বরেণ্য আরব সাহিত্যিকদের জবানে ইসলামি সাহিত্য – বইটি ইসলামি সাহিত্য বিষয়ে আরব-অনারব ছয়জন বরেণ্য সাহিত্যিকের সাক্ষাৎকারের সংকলন; যাতে ইসলামি সাহিত্য চর্চার মূল উপাদান, রূপরেখা, অঙ্গন, ক্ষেত্র ও শর্তসহ নানাদিক ফুটে উঠেছে।
বিশেষত, আরবীয় কবি, গল্পকার ও সাহিত্য-সমালোচক নাজিব কিলানী ও তাহের আতাবানি; স্বীয় বক্তব্যে ইসলামি সাহিত্যের মূলনীতি ও সীমারেখা, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইসলামি সাহিত্যের মূল্যায়ন, সাহিত্য চর্চার মূল উপাদান ও শর্তসহ ইসলামি সাহিত্য চর্চার বিভিন্ন দিক নির্দেশনা প্রদান করেছেন।
অনুরূপভাবে অনন্য প্রতিভাধর আরব কবি আবদুর রহমান আল আশমাবি ইসলামি কবির পরিচয়, কাব্যপ্রতিভাধারী তরুণদের ব্যাপারে বিশেষ পরামর্শ এবং আরবি সাহিত্যের মূল নথি সম্পর্কে সম্মুখ ধারণা দিয়েছেন। তাছাড়াও অন্যান্য কবি-সাহিত্যিকদের বক্তব্যে কবিতার প্রভাব, সাহিত্যের আধুনিকতা, ইসলামি সাহিত্যের বিশ্বজনীনতা এবং ইসলামি সাহিত্যিক ও মুসলিম সাহিত্যিকদের মাঝে পার্থক্য সুস্পষ্ট হয়েছে।
বইটি থেকে চয়নকৃত অংশ:
কথার রেশ ধরে সাহিত্যিকদের কর্তব্য সম্পর্কে নাজিব কিলানী বলেন:
”বড় বড় লেখক-সাহিত্যিকের বিচিত্র অভিজ্ঞতা সম্পর্কেও ধারণা থাকতে হবে। মূলত এটাই তার সাহিত্য-সাধনার পথে প্রথম দিকনির্দেশক হিসেবে কাজ করবে। এমনকি সাহিত্য-বিষয়ক একাডেমিক লেখাপড়ার চেয়েও এটার প্রয়োজন বেশি। গদ্যশৈলী, কবিতার ছন্দ, অন্ত্যমিলের জ্ঞান ইত্যাদি হাসিলের চেয়ে এটার স্থান আগে।” [বরেণ্য আরব সাহিত্যিকদের জবানে ইসলামি সাহিত্য – ১৫]
এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন: ”সাহিত্য নিছক কিছু চটকদার শব্দ-বাক্যের নাম নয়।” [বরেণ্য আরব সাহিত্যিকদের জবানে ইসলামি সাহিত্য – ১৫]
ইলসামি কবি-সাহিত্যিকদের উদ্দেশ্যে তাহের আতাবানী বলেন:
”ইসলামের দায়বদ্ধতাকে মেনে নেওয়াই কবির প্রথম কাজ। দ্বিতীয়ত, তিনি নিজ যুগের গণ্ডিতে অবস্থান করবেন এবং নিজের সংবেদনশীলতা কাজে লাগিয়ে মহৎ মহৎ সৃষ্টি উপহার দেবেন। তিনি অন্যদের লেখার অনুকরণে গা ভাসাবেন না, আবার নিজ সময়ের শৈল্পিকতা ও নান্দনিকতার স্রোত থেকে গা বাঁচিয়েও চলবে না। বরং স্বকীয়তা ঠিক রেখে নিজ আদর্শ ও চেতনার সঙ্গে সামঞ্জস্যশীল যেকোনো উপাদান সেখান থেকে গ্রহণ করবেন।” [বরেণ্য আরব সাহিত্যিকদের জবানে ইসলামি সাহিত্য – ১৯]
