ইমাম আবু হানিফা রহ. একজন ফকীহ হওয়ার পাশাপাশি একজন মুহাদ্দিসও ছিলেন। হাদিস শাস্ত্রে ইমাম আবু হানিফা রহ. এর রয়েছে উল্লেখযোগ্য অবদান। তবে তিনি মুহাদ্দিস হিসেবে সকলের কাছে পরিচিত নন। বরং ফকীহ হিসেবে মুসলিম উম্মাহর কাছে বেশ পরিচিত।
হদীস শাস্ত্রে ইমাম আবু হানিফা রহ.-এর অবস্থান
বর্তমান পৃথিবীতে যে সকল মাজহাব হক হওয়ার ওপর আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের নির্ভরযোগ্য ওলামায়ে কেরামের ঐক্যমত্য রয়েছে। সেগুলো হল:
১. হানাফি মাজহাব। ২. মালেকী মাজহাব। ৩. শাফেয়ী মাজহাব। ৪. হাম্বলী মাজহাব।
এই চার মাজহাবের মধ্যে সর্বপ্রথম প্রতিষ্ঠিত হয়েছে হানাফি মাজহাব। যার নামকরণ করা হয়েছে ইমামুল আজম আবু হানিফা (রহমতুল্লাহি আলাইহি)-এর দিকে সম্পৃক্ত করে।
আর তিনি সকল বিষয়ে পারদর্শী ও অভিজ্ঞ ছিলেন। বিশেষ করে তিনটি বিষয়ে অর্থাৎ ইলমে কালাম, ইলমে হদীস ও ইলমে ফিকহ। আর এসব বিষয়ে তিনি অতুলনীয় অদ্বিতীয় ব্যক্তি ছিলেন।
তবুও জীবনের শুরু ভাগে ইলমে কালাম, তারপর থেকে মৃত্যু পর্যন্ত জীবনের সিংহভাগ সময়ে ইলমে ফিকহ নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে তিনি একজন ফকিহ হিসেবে প্রসিদ্ধি লাভ করে।
যার ফলে বর্তমান সময়ে হানাফি বিদ্বেষী এক শ্রেণীর লোকেরা তাঁর হদীস শাস্ত্রের দক্ষতা সম্পর্কে সমালোচনা করতে গিয়ে বিভ্রান্তিকর অবাস্তব আপত্তি করেছে।
যেগুলো তাদের নির্বুদ্ধিতার ও রিজাল শাস্ত্রে অজ্ঞতার প্রমাণ বহন করে।
এ ব্যাপারে বিজ্ঞ মুহাদ্দীসিন ও ফকীহগণের বক্তব্য:
ইমাম আবু হানিফা (রহমতুল্লাহি আলাইহি)-এর হাদিস শাস্ত্রের দক্ষতার ব্যাপারে নির্ভরযোগ্য উলামায়ে কেরামের বক্তব্য রয়েছে।
তন্মধ্যে কিছু হল এই-
১. হযরত মক্কী ইবনে ইবরাহিম (রহমতুল্লাহি আলাইহি)-এর বক্তব্য, যিনি ইমাম বুখারী (রহমতুল্লাহি আলাইহি)-এর মাথার মুকুট, যার থেকে তিনি সহীহ বুখারীতে ২২টি ছুলাছিয়্যাতের মধ্যে ১১টি এনেছেন।
মক্কী ইবনে ইবরাহিম তাঁর (রহমতুল্লাহি আলাইহি) সম্পর্কে বলেন:
“ইমাম আবু হানিফা (রহমতুল্লাহি আলাইহি) নিজ যুগে সর্বশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ছিলেন। আর তৎকালীন আলাম সম্পর্কে ব্যাপক ব্যবহার ইলমে হাদিসের ক্ষেত্রেই হতো।”
২. হাসান ইবনে সালিহের বক্তব্য হল,
“ইমাম আবু হানিফা (রহমতুল্লাহি আলাইহি) নাসিখ ও মানসুখ (রহিতকারী ও রহিত) হাদিসের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত কঠিন দৃষ্টিভঙ্গি অবলম্বন করেন এবং তার বর্ণনা মর্মার্থ মানদণ্ডে রাসুল সা. ও সাহাবায়ে কেরাম রা. এর যে সকল হাদিস পাওয়া যেতো সেগুলোর উপর তিনি আমল করতেন।
আর তিনি কুফার ওলামায়ে কেরামের বর্ণিত হাদিস ও ফিকহ দুটো সম্বন্ধে অবগত ছিলেন। তিনি নিজ শহরে প্রচলিত ধর্মীয় পদ্ধতি অনুসরণ করতেন। আর কুফার আলেমদের কাছে রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সর্বশেষ এমন আমল, যার ওপর তিনি ইন্তেকাল করেছেন। সেগুলো তালাশ করে নিজ স্মৃতিতে সংরক্ষণ করতে রাখতেন।”
আর কুফাই ছিল তৎকালীন সময়ে ইলমের অন্যতম মারকাজ, যেখানে স্থায়ীভাবে বসবাস করতেন বড় বড় বিজ্ঞ সাহাবায়ে কেরাম। যাদের সংখ্যা সম্পর্কে আল্লামা ইজলী রহ. বলেন, প্রায় ১৫ শত‘র অধিক সাহাবায়ে কেরাম বসবাস করতেন।
যার ফলে কুফা নগরীতে ইলমে ফিকহের সাথে সাথে ইলমে হাদিসের এত বেশী খেদমত হয় যে, ইমাম বুখারী (রহ.) বলেন: আমার জানা নেই, আমি ইলমে হাদিসের তালাশে কুফা নগরীতে কতবার যে সফর করেছি।
৩. আল্লামা ইবনে দাউদ খারিরী (রহ.) বলেন:
মুসলমানদের উচিত ইমাম আবু হানিফা (রহমতুল্লাহি আলাইহি)-এর মাকাম বুলন্দির জন্য মহান প্রভুর দরবারে দোয়া করা। কারণ তিনি মুসলমানদের জন্য হাদিস ও ফিকহকে সুসংরক্ষিত করে দিয়েছেন।
৪. ইমাম সুফিয়ান সাওরী রহ. এর বক্তব্য হল,
ইমাম আবু হানিফা রহ. সহীহ হাদিস তালাশ করতেন। নাসিখ ও মানসুখ হাদিস সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান রাখতেন। বিশ্বস্ত রাবীগণের সূত্রে তিনি হাদিস বর্ণনা করতেন।
হাদিস বর্ণনা ক্ষেত্রে আবু হানিফা (রহ.)-এর মূলনীতি:
ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বর্ণনার এমন মূলনীতি গ্রহণ করেছেন, যে মূলনীতি হাদিস শাস্ত্রে তাঁর উচ্চ মাকাম সকলের মাঝে স্পষ্ট করে তুলেছে।
তিনি বলেছেন:
কোনো ব্যক্তির জন্য কেবল ঐ সকল হাদিস বর্ণনা করা সঙ্গত, শ্রবণের সময় থেকে যা মুখস্থ রেখেছে।
* হযরত ইয়াহইয়া ইবনে মুঈন রহ. বলেন:
ইমাম আবু হানিফা রহ. (হাদিস শাস্ত্রে) সিকাহ, বিশ্বস্ত ছিলেন। তিনি কেবল মুখস্থ হাদিসই বর্ণনা করতেন।