রাসুল (সা.) আইয়ামে বীজের রোজা রেখেছেন এবং সাহাবীদেরকে এর প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন। কেননা আইয়ামে বীজের রোজাতে অশেষ নিয়ামত এবং কল্যাণ নিহিত রয়েছে। উম্মতে মুহাম্মাদীকে তার প্রতিটি আমলের প্রতিদান স্বরূপ ১০গুণ সওয়াব প্রদান করা হয়। যদি আইয়ামে বীজের রোজা পালন করা হয়। তাহলে মোট (৩*১০) ৩০ টি রোজার সওয়াব হাসিল হয়। যে ব্যক্তি আইয়ামে বীজের রোজা নিয়মিত পালন করবে। তাকে সারা বছর রোজা রাখার সওয়ার দেওয়া হবে।
আইয়ামে বীজ কাকে বলে
আইয়ামে বীজ দুটি শব্দ সমন্বয়ে গঠিত। আইয়াম ’الأيام’ শব্দটি ’يوم’ এর বহুবচন। অর্থ: দিবস সমূহ বা দিন সমূহ। বীজ শব্দের অর্থ শুভ্র, সাদা। প্রতি হিজরি / চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪, ১৫ এই তিন দিন রোজা রাখাকে আইয়ামে বীজের রোজা বলা হয়। যেহেতু চন্দ্র মাসের এই দিনগুলোতে চাঁদ পূর্ণতা লাভ করে এবং আকাশ স্বচ্ছ থাকে। তাই এই দিনগুলোকে আইয়ামে বীজ বলা হয়। এই দিনগুলোকে যেহেতু রাসুল(সা. রোজা রাখতেন। তাই তাকে আইয়ামে বীজের রোজা নামে নামকরণ করা হয়।
আইয়ামে বীজের রোজা সংক্রান্ত কিছু হাদিস:
عن ابي هريرة ـ رضى الله عنه ـ قال اوصاني خليلي (ﷺ) بثلاث صيام ثلاثة ايام من كل شهر، وركعتى الضحى، وان اوتر قبل ان انام.
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন , আমার বন্ধু (রাসুল ﷺ) আমাকে তিনটি বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন। প্রতি মাসে তিন দিন করে সাওম পালন করা, দুই রাকআত সালাতুদ দুহা আদায় করা এবং ঘুমানোর পূর্বে বিতর সালাত আদায় করা।
[বুখারী, হাদিস: ১৯৮১]
রাসুল ﷺ বলেছেন: কেউ যদি প্রতি মাসে তিন দিন সিয়াম পালন করে। তবে তা যেন সারা বছরই সিয়াম পালন করা হলো। এর সমর্থনে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর কিতাবে আয়াত নাজিল করলেন:
من جاء بالحسنة فله عشر امثالها
অর্থ: কেউ যদি একটি নেক কাজ করে। তবে তার প্রতিদান হলো এর দশগুণ। সুতরাং এক দিন দশ দিনের সমান।
[ত্বহাবী শরীফ হাদীস নং: ৩৩৪৩]
عن ابي هريرة، قال عهد الى النبي صلى الله عليه وسلم ثلاثة ان لا انام الا على وتر وصوم ثلاثة ايام من كل شهر وان اصلي الضحى .
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) আমাকে তিনটি ওসিয়ত করেছেন। ১. বিতর (সালাত) আদায় না করে যেন নিদ্রা গমন না করি। ২. প্রতি মাসে যেন তিন দিন সিয়াম পালন করি আর। ৩. চাশতের সালাত আদায় করি।
[তিরমিযী, হাদিস ৭৬০]
عن موسى بن طلحة، قال سمعت ابا ذر، يقول قال رسول الله صلى الله عليه وسلم ” يا ابا ذر اذا صمت من الشهر ثلاثة ايام فصم ثلاث عشرة واربع عشرة وخمس عشرة
আবু যার (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ তাকে বলেছিলেন, হে আবু যার! প্রতি মাসে যদি তিন দিন সিয়াম পালন করতে চাও তবে তের, চৌদ্দ ও পনের তারিখের সিয়াম পালন করো।
[তিরমিযী, হাদিস ৭৫৯]
عن ابن ملحان القيسي، عن ابيه، قال كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يامرنا ان نصوم البيض ثلاث عشرة واربع عشرة وخمس عشرة . قال وقال “ هن كهيية الدهر ” .
ইবনে মিলহান আল-কায়সী তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ আমাদেরকে ইয়াওমিল বীজ অর্থাৎ চন্দ্র মাসের তেরো, চৌদ্দ ও পনের তারিখে রোযা রাখার নির্দেশ দিতেন। তিনি (ইবনে মিলহান) বলেন, তিনি বলেছেন: এ রোযাগুলোর মর্যাদা (ফজিলত) সারা বছর রোযা রাখার সমতুল্য।
[আবু দাউদ, হাদিস ২৪৪৯]
، عن ابي هريرة، ان رسول الله صلى الله عليه وسلم قال “ تعرض الاعمال يوم الاثنين والخميس فاحب ان يعرض عملي وانا صايم
আবু হুরায়রা রা. বলেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- সোমবার ও বৃহস্পতিবার আমলসমূহ পেশ করা হয়। তো আমার পছন্দ, আমার আমল যেন পেশ করা হয় আমি রোজাদার অবস্থায় ।
[জামে তিরমিযী, হাদিস ৭৪৭]
، عن ربيعة بن الغاز، انه سال عايشة عن صيام، رسول الله ـ (ﷺ) ـ فقالت كان يتحرى صيام الاثنين والخميس .
★ আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সোমবার ও বৃহস্পতিবারের রোযার প্রতি বেশি খেয়াল রাখতেন।
[ইবনে মাজাহ, ১৭৩৯]
আইয়ামে বীজের রোজা রাখার গুরুত্ব ও ফজিলত সম্পর্কে আজকের এই প্রবন্ধে আলোচনা করা হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে আইয়ামে বীজের রোজা রাখার তাওফিক দান করুন। আমিন।