মানবজাতির সৃষ্টির রহস্য আল্লাহ তায়ালা কুরআনুল কারিমে বর্ণনা করেন। কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তায়ালা বলেন: وَمَا خَلَقۡتُ ٱلۡجِنَّ وَٱلۡإِنسَ إِلَّا لِيَعۡبُدُونِ অর্থ: “আর আমি মানব ও জ্বীন জাতিকে ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি।” [সূরা আজ জারিয়াত, আয়াত: ৫৬]
মানব জাতিকে হেদায়েতের পথে পরিচালিত করার জন্য আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীর সূচনালগ্ন থেকে রাসুল সা. পর্যন্ত বহু নবি ও রাসুল প্রেরণ করেন। যারা সমগ্র মানব জাতিকে এক আল্লাহর ইবাদত, আল্লাহ প্রদত্ত বিধি-বিধান পালন, ভালো কাজে উদ্ধুদ্ধকরণ এবং অশ্লীল পাপাচার থেকে বিরত থাকার প্রতি আহ্বান করেন। তাদের ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ নবি ও রাসুল হিসেবে আগমন করেন হযরত মুহাম্মদ সা.। তিনি চল্লিশ বছর বয়সে নবুয়াত প্রাপ্ত হন এবং দীর্ঘ ২৩ বছর নবুওয়াতের দ্বায়িত্ব পালন করেন।
যারা নবি-রসুলদের আনীত হেদায়াতের অনুসরণ করেন, তাদেরকে ‘মুমিন’ ও ‘মুসলমান’ বলা হয়। আর যারা নবি-রসুলদের আনীত হেদায়াতের অনুসরণ না করে নিজেদের কুপ্রবৃত্তির অনুসরণ করেন এবং আল্লাহ কে একমাত্র সৃষ্টিকর্তা হিসেবে বিশ্বাস করেন না; তাদেরকে ‘কাফের’ বলা হয়।
ইসলাম ধর্ম গ্রহণে করণীয়:
ভিন্ন মতাদর্শী যেকোনো ব্যক্তি ইসলাম গ্রহণ করতে পারেন। ইসলাম নির্দিষ্ট কোনো সম্প্রদায়ের ধর্ম নয়। বরং এটি সকল যুগের সকল মানুষের জন্য আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত জীবন ব্যবস্থা। অমুসলিম থেকে ইসলাম গ্রহণের পদ্ধতি নিয়ে নিম্নে আলোচনা করা হলো।
ইসলাম গ্রহণের পদ্ধতি:
নিম্নোক্ত বিষয়গুলোর প্রতি অন্তরে বিশ্বাস স্থাপন এবং মুখে স্বীকার করার মাধ্যমে যে কেউ ইসলাম গ্রহণ করতে পারেন।
১. আসমান ও জমিনের সাথে যা কিছু বিদ্যমান রয়েছে (দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান;) যা কিছুর সৃষ্টিকর্তা হলেন আল্লাহ। আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ এগুলো সৃষ্টি করেন নি।
২. আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ ইবাদতের যোগ্য নয়।
৩. মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রাসুল।
উপরিউক্ত বিষয়গুলো ইসলামের মৌলিক বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত। কাজের সেগুলোর প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের মাধ্যমে যে কেউ প্রাথমিকভাবে ইসলাম গ্রহণ করতে পারেন।
উল্লেখ্য যে, ইসলাম গ্রহণের পর আরো কিছু মৌলিক বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে। যথা:
১. ফেরেশতাগণ আল্লাহর সৃষ্টি।
২. সকল নবি-রসুলদের প্রতি ইমান আনা। অর্থাৎ, তারা আল্লাহর পক্ষ থেকে দুনিয়ায় প্রেরিত হয়েছেন।
৩. আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ আসমানি কিতাবের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা। অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা নবি-রসুলদের উপর বহু আসমানী কিতাব অবতীর্ণ করেছেন।
৪. কিয়ামত দিবস সংগঠিত হবে এবং তা সত্য – এ বিষয়ে বিশ্বাস স্থাপন করা।
৫. সকল বিষয়ে ভালো-মন্দ নির্ধারণ অর্থাৎ তাকদীর আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়ে থাকে।
উপরিউক্ত বিষয়াবলির উপর বিশ্বাস ও মুখে স্বীকার করার মাধ্যমে যে কেউ ইসলাম গ্রহণকারী হিসেবে গণ্য হবে।
ইসলাম গ্রহণের জন্য গোসল বা মসজিদে প্রবেশ করতে হয় না
ইসলাম গ্রহণের জন্য গোসল করা, মসজিদে প্রবেশ করা বা অন্য কারো হাতে ইসলাম করার প্রয়োজন নেই। বরং উপরিউক্ত বিষয়ে বিশ্বাস স্থাপনের মাধ্যমে যে কেউ ইসলাম গ্রহণ করতে পারে। তবে হ্যাঁ, মৌলিকভাবে ইসলাম গ্রহণের পর সঠিক পথে পরিচালিত হওয়ার জন্য আলেমের শরণাপন্ন হতে হবে। এক্ষেত্রে নিকটস্থ মসজিদ বা মাদ্রাসায় যোগাযোগ করতে পারেন।
ইসলাম গ্রহণের মাধ্যমে কি পূর্বের সকল গোনাহ মাফ হয়ে যায়?
