হায়েজ ও নেফাসের সময়সীমার বাইরে যে স্রাব নির্গত হয় তাকে ইস্তিহাজা বলে। ইস্তিহাজাকে ইংরেজিতে Non-Menstrual Vaginal Bleeding বলা হয়। সাধারণত ঋতুমতী নারীর তিন দিনের কম বা দশ দিনের বেশি অথবা গর্ভবতী নারীর সন্তান প্রসবের পর চল্লিশ দিনের বেশী রক্তক্ষরণ হলে সে রক্তকে ইস্তিহাজা বলা হয়।
হায়েজ ও ইস্তিহাজার মাঝে পার্থক্য:
হায়েজ (ঋতুস্রাব) ও ইস্তিহাজার উৎস ও বৈশিষ্ট্যে পার্থক্য রয়েছে। এর মৌলিক পার্থক্যগুলো হলো:
বৈশিষ্ট্য: | হায়েজ (ঋতুস্রাব): | ইস্তিহাজা: |
---|---|---|
উৎস: | জরায়ুর গভীর থেকে নির্গত হয়। | যৌনাঙ্গ বা জরায়ুর মুখ থেকে নির্গত হয়। |
সৃষ্টি: | লাল ও সাদা রক্ত কণিকা এবং এর সাথে লেগে থাকা আবরণের ভগ্নাংশ বিশেষ। | শুধু মাত্র লাল ও সাদা রক্ত কণিকা। |
ঘনত্ব: | ঘন হয়। | ঘন হয় না। |
জমাট: | হায়েজের রক্ত জমাট বাঁধে না। | ইস্তিহাজার রক্ত জমাট বাঁধে। |
রং: | নিকষ কালো। কখনো পরিবর্তন হয়ে লাল, হলদে, মেটে। আবার কখনো শ্লেষ্মার মত হয়। | টকটকে লাল হয়। |
গন্ধ: | হায়েজের রক্ত দুর্গন্ধ যুক্ত হয়ে থাকে। | দুর্গন্ধ মুক্ত হয়। |
সময়: | হায়েজের সময় নির্দিষ্ট। (৩ থেকে ১০ দিন পর্যন্ত।) | সময় অনির্দিষ্ট। |
ইস্তিহাজার লক্ষণ:
ইস্তিাহাজার বিভিন্ন লক্ষণ রয়েছে। প্রসিদ্ধ লক্ষণগুলো হলো:
১. ৯ বছর বয়সের আগে নির্গত রক্তস্রাব।
২. যৌনাঙ্গ থেকে তিন দিনের কম নির্গত রক্তস্রাব।
৩. দশ দিনের বেশি নির্গত রক্তস্রাব।
৪. গর্ভাবস্থায় নির্গত স্রাব।
৫. সন্তান প্রসবের পর চল্লিশ দিনের বেশি রক্তক্ষরণ হওয়া।
৬. পায়ুপথে রক্তক্ষরণ হওয়া।
উপরিউক্ত লক্ষণগুলোর কোনো একটি দেখা গেলে তা ইস্তিহাজা সাব্যস্ত হবে।
ইস্তাহাজাগ্রস্থ নারীর নামাজ-রোজা ও অন্যান্য ইবাদত:
ইস্তিহাদাগ্রস্থ নারী ফজর, ওয়াজিব, সুন্নত ও নফল রোজা রাখতে পারবে। তাছাড়া অন্যান্য ইবাদত যেমন: কুরআন তেলাওয়াত দোয়া, যিকির, তাসবীহ পাঠ ইত্যাদি সবই করতে পারবে। এ সময়ে স্ত্রী সহবাস করা বৈধ। এতে শরীয়তের পক্ষ থেকে কোনো বিধি-নিষেধ নেই। নামাজের ক্ষেত্রে, প্রতি ওয়াক্তে পবিত্র হয়ে নামাজ আদায় করতে পারবে।
ইস্তিহাজাগ্রস্থ নারী মাজুর হলে করণীয়:
ইস্তিহাজাগ্রস্থ নারী মাজুর হলে প্রতি ওয়াক্তের শুরুতে অজু করবে এবং সে অজুর মাধ্যমে ওয়াক্ত শেষ হওয়া পর্যন্ত ফরজ-নফল সকল ইবাদত পালন করতে পারবেন। তবে ইস্তিহাজা ব্যতীত অজু ভঙ্গের অন্য কোনো কারণ পাওয়া গেলে পবিত্রতা নষ্ট হবে এবং পুনরায় অজু করতে হবে।
মাজুর হওয়ার একটি মৌলিক শর্ত হলো, কোনো এক নামাজের ওয়াক্তের পুরো সময় জুড়ে এত দীর্ঘ সময় রক্তক্ষরণ হওয়া, যার ফলে শুধু মাত্র অজুর ফজর অঙ্গগুলো ধৌত করে সংক্ষেপে ফরজ-ওয়াজিব নামাজ আদায় করা যায় না।
এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে ইস্তিহাজাগ্রস্থ নারী মাজুর হিসেবে বিবেচিত হবে। আর একবার মাজুর সাব্যস্ত হলে পরবর্তী ওয়াক্তগুলোতে অনুরূপ উজর থাকা আবশ্যক নয়। অর্থাৎ কিছু সময় রক্ত নির্গত হলেও মাজুর হিসেবে গণ্য হবে।
ইস্তিহাজাগ্রস্থ নারী মাজুর না হলে করণীয়:
আর মাজুর নন, এমন নারী অজু করে সকল ইবাদত পালন করতে পারবেন। তবে ওয়াক্তের ভেতর পুনরায় রক্তস্রাব দেখা দিলে বা অজু ভঙ্গের অন্য কোনো কারণ পাওয়া গেলে পবিত্রতা বিনষ্ট হবে। পবিত্রতা অর্জনে পুনরায় অজু করতে হবে; গোসল করা জরুরি নয়।
ইস্তিহাজা হল হায়েজ ও নেফাসের সময়সীমার বাইরে যে স্রাব নির্গত হয়। ইস্তিহাজা এবং হায়েজের মধ্যে কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। যেমন: উৎস, রং, গন্ধ ও সময়সীমা। ইস্তিহাজাগ্রস্থ নারীরা নামাজ, রোজা, কুরআন তেলাওয়াতসহ অন্যান্য ইবাদত পালন করতে পারেন।