শুধু পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, রমজানের রোজা, ফরজ নফল, ওমরা, যাকাত এবং নফল ইবাদতের সীমাবদ্ধ নয় ইসলাম। ইসলাম কেবল কতিপয় ইবাদত পালনের সমষ্টিগত ধর্ম নয় বরং আল্লাহ প্রদত্ত এক পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। শারীরিক ও আর্থিক ইবাদতের সমন্বয়ে গঠিত ইসলাম জন্ম লগ্ন থেকে মৃত্যু অবধি পুরো জীবনের প্রতিটি কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত। প্রতিটি ক্ষেত্রেই রয়েছে ইসলামের সুনির্দিষ্ট বিধান। পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক সকল বিষয়ের সমষ্টির নাম হলো ইসলাম।
ইসলামে আর্থিক লেনদেন সংক্রান্ত বিধিবিধান একেবারেই সুনির্দিষ্ট; যা অন্যান্য ধর্মে অনুপস্থিত। এ কারণেই ফিকহী কিতাবাদিতে নামাজ, রোজা, হজ্জ, যাকাত, উমরা-এর পাশাপাশি বিরাট একটি অংশ জুড়েই আলোচিত হয় লেনদেন সংক্রান্ত বিধিবিধান। কেননা আমরা রাসুল সা.-এর জীবনী তালাশ করতে পাই; রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জীবনের বৃহৎ একটি অংশ মানুষের লোকমা হালাল করার পিছনে ব্যয় করেছেন। তিনি মদিনার বাজার পর্যবেক্ষণ করতেন। হারাম অর্থ উপার্জন, সুদ, জুয়ার ব্যাপারে লোকদেরকে সতর্ক করতেন। এ সংক্রান্ত হাজার হাজার হাদিস রাসুল সা. থেকে বর্ণিত রয়েছে। যা ইসলামী শরিয়তের মূল ভিত্তির অন্যতম।
লেনদেন আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমরা প্রতিনিয়তই পণ্য-মূল্যের আদান-প্রদান করে থাকি। ক্রেতা হিসেবে মূল্য পরিশোধ আর বিক্রেতা হিসেবে পণ্য অর্পণ করে থাকি। এখানেও রয়েছে শরিয়ত কর্তৃক সুনির্ধারিত নীতিমালা। কেননা, ক্রেতা কর্তৃক মূল্য পরিশোধ এবং পণ্য ভালোভাবে বুঝে পাওয়া তার হকের অন্তর্ভুক্ত। অনুরূপভাবে বিক্রেতা পণ্যে ভেজাল না করা, কারচুপি না করা, মিথ্যা না বলা, ধোঁকা না দেওয়া, হাতের নাগালের বাইরে অস্তিত্বহীন পণ্য বিক্রি না করা এবং অতিরিক্ত মূল্যে বিক্রি না করা – এসবই তার আবশ্যকীয় দায়িত্ব। এ আবশ্যকীয় দায়িত্ব শরিয়ত কর্তৃক তার উপর অর্পিত। যেন সমাজে জুলুম, অত্যাচার, নিপীড়ন বন্ধ হয়।
অনুরূপভাবে অর্থ সম্পদের ভারসাম্য রক্ষার্থে ইসলামে রয়েছে সুনির্দিষ্ট বিধিবিধান তথা: যাকাত। যেন ধনীরা আরো ধনী না হয়, অপরদিকে গরিবরা যেন ভাতের অভাবে মারা না যায়। এটি একটি ইনসাফপূর্ণ বণ্টন, যার দৃষ্টান্ত অর্থ কোনো অর্থব্যবস্থা দেখাতে পারেনি। একজন মুসলিম হিসেবে লেনদেন সংক্রান্ত বিধিবিধান জানা ও মানা আমাদের দ্বায়িত্ব।
ইসলামী লেনদেন সংক্রান্ত বিধি-বিধান জানতে হলে:
‘ইসলামী অর্থনীতির সহজ পাঠ’ মুফতি আব্দুল্লাহ মাসুম হাফি.-এর রচিত অর্থনীতি বিষয়ক একটি গ্রন্থ, যাতে ইসলামী অর্থনীতি ও অর্থব্যবস্থার পাশাপাশি পাশ্চাত্য অর্থব্যবস্থা নিয়ে সারগর্ভ আলোচনা করা হয়েছে।
বইটিতে ইসলামী অর্থনীতির ক্রমবিকাশ, পাশ্চাত্য অর্থব্যবস্থা তথা সামন্তবাদ, খ্রিষ্টান ধর্মযাজকদের প্রণীত অর্থব্যবস্থা, বণিকবাদ, প্রকৃতবাদ, চরম উদারনীতিবাদ, ক্লাসিক্যাল অর্থব্যবস্থা, কেইনযিয়ান চিন্তাধারা ও তথ্য, নয়া-ক্লাসিক্যাল চিন্তাধারা, মুদ্রাবাদী চিন্তাধারা, আধুনিক অর্থনীতিতে ইবনে খালদুন ও অ্যাডাম স্মিথ-এর অবদান; পুঁজিবাদী অর্থব্যবস্থা তথা পুঁজিবাদের উদ্ভব, পুঁজিবাদের মৌলিক নীতিমালা, বৈশিষ্ট্য এবং পুঁজিবাদের ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। অনুরূপভাবে সমাজতন্ত্র নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। যেমন: সমাজতন্ত্রের পরিচয়, মার্কসবাদ ও মার্কসবাদ-এর মূলনীতি।
সর্বশেষ ইসলামী অর্থব্যবস্থার ভিত্তি, বাইতুল মাল, মুদ্রানীতি, জাতীয় আয় ও জিডিপি; বাজার অর্থনীতি, সুনীল অর্থনীতি, ইন্টারনেট অর্থনীতি, ই-কমার্স ইকোনমি, সবুজ অর্থনীতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
বইটি থেকে ইসলামী অর্থনীতি ও অর্থব্যবস্থার সম্পর্কে জানতে আগ্রহী পাঠকবৃন্দ প্রতিটি বিষয় সুবিস্তারিতভাবে জানতে পারবেন। যা ইসলাম সম্পর্কে মৌলিক ধারণা লাভে সহায়তা করবে।
মতামত পর্যালোচনা
ইসলামী অর্থনীতির সহজ পাঠ
‘ইসলামী অর্থনীতির সহজ পাঠ’ অর্থনীতি বিষয়ক একটি গ্রন্থ, যাতে ইসলামী অর্থনীতির পাশাপাশি পাশ্চাত্য অর্থব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
মতামত পর্য়ালোচনা
-
সারগর্ভ আলোচনায় এককথায় বইটি অনন্য।