“আমাদের ইসলামি বিশ্বে পশ্চিমা চিন্তার বিস্তার ঘটেছে একমাত্র সাহিত্যের মধ্য দিয়ে! তাহলে বলুন, আমরা আমাদের ইসলামি বাণী পৌঁছে দেওয়ার জন্য কেন সাহিত্যকে মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করব না?” [বরেণ্য আরব সাহিত্যিকদের জবানে ইসলামি সাহিত্য – ২১]
”তাই কবিতা যখনই প্রেরণা যোগাতে ব্যর্থ হয়, তখন তা নিজের প্রাণ ও সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলে। আর প্রেরণা তৈরিতে কবিতার বড় একটি শক্তি হল কবিতার ছন্দ বা তাল-লয়। এজন্য গদ্যাকারে লেখা কবিতাকে আমি গদ্যই বলি। তার ভাষা যতই নির্মল ও প্রভাবক হোক- আমার কাছে তা কবিতা নয়।” [বরেণ্য আরব সাহিত্যিকদের জবানে ইসলামি সাহিত্য – ২৩]
প্রতিভাধর কবি আবদুর রহমান আল আশমাবি বলেন:
“একজন সাহিত্যিক যে গুণাবলি ধারণ করে, তার সাহিত্য পাঠককে সেদিকে আকৃষ্ট করে।” [বরেণ্য আরব সাহিত্যিকদের জবানে ইসলামি সাহিত্য – ২৬]
সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে কবিতার অবদান ও সক্রিয় ভূমিকা সম্পর্কে ইনসাফ বুখারি বলেন:
”পৃথিবীর যেখানে যে যুগে কবিরা রাজনৈতিক অবস্থান, ইতিহাসের গতি, সভ্যতার অবদান, মূল্যবোধ ও ভাবনাজগতে পরিবর্তনের মিশন নিয়েছেন, সেখানে তারা সফল হয়েছেন।” [বরেণ্য আরব সাহিত্যিকদের জবানে ইসলামি সাহিত্য – ৩৩]
অনুবাদক ও সংকলক সম্পর্কে:
বরেণ্য আরব সাহিত্যিকদের জবানে ইসলামি সাহিত্য– বইটির অনুবাদক ও সংকলক মাওলানা জহুরুল ইসলাম ২রা সেপ্টেম্বর, ১৯৯৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি শহীদ মুক্তিযোদ্ধা জামিয়া ইমদাদিয়া দারুল উলুম থেকে মাস্টার্স (দাওরায়ে হাদিস) সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে আরবি ভাষা শিক্ষা কেন্দ্র মারকাজুল লুগাতিল আরাবিয়্যাহ বাংলাদেশ-এ আরবি ভাষার উপর উচ্চতর ডিপ্লোমা এবং তাখাসসুস সম্পন্ন করেন। লেখালেখির পাশাপাশি বর্তমানে তিনি মারকাজুল লুগাতিল আরাবিয়্যাহ বাংলাদেশ-এ শিক্ষকতার দ্বায়িত্ব পালন করছেন।
মতামত পর্যালোচনা
বরেণ্য আরব সাহিত্যিকদের জবানে ইসলামি সাহিত্য
বরেণ্য আরব সাহিত্যিকদের জবানে ইসলামি সাহিত্য - বইটি ইসলামি সাহিত্য বিষয়ে আরব-অনারব ছয়জন বরেণ্য সাহিত্যিকের সাক্ষাৎকারের সংকলন; যাতে ইসলামি সাহিত্য চর্চার মূল উপাদান, রূপরেখা, অঙ্গন, ক্ষেত্র ও শর্তসহ নানাদিক ফুটে উঠেছে।
মতামত পর্য়ালোচনা
-
সময়ের বিবেচনায় বইটি যুগোপযোগী।
-
বইটির বিষয়বস্তু প্রাসঙ্গিক।