মক্কার কুরাইশদের মধ্য থেকে যারা রাসুল (সা.) কে সর্বদা কষ্ট দিত; আবু জাহেল তাদের মধ্যে অন্যতম। রাসুল (সা.) মক্কায় দীর্ঘ ১৩ বছর আল্লাহর প্রেরিত দ্বীনের দাওয়াত প্রচার করেন। এতে তিনি বহু কষ্ট, ত্যাগ-তিতিক্ষার শিকার হয়েছেন।
কখনো কাফেরদের কর্তৃক অবরুদ্ধ অবস্থায় শীআবে আবু তালেবে দিন কাল অতিক্রম করেছেন। আবার কখনো কাফেরদের দ্বারা চরণ লাঞ্ছনার স্বীকার হয়েছেন।
কখন তিনি তায়েফে থেকে রক্তাক্ত দেহ নিয়ে ফিরেছেন। আবার কখনও হয়েছেন কুফফারদের হত্যার ষড়যন্ত্রের স্বীকার।
আবু জাহেল হত্যার বিবরণ
আবু জাহল ইসলামের সূর্যকে চিরতরে নিভিয়ে দেওয়ার জন্য এক হাজার সৈন্য নিয়ে মক্কা থেকে মদিনার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। পথিমধ্যে বদর নামক স্থানে মুসলমানদের সাথে কুরাইশদের যুদ্ধ সংঘটিত হয় এবং এ যুদ্ধে আবু জাহল সহ মক্কার কাফেরদের বৃহৎ একটি নিহত হয়।
যার বিবরণ হল এই যে, হযরত মুয়াজ এবং মুআওয়াজ (রা.) পূর্ব থেকে শপথ নিয়েছিলেন যে, যদি তারা আবু জাহেলকে দেখতে পায়; তাহলে তারা তাকে হত্যা করবে।
অবশেষে বদর যুদ্ধে তারা কাঙ্ক্ষিত সুযোগটি তারা পেয়ে যায়। উভয়ের আবু জাহলের উপর এক যুগে আক্রমণ করে বসে। তাদের আক্রমণের ফলে আবু জাহেল মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।
রাসুল (সা.) আবু জাহেল কোন অবস্থায় রয়েছে? তা জানতে চাইলে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) আবু জাহেলের সন্ধানে বেরিয়ে আসেন।
তিনি আবু জাহেলকে তার অন্তিম মুহূর্তে পান। অতঃপর তরবারির আঘাতে আবু জাহলের মাথা ছিন্ন করে ফেলেন। ফলে আবু জাহেলের প্রাণ বাইরে বের হয়ে যায়।
উক্ত ঘটনাটি হাদিসে এভাবে বর্ণিত হয়েছে যে,
হযরত আব্দুর রহমান ইবনে আওফ (রা.) হইতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বদর যুদ্ধের দিন সারিতে (ব্যূহে) দাঁড়াইয়া আমার ডানে ও বামে তাকালাম। দেখলাম, আমি দুইজন অল্প বয়স্ক তরুণ আনসারীর মাঝে দাঁড়িয়ে আছি। তখন আমি মনে মনে এই আকাঙ্ক্ষা পোষণ করলাম, কতই না উত্তম হত যদি আমি এই দুইজন তরুণ অপেক্ষা বীর যোদ্ধার মাঝখানে দাঁড়াইতাম।
ইত্যবসরে তাদের একজন আমাকে টোকা দিয়া বলল,
চাচাজান! আপনি কি আবু জাহেলকে চিনেন?
আমি বললাম, হাঁ, চিনি। তবে হে বৎস! তাহাকে তোমার কি প্রয়োজন?
সে বলল, আমাকে সংবাদ দেওয়া হয়েছে যে, সে নাকি রাসুলুল্লাহ (ﷺ)কে গালি দেয়। ঐ সত্তার শপথ! যার অধিকারে আমার প্রাণ; যদি আমি তাহাকে দেখতে পাই, তাহলে আমাদের (অর্থাৎ, আমার ও আবু জাহেলের) মধ্যে যার মৃত্যু আগে নির্ধারিত সে মৃত্যুবরণ না করা পর্যন্ত তার ও আমার দেহ পরস্পর বিচ্ছিন্ন হবে না।
আবদুর রহমান বলেন, তার কথা শুনিয়া আমি বিস্মিত হইলাম। তিনি আরও বলেন, ইত্যবসরে অপর তরুণটিও আমাকে টোকা দিয়ে একই ধরনের কথা বলল ।
আমাদের কথাবার্তা শেষ না হতেই দেখতে পেলাম, আবু জাহেল লোকদের মাঝে ঘোরাফেরা করিতেছে। তখন আমি তরুণদ্বয়কে বলিলাম, তোমরা উভয়ে যার সম্পর্কে আমার কাছে জানতে চেয়েছো, ঐ সেই ব্যক্তি।
আবদুর রহমান বলেন, আমার কথা শোনামাত্রই তারা উভয়েই তরবারি হাতে দ্রুতবেগে গিয়ে তাকে আক্রমণ করিল, এমন কি তাকে হত্যা করে ফেলল। অতঃপর তারা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)–এর কাছে ফিরিয়া এসে তাঁকে ঘটনাটি অবহিত করল।
তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, তোমাদের মধ্যে কে তাকে হত্যা করেছে? তারা উভয়েই বলল, “আমিই তাহাকে হত্যা করিয়াছি।”
এইবার তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, আচ্ছা, তোমরা কি নিজ নিজ তরবারি খানা মুছে ফেলেছো? তাহারা বলল, না। অতঃপর রাসুলুল্লাহ (ﷺ) তাদের উভয়ের তলোয়ার দুইখানা দেখে বলিলেন: তোমরা উভয়েই তাকে হত্যা করিয়াছ।
এই বলে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) তার (আবু জাহেলের) পরিত্যক্ত বস্তুগুলি মুআয ইবনে আমর ইবনে জমুহ পাবে বলে রায় দিলেন। এই তরুণদ্বয় ছিল মুআয ইবনে আমর ইবনে জমুহ ও মুআয ইবনে আফরা।
আবু জাহেলের হত্যাকারী কে?
আবু জাহেলের হত্যাকারী হলেন মুয়াজ (রা.) এবং মুআওয়াজ (রা.) । পরবর্তীতে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. আবু জাহেলের মাথা ছিন্ন করে নিয়ে আসেন।