হ্যাঁ। ইসলাম গ্রহণের মাধ্যমে পূর্বের সকল গোনাহ মাফ হয়ে যায়।
একজন নতুন ইসলাম গ্রহণকারীর জন্য করণীয়:
ইসলাম গ্রহণের পর শরীর অপবিত্র থাকলে গোসল করে নিজেকে পবিত্র করা আবশ্যক। অতঃপর একজন অভিজ্ঞ আলেমের তত্ত্বাবধানে থেকে কুরআন, হাদিস, আকীদা, মাসআলা-মাসায়েলসহ প্রয়োজনীয় বিধি-বিধান শিক্ষা লাভ করা অত্যাবশ্যকীয়। পাশাপাশি হযরত মুহাম্মদ সা. এর জীবনী, সাহাবাদের জীবনী, পূর্ববর্তী আলেমদের জীবনীসহ অমুসলিম থেকে যারা ইসলাম গ্রহণ করেছেন, তাদের জীবনবৃত্তান্তও পড়তে পারেন।
ইসলাম সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা লাভের জন্য নিম্নোক্ত বইগুলো পড়তে পাড়েন:
কুরআনুল কারীমের বাংলা অনুবাদ ও ব্যাখ্যা:
ইসলামের মৌলিক উৎস গ্রন্থ হলো কুরআন। যা আল্লাহ তায়ালা মুহাম্মদ রা. এর উপর নাজিল করেছেন। কুরআনে বিভিন্ন বিধি-নিষেধ, হালাল-হারাম ও বিভিন্ন উপদেশ রয়েছে। কুরআনে যা কিছু রয়েছে; তার প্রতি ইমান আনা এবং সে অনুযায়ী আমল করা জরুরি। কুরআনে রয়েছে এমন কোনো বিধি-বিধান অস্বীকার করা বা অবজ্ঞা করার দ্বারা উক্ত ইসলাম থেকে বেড়িয়ে যায়। ফলে সে মুসলিম হিসেবে বিবেচিত হয় না। তাই কুরআনের অনুবাদ ও ব্যাখ্যা জানা আমাদের জন্য আবশ্যক। নিম্নোক্ত বইগুলো কুরআনের তাফসীর জানতে সহায়তা করবে।
১. তাওজিহুল কুরআন –মুফতী তকী উসমানী রহ.
২. মাআরিফুল কুরআন –মুফতী শফী উসমানী রহ.
৩. তাফসীরে উসমানী –শিব্বীর আহমদ উসমানী রহ.
৪. সফওয়াতুত তাফাসির –ড. মুহাম্মাদ আলী আস-সাবুনি রহ.
হাদিস বিষয়ক গ্রন্থ:
ইসলামী বিধি-বিধানের দ্বিতীয় উৎস হলো হাদিস। কুরআনের পাশাপাশি হাদিস জানা আমাদের জন্য জরুরি। রাসুল সা. এর হাদিস বিষয়ে জানতে নিম্নোক্ত বইগুলো পড়তে পারেন:
১. রিয়াজুস সালেহীন – ইমাম নববী রহ.
২. আত তারগিব ওয়াত তারহীব – ইমাম মুনজিরি রহ.
৩. শামায়েলে তিরমিযী
হযরত মুহাম্মদ সা. এর জীবনী :
১. আর রাহিকুল মাখতুম
২. সিরাতে মুস্তফা
পরিশেষে, ইসলাম গ্রহণের পর মনোবল দৃঢ় রাখা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সৎ পথে পরিচালিত করুন।