ইসলামী নাশিদ, যেগুলো একসময় চিত্ত প্রশান্তি ও দ্বীনি অনুপ্রেরণা দান করত, আজ সেগুলোর মূল উদ্দেশ্য ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। একসময় নাশিদগুলো সাদা-মাটা এবং হারাম বাদ্যযন্ত্রের সংমিশ্রণ ছাড়া পরিবেশিত হতো। কিন্তু বর্তমানে অধিকাংশ নাশিদে হারাম বাদ্যযন্ত্রের উপস্থিতি বিদ্যমান, যা সম্পূর্ণ শরিয়াহ পরিপন্থী কাজ।
নাশিদের বর্তমান অবস্থা
বর্তমানে ইসলামী নাশিদগুলোতে একধরনের উদ্বেগজনক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ইসলামী নাশিদের প্রাথমিক রূপ যেখানে সাদা-মাটা ও সংযত ছিল, সেখানে আজ এর সঙ্গে বাদ্যযন্ত্রের উপস্থিতি ক্রমাগত বেড়ে চলেছে। এমনকি যেসব নাশিদে প্রাথমিকভাবে বাদ্যযন্ত্রের কোনো ব্যবহার ছিল না, সেগুলোতেও পুনরায় বাদ্যযন্ত্র সংযোজন করা হচ্ছে।
এই প্রবণতা নাশিদ এবং গানের মধ্যে পার্থক্য প্রায় বিলীন করে দিয়েছে। এই পরিবর্তন শুধু নাশিদের মৌলিকতাকেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে না, বরং এটি মুসলিম উম্মাহর ইমান ও আমলের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে। ইসলামি নাশিদের আড়ালে এই ফেতনা ছড়ানোর পেছনে মূলত তিনটি শ্রেণির লোকদের ভূমিকা রয়েছে:
- গানের শিল্পী: যারা গানের আদলে নাশিদের নাম ব্যবহার করে হারাম উপাদান যুক্ত করছে।
- নাশিদ শিল্পী: যারা ইসলামী নাশিদের পরিচয়ে হারাম বাদ্যযন্ত্রের প্রতি মানুষকে আকৃষ্ট করছে।
- কনটেন্ট ক্রিয়েটর: যারা মটিভেশনাল ভিডিও বা বক্তৃতার সাথে হারাম ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক যুক্ত করে তা প্রচার করছে।
ইসলামী সংস্কৃতির অধঃপতনের কারণ
ইসলামী সংস্কৃতির অধঃপতনের অন্যতম কারণ হলো হারাম কনটেন্ট, বিশেষত বাদ্যযন্ত্রের প্রতি মানুষের আসক্তি। এই প্রভাব ইসলামী সংস্কৃতিকে এমনভাবে আঘাত করছে যা সাধারণ মানুষের ইমান ও আমলকে দুর্বল করে তুলছে। ইসলামী সংস্কৃতির নামে যখন এ ধরনের হারাম উপাদান সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে, তখন তারা উপলব্ধি করতে পারে না যে এটি তাদের জন্য কতটা ক্ষতিকর।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন:
“যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার হোক এটা কামনা করে, তাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে যন্ত্রণাময় শাস্তি রয়েছে।” (সূরা আন-নূর: ১৯)
উপরোক্ত আয়াত আমাদেরকে সতর্ক করে দেয় যে, অশ্লীলতা ও হারাম প্রচারকারীর জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে যন্ত্রণাময় শাস্তি রয়েছে। কাজেই এ থেকে বিরত থাকা এবং যথাযথ শরীয়া পালন করা আমাদের সবার দায়িত্ব।
আমাদের করণীয়
- সতর্কতা অবলম্বন করা: আমরা যা শুনি বা দেখি, তার প্রতি মনোযোগী হওয়া অত্যন্ত জরুরি।
- সঠিক নাশিদ নির্বাচন করা: হারাম বাদ্যযন্ত্রবিহীন নাশিদ শোনা এবং পরিবেশনা করা।
- ফেতনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ: ফেতনা ছড়ানোর অপচেষ্টা প্রতিহত করা।
- শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধি: ইসলামি আদর্শ ও নীতিমালা অনুযায়ী সঠিক সংস্কৃতির প্রসার ঘটানো।
- দ্বীনি জ্ঞানার্জন: দ্বীনের গভীর জ্ঞান অর্জন করে হারাম ও হালালের মধ্যে পার্থক্য বোঝা।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে এসব ফেতনা থেকে রক্ষা করুন এবং ইসলামী সংস্কৃতির মৌলিকতা বজায় রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।