কাদিসিয়ার যুদ্ধে যখন মুসলমান-মুশরিক উভয় সৈন্যদল মুখোমুখি হলো। তখন রুস্তুম হযরত সাদ বিন আবী উয়াক্কাস রা. এর নিকট সংবাদ পাঠাল যেন তিনি তার নিকট জ্ঞানী, বুদ্ধিমান কাউকে পাঠান। তিনি রিবয়ী বিন আমেরকে তার নিকট পাঠালেন। রিবয়ী বিন আমের সেখানে গেলেন।
রুস্তুমের মসলিশ আকর্ষণীয়ভাবে সাজানো ছিল। রুস্তুম স্বর্ণের খাটের উপর বসা ছিল। রিবয়ী বিন আমের মোটা কাপড় পরিহিত অবস্থায় একখানা তরবারি ও ছোট ঘোড়ায় আরোহণ করে মজলিশে প্রবেশ করলেন।
ঘোড়া থেকে নেমে তিনি তরবারীসহ সামনের দিকে অগ্রসর হতে লাগলেন। মজলিশে উপস্থিত লোকেরা তাকে তরবারি রেখে যেতে বলল। তিনি বললেন: আমি এমনিতেই তোমাদের কাছে আসিনি। বরং তোমাদের আহ্বানে সাড়া দিতে এসেছি। যদি তোমরা আমাকে এভাবে যেতে দাও। তো ভালো। অন্যথায় আমি চলে যাবো।
রুস্তুন বলল: তাকে অগ্রসর হতে দাও।
তিনি তরবারি দিয়ে বালিশের উপর ভর দিলেন। ফলে বালিশ ফেড়ে তুলা বের হতে লাগল।
রুস্তুম বলল: তোমরা কেন এসেছো।
রিবয়ী বিন আমের: আল্লাহ তায়ালা আমাদের নিকট নবী প্রেরণ করেছেন। যেন আমরা বান্দাদেরকে মানুষের ইবাদত থেকে বের করে আল্লাহ ইবাদতের, দুনিয়ার সংকীর্ণতা থেকে প্রশস্ততার দিকে এবং অন্যান্য ধর্মের জুলুম থেকে ইসলামের ইনসাফের দিকে বের করে আনতে পারি। এবং আমরা তাঁর দ্বীন সর্বত্র পৌঁছে দিতে পারি। যে তা গ্রহণ করবে আমরা তাকে স্বাগত জানাবো। আর যে অস্বীকার করবে আমরা তা সাথে যুদ্ধ করবো যতক্ষণ না আল্লাহর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন হয়।
তারা বলল: আল্লাহ কিসের প্রতিশ্রুতি কী?
তিনি বললেন: যে যুদ্ধে মৃত্যুবরণ করবে তার জন্য জান্নাত আর যে বিজয়ী হবে তার জন্য সফলতা।
রুস্তুম বলল: আমি তোমাদের যুদ্ধ সম্পর্কে শুনেছি। তোমরা কি এই বিষয়টি কিছুটা বিলম্ব করবে ফলে আমরা চিন্তা-ফিকির করবো আর তোমরাও ভেবে দেখবে।
তিনি বললেন: আপনাদের কত দিন সময়ের প্রয়োজন। একদিন নাকি দুই দিন?
রুস্তুম বলল: বিষয়টি এমন হয়। বরং আমরা আমাদের নেতৃবর্গ এবং গোত্রের সর্দারদের সাথে পরামর্শ করবো।
তিনি বললেন: রাসুল সা. যুদ্ধের সময় তিন দিনের অধিক বিলম্ব করতেন না। আপনি নিজের ব্যাপারে এবং তাদের ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করুন।
রুস্তুম বলল: আপনি কি তাদের সর্দার?
তিনি বললেন: না। তবে মুসলমানগণ এক শরীরের মত। তাদের কেউ ওয়াদা দিলে সকলেই তা রক্ষা করে।
রুস্তুম তার নেতৃবর্গের উদ্দেশ্যে বলল: তোমরা এর চেয়ে উত্তম এবং মূল্যবান কথা ইতিপূর্বে শুনেছো?
তারা বলল: আপনি কি এই ব্যক্তির প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন এবং আপনার ধর্ম ছেড়ে দিচ্ছেন? আপনি কি তার কাপড়ের প্রতি লক্ষ্য করেন নি?
রুস্তুম বলল: তোমাদের ধ্বংস হোক! তোমরা তার কাপড়ের দিকে ভ্রূক্ষেপ করো না। বরং তার সিদ্ধান্ত, মতামত ও বিচক্ষণতার প্রতি লক্ষ্য করো। মুসলমানগণ কাপড় এবং খাদ্যের ব্যাপারে শিথিল। তবে মতামতকে গুরুত্ব দেয়।
অতঃপর হয়রত সাদ বিন আবী ওয়াক্কাস রা. তার অনুসন্ধানে মুগীরা বিন সুবা রা. কে প্রেরণ করেন। যখন তিনি সেখান উপস্থিত হন। রুস্তুম তাকে বলল: তোমরা আমাদের প্রতিবেশী। আমরা তোমাদের সাথে ভালো ব্যবহার করব। তোমাদেরকে কষ্ট দিব না। সুতরাং তোমরা তোমাদের দেশে ফিরে যাও।আমরা তোমাদেরকে আমাদের শহরে প্রবেশে বাধা দিবো না।
মুগীরা বিন শুবা রা. বলেন: দুনিয়া অর্জন আমাদের উদ্দেশ্যে নয়। আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কেবল আখিরাত। আল্লাহ তায়ালা আমাদের নিকট সত্য দ্বীনসহ নবী প্রেরণ করেছেন। যে এই দ্বীন থেকে বিমুখ হয়েছে সে পদচ্যুত হয়েছে। আর যে এই দ্বীনে আশ্রয় নিয়েছে। সে সম্মানিত হয়েছে।
রুস্তুম বলল: তা কি?
তিনি বললেন: তার ভিত্তি হচ্ছে এ কথা সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নেই। মুহাম্মদ সা. তার বান্দা ও রাসুল। এবং তিনি যা নিয়ে এসেছেন তা সত্যায়ন করা।
রুস্তুম বলল: উত্তম বলেছ। আরো কিছু?
তিনি বললেন: বান্দাদেরকে মানুষের দাসত্ব থেকে বেরা করা আল্লাহ ইবাদতের দিকে।
রুস্তুম বলল: এটাও সুন্দর কথা। আরো কিছু?
তিনি বললেন: সকল মানুষ আদম আ. এর সন্তান। তারা পরস্পর ভাই ভাই।
রুস্তুম বলল: বাহ্! তোমার মতামত কি? যদি আমরা তোমাদের ধর্মে ফিরে আসি। তাহলে কি তোমরা আমাদের শহর ছেড়ে চলে যাবে?
তিনি বললেন: আল্লাহর কসম! ব্যবসায়িক প্রয়োজন ব্যতীত তোমাদের শহরের ধারে কাছেও আসবো না।
রুস্তুম বলল: চমৎকার বলেছেন।
অতঃপর যখন মুগিরা রা. বের হয়ে গেলেন। রুস্তুম তার দেশের নেতৃত্বস্থানীয়দের সাথে ইসলামের ব্যাপারে বলেন। তারা ঐক্যমতে ইসলাম গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানালো।
ঘটনাটি القراءة العرابية থেকে গৃহীত।