শেরের বহছ বা কাব্য বিতর্ক প্রাচীন সাহিত্য চর্চার একটি অংশ। যা যুগ যুগ ধরে চর্চিত হচ্ছে সুমান-সুখ্যাতির সাথে। আরবীয়দের কাব্য প্রীতি এর পিছনে রেখেছে বিশেষ অবদান। সাহিত্য মহলেও রয়েছে এর বিশেষ গ্রহণযোগ্যতা।
শেরের বহছ বা কাব্য বিতর্ক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ব্যক্তি জ্ঞান-গরিমা, মেধার তীক্ষ্ণতা, উপস্থিত বুদ্ধি এবং সৃজনশীলতার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। অনুরূপভাবে ব্যক্তি গঠন ও ব্যক্তিসত্তার গ্রহণযোগ্যতাকে তরে তুলে অতুলনীয়।
ভারতীয় উপমহাদেশে বিভিন্ন উপলক্ষ্যকে কেন্দ্র করে আয়োজিত হয়ে শেরের বহছ বা কাব্য বিতর্ক অনুষ্ঠানের; যা সুস্থ রুচি এবং সাহিত্য বিনোদনের খোরাক যোগায়। আল-মাদারিসুল আহলিয়্যাহগুলোতে (কওমী মাদরাসা) এ ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজিত হয় বেশ কয়েক দশক ধরে।
শেরের বহছের আরবি প্রতিশব্দ:
শেরের বহছকে আরবিতে مساجلة شعرية এবং سجال الشعر বলা হয়। উর্দু ও ফার্সী ঘনিষ্ঠতার কারণে যদিও بحث الشعر، مناظرة الشعر শব্দ ব্যবহার আমাদের মাঝে প্রচলিত। তবে শেরের বহছের সঠিক আরবি প্রতি শব্দ হলো: مساجلة شعرية, سجال الشعر.
তাছাড়া بحث الشعر কে আরবগণ কাব্য অনুসন্ধান ও গবেষণার অর্থে ব্যবহার করে থাকেন।
শেরের বহছ অনুষ্ঠানের রূপরেখা:
শেরের বহছ একটি প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানের সূচনা হয় কাব্যাকিারে সালাম বিনিময়ের মাধ্যমে। এতে থাকে দুটি পক্ষ। প্রতিটি পক্ষের অংশগ্রহণকারীগণ নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণে উৎকৃষ্ঠ কবিতা, কসিদা আবৃতি করে থাকেন। তবে, এই অনুষ্ঠানের একটি অদ্ভুত রীতি প্রচলিত রয়েছে; যা অনুষ্ঠানের আকর্ষণকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আর তা হলো:
এক পক্ষের আবৃতি করা শেরের শেষাক্ষর দিয়ে অপর পক্ষকে শেরের সূচনা করতে হয়। এ জাতীয় অনুষ্ঠানগুলোতে আবৃতি করা হয় উর্দু, ফার্সী এবং আরবী শের।
অংশগ্রহণ কারীগণ যেভাবে প্রস্তুতি গ্রহণ করবেন:
প্রতিযোগিতায় ভালো করতে অধিক শের মুখস্থের বিকল্প নেই। ধারাবাহিক কসিদা মুখস্ত না করে হরফ ভিত্তিক শের মুখস্থ করা ফলপ্রসূ হয়। যে সকল হরফ কবিতার শেষে অধি ব্যবহৃত হয়, সেগুলো হলো: ا، و، ي، ر، ن، م، ة، ت، ح، د
সুতরাং উপরোক্ত হরফগুলোর মাধ্যমে শুরু হওয়া শের অধিক পরিমাণে মুখস্থ করা। অধিক শের মুখস্থের দ্বায়িত্ব নির্দিষ্ট কতিপয় ব্যক্তির উপর চাপিয়ে দেওয়া উচিত নয়; বরং সম্বলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে মুখস্থের বোঝা লাঘব করা যেতে পারে।
মূল প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের পূর্বে ছোট পরিসরে নিজেদের মধ্যে প্রস্তুতিমূলক প্রতিযোগিতার আয়োজন করা এবং নিজেদের দূর্বলতাগুলো চিহ্নিত করে তা সারিয়ে উঠা।
অধিক শের/কবিতা মুখস্থের জন্য যা সহায়ক হতে পারে:
প্রথমত অধিক শের/কবিতা মুখস্থের সহায়ক হতে পারে দরসী কিতাবাদি। এরপর নিজের সংগ্রহে থাকা নির্বাচিত শেরগুলো হতে পারে আপনার সঙ্গী। তাছাড়া বিভিন্ন ইসলামী নাশিদে ব্যবহৃত পত্নী, বাইতগুলোকেও হরফ ভিত্তিক আলাদাভাবে সংরক্ষণে রাখতে পারেন।
অধিক শের/কবিতা মুখস্থের জন্য সহজ-সরল শের নির্বাচন করা জরুরি।
প্রতিপক্ষকে পরাজিত করার কৌশল:
সাধারণতও ر، ط، ح، ج ইত্যাদি হরফে শুরু হওয়া শেরের সংখ্যা খুবই কম। এক্ষেত্রে প্রতিপক্ষকে দুর্বলতাকে সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করা যেতে পারে।
শেষ কথা, একটি সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খল আয়োজন অনুষ্ঠানের সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তুলে। শেলের বহছের আয়োজন হোক সুন্দর ও সুশৃঙ্খল। ঐতিহ্য ছড়িয়ে পড়ুক প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম।