ইসলাম সম্পর্কে জানতে হলে প্রথমে আমাদের ইসলামের মৌলিক পরিভাষাগুলো জানতে হবে। মৌলিক পরিভাষাগুলো না জানা ইসলাম সম্পর্কে অনেক কিছুই অস্পষ্ট থেকে যাবে। গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয় সঠিক ভাবে না জানার কারণে গুরুত্বহীন মনে হবে। তাই আসুন! আমরা ইসলামের মৌলিক পরিভাষাগুলো জেনে নেই।
ইসলামের মৌলিক পরিভাষাগুলো:
নবী: আল্লাহ তায়ালার পক্ষ যার উপর ওহী অবতীর্ণ হয়, তাকে নবী বলা হয়।
রাসুল: আল্লাহ তায়ালার পক্ষ যার উপর ওহী অবতীর্ণ হয় এবং নতুন শরিয়ত প্রদান করা হয়, তাকে রাসুল বলে।
সাহাবী: ঐ সকল ব্যক্তিবর্গ; যারা ইমান গ্রহণের পর মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা. কে স্বচক্ষে দেখেছেন।
তাবেয়ী: যারা ইমান গ্রহণের পর সাহাবা রা. কে স্বচক্ষে দেখেছেন তাদেরকে তাবেয়ী বলা হয়।
তাবে তাবেয়ী: যারা ইমান গ্রহণের পর তাবেয়ীদেরকে কে স্বচক্ষে দেখেছেন তাদেরকে বলা হয়।
সাহাবী, তাবেয়ী ও তাবে তাবেয়ীদের বিশেষ মর্যাদা:
রাসুল সা. এ উম্মতের শ্রেষ্ঠ যুগ সম্পর্কে সাহাবী, তাবেয়ী ও তাবে তাবেয়ীদের যুগকে মর্যাদা দিয়েছেন। ইমরান ইবনু হুসাইয়িন রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:
“خَيْرُ أُمَّتِي قَرْنِي ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُم “
“আমার উম্মতের সবচেয়ে ভালো যুগ হলো আমার যুগ, যে যুগের মানুষের জন্য আমি প্রেরিত হয়েছি (অর্থাৎ সাহাবিগণ), আর তাদের পরেই সবচেয়ে ভালো তাদের পরবর্তী যুগের মানুষ (অর্থাৎ তাবেয়িগণ), আর এর পর তাদের পরবর্তী যুগের মানুষ (অর্থাৎ তাবি তাবেয়িগণ)” [বুখারী ৩/১৩৩৫]
‘সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম’ বাক্যটির সংক্ষিপ্ত রূপ ‘সা.’। এটি বিশেষ একটি দুরুদ, যা হযরত মুহাম্মদ সা. এর নাম মুখে উচ্চারণ করলে বলতে হয়। উল্লেখ্য যে, ‘রাসুল সা.’, ‘নবিজি সা.’, ‘মহানবী সা.’-এর দ্বারা উদ্দেশ্যে হযরত মুহাম্মদ সা.।
সাহাবাদের নামের শেষে ‘রাদিয়াল্লাহু আনহু’ বা সংক্ষেপে ‘রা.’ লেখা হয়। এটি একটি দোয়া, যা তাদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্য লেখা ও পড়া হয়।
সাহাবী পরবর্তী তাবেয়ী, তাবে তাবেয়ী, সালাফ, মুহাদ্দিসীন, মুফাসসিরিন, ফুকাহা, ইমাম ও বিজ্ঞ আলেমদের নামের শেষে ‘রাহিমাহুল্লাহ’ বা সংক্ষেপে ‘রহ.’ লেখা হয়। তারা উম্মতে মুসলিমাহ-এর প্রতি বিশেষ অবদান রেখেছেন, এজন্য শ্রদ্ধার সাথে তাদের নাম স্বরণ করা হয়।
আরো কিছু ইসলামি পরিভাষা:
কিতাব: বই। পরিভাষায়, ইসলামী বইপুস্তককে কিতাব বলা হয়।
হাদিস: রাসুল সা.-এর বাণী, কর্ম, আদেশ ও নিষেধ কে হাদিস বলে।
ফিকহ: কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও কিয়াস থেকে গবেষণালব্ধ শাখাগত বিধি-বিধান নিয়ে যে শাস্ত্রে আলোচনা করা হয়। তাকে ‘ফিকহ’ বলে।
মাসআলা: শাখাগত শরয়ী বিধানকে মাসআলা বলা হয়। যেমন: ওয়াক্ত হওয়ার পূর্বে নামাজ আদায় করলে তা আদায় হবে কিনা? মুফাসির কতদিন পর্যন্ত নামাজ কসর করতে পারবে ইত্যাদি।
ফতোয়া: দ্বীনি কোনো বিষয়ে মুফতী সাহেবকে জিজ্ঞাসা করার পর তিনি কুরআন, সুন্নাহ, ইজমা ও কিয়াসের আলোকে যে সমাধান দিয়ে থাকেন। তাকে বলা হয় ফতোয়া।
ইমাম: ইমাম শব্দের শাব্দিক অর্থ হলো নেতা। পরিভাষায়, কোনো শাস্ত্রে গভীর পাণ্ডিত্য অর্জনকারীকে উক্ত শাস্ত্রের ইমাম বলা হয়।
মুজতাহিদ: যিনি কুরআন, হাদিস, ইজমা ও কিয়াস থেকে মাসআলা বের করার যোগ্য রাখেন এবং মাসআলা বের করেন। তাকে মুজতাহিদ বলা হয়। যেমন: ইমাম আবু হানিফা রহ,, ইমাম মালেক রহ., ইমাম শাফেয়ী রহ., ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহ.।
►► আরো দেখুন: ফরজ, ওয়াজিব, সুন্নত ও নফল কাকে বলে?
মুহাদ্দিস: হাদিস শাস্ত্রের স্বীকৃত বিজ্ঞ ব্যক্তিদেরকে মুহাদ্দিস বলা হয়।
ফকিহ: কুরআন, হাদিস, ইজমা ও কিয়াসের মাধ্যমে মাসআলা উদ্ঘাটন করতে সক্ষম; এমন ব্যক্তিকে ফকীহ বলা হয়। যেমন: ইমাম আবু হানিফা রহ, ইমাম মালেক রহ., ইমাম শাফেয়ী রহ. ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহ.
আলেম: দ্বীনি বিষয়ে গভীর জ্ঞানের অধিকারী ব্যক্তিকে আলেম বলা হয়।
সুফী: যারা দুনিয়া বিমুখতাকে প্রাধান্য দিয়ে সর্বদা এক আল্লার ইবাদতে লিপ্ত থাকে। তাদেরকে সুফী বলা হয়।
মুজিজা: নবী-রাসুলগণ থেকে যে অলৌকিক ঘটনা প্রকাশ পায়; তাকে মুজিজা বলা হয়।
কারামত: আল্লাহ তায়ালার ইচ্ছায় মুমিন বান্দাদের থেকে যে অলৌকিক ঘটনা প্রকাশ পায়; তাকে কারামত বলা হয়।
বি.দ্র.: কারামত আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে বিশেষ সম্মান হিসেবে প্রকাশিত হয়। এটি বান্দার ইচ্ছাধীন নয়।