রোজ নামচার শুরুতেই বলে রাখি, আমি ছোট বেলায় লেখাপড়ায় তেমন পারদর্শী ছিলাম না। লেখাপড়ায় মন বসতো না। আম্মা আমাকে রোজ রাত ১২টা পর্যন্ত পড়াতেন। এরপরেও আমি ক্লাসে, পরীক্ষায় কৃতি শিক্ষার্থী হিসেবে সম্মাননা পেতাম না।
জীবনে এক বার আমি ক্লাসে প্রথম হয়েছিলাম। সেটা ছিল নার্সারিতে পড়াকালে। আমি ভালো ছাত্র ছিলাম; বিষয়টি তা নয়। বরং সর্বপ্রথম ভর্তি হওয়ায় আমার রুল এক ছিল।
এরপর থেকে আজ পর্যন্ত কখনোই ক্লাসে প্রথম স্থান অর্জন করতে পারি নি। এক থেকে দশের ভেতরে আমাকে পাওয়া যেত না।
স্কুল লাইফে আমি সবচেয়ে কম পারদর্শী ছিলাম ইংরেজিতে। বলতে গেলে মুখস্থ বিদ্যার উপর নির্ভর করে পরীক্ষা দিতে হতো। পরীক্ষায় বিভিন্ন শব্দার্থ লিখতে হত। যেগুলোর অর্থ জানা ছিল না। সেগুলোর অর্থ ”চিনি ” লিখে আসতাম। এখন অবশ্য অনেক ভালোই ইংরেজি পারি।
স্কুলের বারান্দা পেরিয়ে নতুন ঠিকানায় স্বাগত জানাই। ভর্তি হলাম মাদ্রাসায়। কিন্তু না! এবারের লেখাপড়ার অবস্থা আগের থেকেও খারাপ। লেখাপড়ায় মনোযোগ নেই। ক্লাসে নিয়মিত পড়া আদায় হয় না। কিন্তু কেন?
এর পেছনে মূল রহস্য উদ্ঘাটন করতে সক্ষম হয়েছি। শায়েখ মহিউদ্দিন ফারুকী হাফি. বলেন: সবকিছু সহজ মনে হলেই বলা যায় না।
বাস্তবতা তাই, আমি যেটাকে পাড়া ভাবতাম। মোটেই সেটি পাড়া ছিল না। বরং সেটি ছিল আমার ধারণা। আমি ভাবতাম, আমি তো পাড়িই। কিন্তু যখন আমাকে কোন বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হতো। তখন কিছুই বলতে পারতাম না।
পরীক্ষার অকৃতকার্য হওয়ার অন্যতম কারণ ছিল: প্রচুর বানান ভুল হওয়া, প্রশ্ন ভালো ভাবে না বুঝা এবং পরীক্ষা শেষে রিভিশন না দেওয়া। এই তিন কারণে আমি অন্যদের থেকে বহু অংশে পিছিয়ে ছিলাম।
স্কুলে সাময়িক পরীক্ষাগুলোতে ৫টি থেকে ৪টি অথবা ৪ থেকে ৩টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হতো। আমি প্রশ্ন না বুঝার কারণে সকল প্রশ্নের উত্তর দিয়ে আসতাম। তাই পরীক্ষার হলে তাড়াহুড়া করার কিছুই নেই। বরং দৃঢ় ও স্থীরভাবে পরীক্ষা সমাপ্ত করাই কাম্য।
আমি তখন শরহে বেকায়া জামাতে পড়ি। ২য় মাসিক পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য মাদ্রাসা থেকে মাত্র ২ দিন সময় দেওয়া হয়েছে। মাদ্রাসায় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা বিষয়টি ভালো করে বুঝবেন। মূলত ২ দিনে সকল কিতাব আয়ত্ত করা সম্ভব না।
আমি মাকামাতে হারিরি সহ দুয়েকটি কিতাব ২ দিনে পড়ি। বাকি, ৪-৫ টা কিতাবে হাত পর্যন্ত দেইনি।
চোখের পলকেই সময় ঘনিয়ে এলো। সকাল থেকে পরীক্ষা শুরু হল। কিছু প্রশ্নগুলো ছিল এমন, কিছু উত্তর জানা আছে, কিছু প্রশ্নের উত্তর জানা নেই। আমার জানা প্রশ্নের উত্তরগুলো সৃুন্দরভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে লেখি। এভাবে একদিকে সাতটি কিতাবের পরীক্ষা শেষ হয়।
যাই হোক, পরীক্ষা শেষে হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। কিছুদিন পর রেজাল্ট দেওয়ার পালা। আমি ধরেই নিয়েছিলাম, বরাবরের মত এবারও রুল হয়ত বা ২০ এর পরে থাকবে। আমি বসে বসে গল্পগুজব করছি।
এমন সময় কেউ একজন এসে বলল: ……. ২য় হয়েছে। আমি বিস্মিত হলাম। আমিই দ্বিতীয় হয়েছি!
আলহামদু লিল্লাহ্! এরপর থেকে কোনো দিন পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ হয়নি। পরবর্তী বছর বার্ষিক পরীক্ষায় পুরোপুরি হাল ছেড়েই দিয়েছিলাম।
কিন্তু রেজাল্ট দেখে আমি পুরোপুরি হতবাক। মূলত, সেই পরীক্ষার পর থেকে আমার ভাগ্য বদলে যায়।
পরিশেষে, আল্লাহ তাওফীক ছাড়া কিছুই হয় না। দোয়া করি, যেন জীবনের শেষ পরীক্ষাতেও সাফল্যের সাথে উত্তীর্ণ হতে পারি।
আজকের রোজ নামচা এখানেই সমাপ্ত করছি।