ইমাম আবু হানিফা (রহ.) এর পূর্ণ নাম: আবু হানিফা নুমান ইবনে সাবিত ইবনে নুমান ইবনে মারজুবান তাইমী কুফী। নুমান ইবনে মারজুবান কাবুলের নেতৃস্থানীয় ও অভিজাত শ্রেণীর মধ্যে খুবই দূরদর্শী ছিলেন।
তিনি মূল বংশে পারসিক। হযরত আলী (রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু)-এর খেলাফতকালে ইসলাম গ্রহণ করে কুফায় চলে আসেন এবং এখানকার বাসিন্দা হয়ে যান।
ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর জন্ম ও শৈশবকাল:
ইমাম আবু হানিফা (রহ.) খলিফা আব্দুল মালিক ইবনে মারওয়ান এর শাসনামল কুফার পূর্বাঞ্চলে জন্মগ্রহণ করেন। কুফায় ছিল অনেক সাহাবী ও তাবেয়ী, সবখানে ছিল দ্বীনি ও ইলমী পরিবেশ। সেই পরিবেশে ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বড় হয়েছেন।
ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর শিক্ষা দীক্ষা:
তিনি অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। ছিলেন বোদ্ধা ও দূরদর্শী। তিনি প্রথমত কুফা শহরে ইলমে কালামে পাণ্ডিত্য অর্জন করেন। তারপর ১২০ হিজরিতে ইমাম হাম্মাদ (রহ.)-এর মৃত্যুর পর ইমাম সাহেব তার স্থলাভিষিক্ত হন। ইমাম আমাশ, ইমাম হাম্মাদ সহ অনেক শায়েখ থেকে ইলমে হাদিস সম্পর্কে বুৎপত্তি অর্জন করেন।
ব্যক্তিগত জীবনে ইমাম আবু হানিফা (রহ.)
ইমাম আবু হানিফা (রহমতুল্লাহি আলাইহি)-এর জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্র এতটাই আকর্ষণীয় ও মনোমুগ্ধকর ছিল যে, প্রতিটি স্তরের মানুষের মধ্যে তার প্রতি ভালোবাসা বিদ্যমান ছিল। তিনি এক ধনী পরিবারের ও ব্যবসায়ী ছিলেন।
অনেক প্রাচুর্যের অধিকারী ছিলেন। তবুও তিনি অতি সাধারণ আরম্ভর হীন জীবন যাপন করতেন। তিনি নিজেই বর্ণনা করেন:“বার্ষিক খরচ ৪ হাজার দিরহাম নিজের কাছে রেখে বাকি সব দান করে দিতাম।”
ফিকহ ও হাদিস শাস্ত্রে ইমাম আবু হানিফা (রহ.)
ইমাম আবু হানিফা (রহ.) ইজতিহাদ ও ফিকহের ক্ষেত্রে চার ইমামের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অগ্রসর ছিলেন। তার ইজতিহাদ ও ফিকহ সর্বজন স্বীকৃত। তিনি ছিলেন গভীর জ্ঞানের অধিকারী, তীক্ষ্ণ বুদ্ধি ও ধীশক্তি সম্পন্ন।
বর্ণিত আছে, ইমাম শাফেয়ী (রহ.) একদা ইমাম মালেক (রহ.) কে জিজ্ঞেস করেন, আপনি কি ইমাম আবু হানিফা (রহ.) কে দেখেছেন? তিনি জবাবে বলেন: “সুবহানাল্লাহ! আমি তার মত এত বড় আলেম দেখিনি। আল্লাহর কসম! তিনি যদি বলতেন এই স্তম্ভটি স্বর্ণের, অবশ্যই তিনি তা যুক্তি দিয়ে প্রমাণ করতে পারতেন।
ইমাম শাফেয়ী (রহ.)-এর প্রসিদ্ধ উক্তি, যে ব্যক্তির উপর পাণ্ডিত্য অর্জন করতে চায় সে যেন ইমাম আবু হানিফা রহমতুল্লাহি আলাইহি এর অনুসরণ করে।” অন্য এক বর্ণনায় আছে, “সে যেন এবং আবু হানিফা রহমতুল্লাহি আলাইহি ও তাঁর শিষ্যদের শিষ্যত্ব গ্রহণ করে।”
একদা ইমাম আমাশ (রহ.)-এর দরবারে তিনি বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিলে ইমাম আমাশ (রহ.) জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি এই উত্তর কোন দলিলের ভিত্তিতে দিয়েছো? তিনি জবাবে বললেন: আপনার থেকে বর্ণিত এই হাদিসের মাধ্যমে উত্তর দিয়েছি। তখন তিনি উচ্চস্বরে বলে উঠলেন “হে ফকিহ সম্প্রদায়! আপনারা হলেন ডাক্তার আর আমরা হলাম ওষুধ বিক্রেতা।”
ইমাম সাহেবের ফিকহ শাস্ত্রে যেমন দখল ছিল অনুরূপ দখল ছিল হাদিস শাস্ত্রে। ইমাম সাহেবের ইজতিহাদ সর্বজন স্বীকৃত। কুরআন ও হাদিসের উপর গভীর জ্ঞান অর্জন করা ব্যতীত কোনো মুজতাহিদের জন্য ইজতিহাদ করা সম্ভব নয়। কেউ কেউ বলেছেন, ইমাম সাহেব চার হাজার শায়েখ থেকে হাদিস গ্রহণ করেছেন। একটি করে হলেও চার হাজার হাদিস। ইমাম আবু ইউসুফ (রহ.) বলেন, হাদিসের ব্যাখ্যায় ইমাম আবু হানিফা রহমতুল্লাহি আলাইহি-এর চেয়ে ভালো কোন ব্যাখ্যাকারী আমার দৃষ্টিতে পড়েনি।
ইমাম আবু হানিফা (রহ.)-এর মৃত্যু:
এই মহান ব্যক্তি ১৫০ হিজরির রজব মাসে, মতান্তরে শাবান মাসে ইহজগৎ ত্যাগ করেন করে পরপারে পাড়ি জমান।