحدهم: اللهم إني كان لي أبوان شيخان كبيران، فكنت أخرج فأرعى، ثم أجيء فأحلب فأجيء بالحلاب، فآتي به أبوي فيشربان، ثم أسقي الصبية وأهلي وامرأتي، فاحتبست ليلة، فجئت فإذا هما نائمان، قال: فكرهت أن أوقظهما، والصبية يتضاغون عند رجلي، فلم يزل ذلك دأبي ودأبهما، حتى طلع الفجر، اللهم إن كنت تعلم أني فعلت ذلك ابتغاء وجهك، فافرج عنا فرجة نرى منها السماء،
قال: ففرج عنهم، وقال الآخر: اللهم إن كنت تعلم أني كنت أحب امرأة من بنات عمي كأشد ما يحب الرجل النساء، فقالت: لا تنال ذلك منها حتى تعطيها مائة دينار، فسعيت فيها حتى جمعتها، فلما قعدت بين رجليها قالت: اتق الله ولا تفض الخاتم إلا بحقه، فقمت وتركتها، فإن كنت تعلم أني فعلت ذلك ابتغاء وجهك، فافرج عنا فرجة، قال: ففرج عنهم الثلثين، وقال الآخر: اللهم إن كنت تعلم أني استأجرت أجيرا بفرق من ذرة فأعطيته، وأبى ذاك أن يأخذ، فعمدت إلى ذلك الفرق فزرعته، حتى اشتريت منه بقرا وراعيها، ثم جاء فقال: يا عبد الله أعطني حقي،
فقلت: انطلق إلى تلك البقر وراعيها فإنها لك، فقال: أتستهزئ بي؟ قال: فقلت: ما أستهزئ بك ولكنها لك، اللهم إن كنت تعلم أني فعلت ذلك ابتغاء وجهك، فافرج عنا فكشف عنهم “
অর্থ: ইয়াকুব ইবনে ইবরাহীম (রহ.) ……… ইবনে উমর (রাযি.) সূত্রে নবী করীম (ﷺ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা তিন ব্যক্তি হেঁটে চলছিল। এমন সময় প্রবল বৃষ্টি শুরু হলে তারা এক পাহাড়ের গুহায় প্রবেশ করে। হঠাৎ একটি পাথর গড়িয়ে তাদের গুহার মুখ বন্ধ করে দেয়। তাদের একজন আরেকজনকে বলল, তোমরা যে সব আমল করেছ, তার মধ্যে উত্তম আমলের ওয়াসীলা করে আল্লাহর কাছে দুআ কর।
তাদের একজন বলল, ইয়া আল্লাহ্! আমার অতিবৃদ্ধ পিতামাতা ছিলেন, আমি (প্রত্যহ সকালে) মেষ চরাতে বের হতাম। তারপর ফিরে এসে দুধ দোহন করতাম। এবং এ দুধ নিয়ে আমার পিতামাতার নিকট উপস্থিত হতাম ও তাঁরা তা পান করতেন। তারপরে আমি শিশুদের, পরিজনদের এবং আমার স্ত্রীকে পান করতে দিতাম। একরাত্রে আমি আটকা পড়ে যাই।
তারপর আমি যখন এলাম তখন তাঁরা দুজনে ঘুমিয়ে পড়েছেন। সে বলল, আমি তাদের জাগানো পছন্দ করলাম না। আর তখন শিশুরা আমার পায়ের কাছে (ক্ষুধায়) চিৎকার করছিল। এ অবস্থায়ই আমার এবং পিতামাতার ফজর হয়ে গেল। ইয়া আল্লাহ্! তুমি তো জান,তা আমি শুধুমাত্র তোমার সন্তুষ্টি লাভের আশায় করেছিলাম, তাহলে আপনি আমাদের গুহার মুখ এতটুকু ফাঁক করে দাও, যাতে আমরা আকাশ দেখতে পারি। বর্ণনাকারী বলেন, তখন একটু ফাঁকা হয়ে গেল।
অপরজন বলল: ইয়া আল্লাহ্! তুমি জানো যে, আমি আমার এক চাচাতো বোনকে এতো চরম ভালোবাসতাম, যা একজন পুরুষ নারীকে ভালোবেসে থাকে। সে বলল, তুমি আমার থেকে সে মনস্কামনা সিদ্ধ করতে পারবে না, যতক্ষণ আমাকে একশত দীনার না দেবে। আমি চেষ্টা করে তা সংগ্রহ করি। তারপর যখন আমি তার পদদ্বয়ের মাঝে উপবেশন করি, তখন সে বলে আল্লাহকে ভয় কর। বৈধ অধিকার ছাড়া মাহরকৃত বস্তুর সীল ভাঙবে না।
এতে আমি তাকে ছেড়ে উঠে পড়ি। (হে আল্লাহ!) তুমি তো জান, আমি তা তোমারই সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে করেছি, তবে আমাদের থেকে আরো একটু ফাঁক করে দাও। তখন তাদের থেকে (গুহার মুখের) দুই–তৃতীয়াংশ ফাঁক হয়ে গেল।
অপরজন বলল: হে আল্লাহ্! তুমি জানো যে, এক ফারাক* (পরিমাণ) শস্য দানার বিনিময়ে আমি একজন মজুর রেখেছিলাম। আমি যখন তাকে তা দিতে গেলাম সে গ্রহণ করতে অস্বীকার করল। তারপর আমি সে এক ফারাক শস্য দানা দিয়ে চাষ করে ফসল উৎপন্ন করি এবং তা দিয়ে গরু খরিদ করি ও রাখাল নিযুক্ত করি। কিছুকাল পরে সে মজুর এসে বলল, হে আল্লাহর বান্দা, আমাকে আমার পাওনা দিয়ে দাও।
আমি বললাম, এই গরুগুলো ও রাখাল নিয়ে যাও। সে বলল, তুমি কি আমার সাথে উপহাস করছ? আমি বললাম, আমি তোমার সাথে উপহাস করছি না বরং এসব তোমার। হে আল্লাহ! তুমি তো জান, আমি তা শুধুমাত্র তোমারই সন্তুষ্টির জন্যই করেছি, তবে আমাদের থেকে (গুহার মুখ) খুলে দাও। তখন তাদের থেকে গুহার মুখ খুলে গেল। *তিন সা’ পরিমাণের মাপের পাত্র। [বুখারী: ২০৭৪]